দেশের খবর: কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় মঙ্গলবার দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের তৃতীয় বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা জানান।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গতবছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও এই প্রথম প্রত্যাবাসন শুরুর একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করা হল। বৈঠকে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক। আর মিয়ানমারের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শহীদুল হক বলেন, “আমরা আশা করছি, নভেম্বরের মাঝামাঝি আমরা প্রত্যাবাসন শুরু করতে পারব। এটা হবে প্রথম গ্রুপ।”
তিনি জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপে মিয়ানমারের দুই সদস্য বুধবার কক্সবাজারে যাবেন। তারা রোহিঙ্গাদের বোঝাবেন যাতে তারা রাখাইনে ফিরে যায়ে। রাখাইনে তাদের নিরাপত্তা করার যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে কথাও বলবেন। গতবছর অগাস্টে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তাদের কক্সবাজারের কয়েকটি কেন্দ্রে আশ্রয় দিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে বলেন, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে আন্তরিক ও খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। কিছু বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তও হয়েছে। তিনি বলেন, উত্তর রাখাইন রাজ্যে কোনো ধরনের বৈষম্য যেন না হয়, সেজন্য স্থানীয় কর্মকর্তা আর পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। “যারা ফিরে যাবেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ আমরা সেখানে নিয়েছি।”
শহীদুল হক বলেন, প্রত্যাবাসন একটি ‘জটিল প্রক্রিয়া’। তবে দুই দেশের ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা’ থাকলে এ সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশ সেভাবেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যায়ে মিন্ট থোয়ে বলেন, “আমরাও রাজনৈতিক সদিচ্ছা, নমনীয়তা ও সমঝোতার মনোভাব দেখিয়েছি বৈঠকে, যাতে সম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়।”
চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় গত ফেব্রুয়ারিতে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রথম তালিকায় ১৬৭৩টি পরিবারের ৮ হাজার ২ জন রোহিঙ্গার নাম পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই তালিকা যাচাই করে মিয়ানমার তাদের স্বীকার করে নিয়েছে বলে গত ১৫ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। চুক্তি করার সময় দুই বছরের মধ্যে ৭ লাখের মত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্য ঠিক করা হলেও মাত্র আট হাজারের প্রথম তালিকা যাচাই করতেই মিয়ানমার সরকার সময় নিয়েছে প্রায় নয় মাস।
গত কয়েক দশকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিলিয়ে মিয়ানমারের প্রায় ১১ লাখ নাগরিক বাংলাদেশে থাকলেও চুক্তি অনুযায়ী আপাতত শুধু নতুন আসা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে।