অনলাইন ডেস্ক: আমি ডিবি পুলিশ অফিস থেকে বলছি। নারী সংক্রান্ত কেলেঙ্কারিতে আপনার ছেলে আমাদের কাছে আটক আছে, ছেলেকে বাঁচাতে চাইলে এই মুহূর্তে ৫০ হাজার টাকা বিকাশ করতে হবে। টাকা না দিলে ছেলেকে ক্রসফায়ার দেয়া হবে।’
রবিবার (২৯ অক্টোবর) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মশিউর রহমানের বাবা কুড়িগ্রামের রৌমারী মহিলা ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল কাদেরের মোবাইলে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ০১৭২৫৪৩৮৬০৬ নম্বর থেকে ফোন করে এসব কথা বলা হয়। এসময় ছেলের কান্নাকাটিও মোবাইলে শোনানো হয়।
ছেলেকে বাঁচাতে বাবা আব্দুল কাদের স্থানীয় বাজারে গিয়ে ৫টি বিকাশ নাম্বারে ভুয়া ডিবি পুলিশের কাছে তুলে দেন ৫০ হাজার টাকা। টাকা দেয়ার পর পরই ডিবির নাম্বারটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে নিশ্চিত হন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় মো. আব্দুল কাদের রৌমারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
শিক্ষার্থীর বাবা আব্দুল কাদের বলেন, ‘‘রবিবার (২৯ অক্টোবর) বিকালে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আমার ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন আসে। বলা হয় আপনার ছেলে আমাদের হাতে আটক রয়েছে। যদি ছেলেকে বাঁচাতে চান তাহলে ৫০ হাজার টাকা বিকাশ করেন। আমি জিজ্ঞেস করি আমার ছেলে কোথায়? তারা ছেলের কণ্ঠস্বর নকল করে কান্না জড়িত কণ্ঠে আমাকে বলে, ‘আব্বা আমি খুব বিপদে আছি তাড়াতাড়ি ৫০ হাজার টাকা বিকাশ কর।’ এটা বলার পরপরই মোবাইলের লাইন কেটে দেওয়া হয়।’’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পরপরই ছেলের নম্বরে ফোন করলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়ায় আমি আরও দুশ্চিতায় পড়ে যাই। ছেলেকে বাঁচাতে দ্রুত স্থানীয় বড়াইকান্দি বাজারে গিয়ে বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে ০১৭৮৮-২৬৫৭৯৬ নম্বরে ১০ হাজার, ০১৯০৮-৪৫৮১১৬ নম্বরে ১০ হাজার ৪০০, ০১৬৭০-৪৬১৬১৬ নম্বরে ১৫ হাজার, ০১৯১৫-৫৪৫৬৫৩ নম্বরে ৮ হাজার ৬০০ এবং ০১৭৯১-৩৮৭৩৯৮ নম্বরে ৭ হাজার টাকা খরচসহ মোট ৫১ হাজার টাকা পাঠাই। টাকা পাঠানোর পরে আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদের মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাই। সন্ধ্যার পর ও (মশিউর) আমাকে কল করে। বিষয়টি ওকে জানালে সে বলে এমন কিছু তার সাথে হয়নি। তখনই বুঝেছি আমাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।’
বড়াইকান্দি বাজারের বিকাশ এজেন্টের প্রোপাইটার জানান, ‘বিকেল ৫টার দিকে আমার দোকানে এসে বলে আমার খুব বিপদ এখনই ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে হবে। আমি জিজ্ঞেস করি কি বিপদ? সে আমার কাছে কোনও কিছু না বলে আগে বিকাশ করতে বলেন। এরপর আমার এজেন্ট নম্বরে ২০ হাজার টাকা ছিল সেটা পাঠিয়ে দিই। আর বাকি ৩০ হাজার অন্য এজেন্টের কাছ থেকে পাঠায়। টাকাগুলো পাঠানোর পরে দোকানের বাইরে নিয়ে তিনি আমাকে ঘটনাটি বলেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মশিউর রমহান জানান, ‘আমি বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে অবস্থান করছিলাম। লাইব্রেরিতে অবস্থানকালে মোবাইল নেটওয়ার্কের একটু সমস্যা হয়। মাগরিবের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে আব্বার ফোন আসে। আমি নামাজ শেষ করে তারপর আব্বাকে ফোন দিই। আব্বা আমাকে বলেন, আমি ঠিক আছি কি-না? আমি বলি হ্যা আমি ঠিক আছি কেন কি হয়েছে? এরপর আব্বার সাথে কথা বলে বিস্তারিত ঘটনা শুনে আমিও হতভম্ব হয়ে গেছি।’
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, ‘আমার কাছে অভিযোগ দিলে আমরা সে ব্যাপারে কাজ করব। এরকম ঘটনা প্রতিনিয়িতই আমাদের কাছে আসে। মানুষকে আরও সচেতন থাকতে হবে। একজন ফোন করে টাকার কথা বললেই তাকে টাকা পাঠানো যাবে না। আগে খোঁজ খবর নিতে হবে।’