দেশের খবর: সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনুষ্ঠেয় সংলাপের দিকে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি দেশের সবার নজর আটকে আছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও আওয়ামী লীগের মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সরকারি দলের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে ড. কামাল হোসেন সংলাপের নেতৃত্ব দেবেন। এতে ঐক্যফ্রন্টের আরো ১৫ সদস্যের নাম চূড়ান্ত করা হলেও আওয়ামী লীগের পক্ষে কারা থাকছেন তা এখনো জানা যায়নি। তবে বিএনপি মহাসচিবসহ পাঁচ সদস্য উপস্থিত থাকছেন। সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের আলোচনায় তাদের দেওয়া সাত দফাই প্রাধান্য পাবে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে ড. কামাল হোসেনকে দেওয়া চিঠিতে সংবিধানের মধ্য থেকে আলোচনার কথা বলেছেন।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর বাড়ানোর ফলে এই সংলাপের সফলতা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে সংশয় দেখা দেয়। বিশেষ করে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে মাঠপর্যায় পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে এ বিষয়ে নেতিবাচক আলোচনা চলে। তাঁদের অনেকেই মনে করেন, হঠাৎ করে সংলাপের আহ্বান স্রেফ বিএনপিকে ফাঁদে ফেলার জন্য।
পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখানোর জন্যও এটি করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর পর তাত্ক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এতে সংলাপের ফল নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগ কতটুকু আন্তরিক তাও জনগণ বুঝতে পারছে।
বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতারাও মনে করেন, সোমবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাজা এবং পরদিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। তাঁদের মতে, বিএনপিকে চাপে রেখে সংলাপ করা শুধু আইওয়াশ। জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে গতকাল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত নেতারা বলেছেন, এ বিষয়ে সরকারের কূটকৌশল তথা তৎপরতার দিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু তার পরও সংলাপে যাওয়ার পক্ষে সবাই মত দেন।
জানা যায়, ঐক্যফ্রন্টের একটি দলের পক্ষ থেকে সংলাপে যাওয়ার আগে খোলা মনে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আরেকটি চিঠি দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু তাতে সংলাপের উদ্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পাশাপাশি জনমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে—এমন বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত সংলাপে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নেতারা মনে করেন, সংলাপ ভণ্ডুল হয় এমন দায় বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্টের নেওয়া ঠিক হবে না। কারণ বিদেশিদের চোখে দায় তাতে ঐক্যফ্রন্টের ওপর পড়বে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের আলোচনার ভিত্তি হবে সাত দফা। মওদুদ আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাত দফা ও ১১ লক্ষ্যের কথা ড. কামাল হোসেনের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী রাজি হয়েছেন এটি খুব ভালো ইঙ্গিত।’ খালেদা জিয়ার নতুন করে সাজা ও সাজা বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘আপাতত আমাদের সহ্য করে যেতে হবে। আমাদের কারণে সংলাপ ভণ্ডুল হোক সে রকম ফাঁদে আমরা পড়তে চাই না।’ মওদুদ বলেন, তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী একটু নমনীয় হলে দেশে সুষ্ঠু একটি নির্বাচন সম্ভব।
গত ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে সাত দফা ও ১১ লক্ষ্যের কথা বলেন ড. কামাল হোসেন। আর ড. কামাল হোসেনকে দেওয়া চিঠিতে ‘সংবিধান সম্মত’ আলোচনার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়েও ফ্রন্টের দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে।
যুক্তফ্রন্টের সাতটি দাবি হচ্ছে—সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন, খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করা, যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালো আইন বাতিল, নির্বাচনের ১০ দিন আগে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন, দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেওয়া।
ঐক্যফ্রন্টের ১৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের ১৬ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন গণফোরামের সভাপতি ও ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। দলে বিএনপির পাঁচজন থাকছেন। তাঁরা হলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও মির্জা আব্বাস।
থাকবেন গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সহসভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও এস এম আকরাম, ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মুহাম্মদ মনসুর ও আ ব ম মোস্তফা আমিন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে অনুষ্ঠিত ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে নামগুলো ঠিক করা হয়। বৈঠক শেষে আ স ম আবদুর রব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণকে স্বাগত জানাই। আমরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে যাব।’ ড. কামাল হোসেন ও ১৫ জন গণভবনে যাবেন বলে জানান তিনি। রব বলেন, ‘কামাল হোসেন আমাদের নেতা, তিনি ১৫ জনের বাইরে। জাতি আশা করে, এই সংলাপের মাধ্যমে আগামী দিনে একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। কোনো সংলাপ ব্যর্থ হয়নি। এই সংলাপে সাত দফাসহ সব কিছু নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা মনে করি, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, কথা বলব কি বলব না। আজকে প্রধানমন্ত্রীর এই সংলাপের মধ্য দিয়ে দরজা খোলা হলো, আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, হবে এবং চলবে।’ বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের তালিকা রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় মোস্তফা মহসিন মন্টুকে।
বিএনপি মহাসচিব এই প্রতিনিধিদলে থাকবেন কি না, প্রশ্ন করা হলে রব বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব একশবার যাবেন। তাঁকে বাদ দিয়ে তো সংলাপ হবে না।’ তিনি জানান, ঐক্যফ্রন্টের একজন মুখপাত্র নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁর নাম আ স ম আবদুর রব। এর বাইরে ফ্রন্টের কেউ কোনো কথা বললে তা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বক্তব্য হবে না।
জিয়া এতিমখানা মামলায় উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর প্রসঙ্গে রব বলেন, ‘এই মামলাটা আমরা মনে করি একটি প্রতিহিংসামূলক মামলা। তিন-তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দুই-তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে পারেন, এটা মানুষ বিশ্বাস করে না, আমি কী করে বিশ্বাস করব।’ ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে বিএনপির মির্জা ফখরুল, খন্দকার মোশাররফ, মওদুদ আহমদ, জেএসডির আ স ম রব, তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মান্না, জাহেদ উর রহমান, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর, মোস্তফা আমিন, নুরুল হুদা মিলু চৌধুরী এবং গণস্বাস্থ্যের জাফরুল্লাহ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
ঐক্যফ্রন্টকে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ঐক্যফ্রন্টের চিঠির জবাব দিয়েছেন। ড. কামাল হোসেনকে লেখা চিঠিতে তিনি আগামীকাল ১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে সংলাপের জন্য ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেখেন, ‘জনাব সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। আপনার ২৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখের পত্রের জন্য ধন্যবাদ। অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য আমার দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত। তাই, আলোচনার জন্য আপনি যে সময় চেয়েছেন, সে পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ০১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখ সন্ধ্যা ০৭-০০টায় আপনাদের আমি গণভবনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
গতকাল সকাল পৌনে ৮টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর এই দাওয়াতের চিঠি নিয়ে কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় যান আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ। এ সময় সেখানে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু উপস্থিত ছিলেন। পরে তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। গোলাপ বলেন, ‘২৮ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেনের সই করা একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হয়। তা আমি অফিশিয়ালি গ্রহণ করি। সেই চিঠির জন্য প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একটি অফিশিয়াল বক্তব্য আমার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের কাছে পাঠিয়েছেন।’ মন্টু বলেন, ‘আমরা ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। তারপর তাঁরা জানিয়ে দিয়েছিলেন খুব তাড়াতাড়ি বসবেন। আমরা কয়জন যাচ্ছি, কে কে যাচ্ছি সেই লিস্ট তাঁরা জানতে চেয়েছেন। আমরা আজকেই (গতকাল) লিস্টটা দিয়ে দেব। তাঁরা আমাদের ১ নভেম্বর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।’ সংলাপ চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের কাছে গত ২৮ অক্টোবর দুটি চিঠি দেয় ঐক্যফ্রন্ট।
আওয়ামী লীগের টিমে সরকারসংশ্লিষ্টরা প্রাধান্য পাবেন সরকার সংশ্লিষ্টরাই ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগের দলে প্রাধান্য পাবেন। মন্ত্রিসভার সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে এই দলের সদস্যদের বাছাই করা হবে। দলের সভাপতিমণ্ডলী ও উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন এমন নেতারা এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। সরকার ও আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্র কালের কণ্ঠকে এই তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সংলাপে তাঁর ভূমিকা কী থাকবে সে নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নয়, সরকারের সঙ্গেই সংলাপ করতে চেয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের চিঠির জবাব দেওয়া যুক্তিযুক্ত বলে নেতাদের জানান। সে অনুযায়ী সোমবার রাতে ওই চিঠি তৈরি করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্যাডে শেখ হাসিনা এই চিঠি দিয়েছেন।
আলোচনা হবে খোলা মনে : ওবায়দুল কাদের সংলাপে খোলা মনে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নেতাদের সঙ্গে একসঙ্গে আলোচনা করে নেত্রীর সঙ্গে একমত হয়েছি। আমরা কালক্ষেপণ করিনি। সিডিউলের আগে যাতে সংলাপ হয়, এ জন্য ড. কামাল হোসেনকে চিঠি দিয়েছি। আমরা গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে এই সংলাপে সম্মত হয়েছি। এই আলোচনা হবে খোলা মনে।’
গতকাল যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি আরো বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। তাঁর নীতি-নৈতিকতা আছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে চাচা বলে সম্বোধন করেন। যদিও তিনি ঐক্যফ্রন্টের বা ওই জোটের শীর্ষ নেতা কি না আমরা নিশ্চিত নই। তিনি হয়তো শীর্ষ নেতা নন, এই জোটের নেতৃত্ব কী লন্ডন থেকে দেওয়া হচ্ছে নাকি বাংলাদেশ থেকে দেওয়া হচ্ছে, তা সংলাপে বসার পর বোঝা যাবে।’ সংলাপ নিয়ে কোনো সংশয় না রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা সংশয়বাদী, ১ তারিখের পর সেই সংশয় কেটে যাবে।’
সংলাপের কোন কোন ইস্যুতে আলোচনা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনারা (ঐক্যফ্রন্ট) চিঠির সঙ্গে উনাদের সাত দফা দাবি এবং এবং ১১টি লক্ষ্যের কপি সংযুক্ত করে দিয়েছেন। এসব নিয়েই আলোচনা হবে। তবে সাত দফার মধ্যে কয়েকটি দফা আছে যা সংবিধান সম্পর্কিত। দু-একটি আছে আইন আদালতের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর দু-একটি আছে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কিত।’ সংলাপের আর কোন কোন বিষয়ে কথা হবে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের দলীয় প্রধানের সঙ্গে আলোচনা হবে, তাই এ ব্যাপারে আমি কোনো কথা বলব না।’
এই সংলাপকে ব্যতিক্রমধর্মী উল্লেখ করে সড়ক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অতীতে কখনোই শেখ হাসিনার সঙ্গে কারো সংলাপ হয়নি। কাজেই এখন যে সংলাপ হচ্ছে, এটি একেবারেই ‘অ্যাক্সেপশনাল।’ সংলাপের বিষয়ে সোমবার রাতে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মন্টুকে ফোন করেছিলেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জানতে চেয়েছিলাম, আপনারা কয়জন আসবেন। উনি জানালেন যে উনারা ১৫ জন আসবেন। তখন আমি বলেছি, ১৫ জন কেন, ২০ জন বা ২৫ জন নয় কেন? আপনারা ২০ জন, ২৫ জন যতজন খুশি আসতে পারেন, আমাদের কোনো আপত্তি নাই।’ সংলাপে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কতজন থাকবে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘আগে উনারা তালিকা দিক। আমাদের কয়জন থাকবেন সেটা আমরা পরে ঠিক করব।’
তালিকায় জামায়াতের লোকজন থাকলে আপনাদের অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিবন্ধনের বাইরে কারও আসার সুযোগ নাই।’ মান্নার দল তো নিবন্ধিত নয়, তিনি যদি তালিকায় থাকেন তাহলে আপনারা কী করবেন জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটি ড. কামাল হোসেনের ওপর ছেড়ে দিন।’ জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট রয়েছে, এ ক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করছি না। আমরা সংলাপ করছি ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে। সংলাপে বিএনপির লোকজন থাকবে কি না আমরা এ ব্যাপারে কোনো শর্ত দেইনি।’ তবে সংলাপের মাধ্যমে সংকটের সমাধান হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সংলাপের উত্তাপে সংকটের বরফ গলবেই। তারা যেটিকে সংকট বলছে, আমরা সেটিকে সংকট মনে করি না। আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে অনেক সংকটই সমাধান হয়ে যায়।’
এদিকে সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধির সংখ্যা কমানোর বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে তিনি বলেন, ‘আমি এমন কিছু বলিনি। কিছু কিছু পত্রিকায় খাবারের মেন্যু নিয়েও সংবাদ ছাপানো হয়েছে, এগুলো অপ্রয়োজনীয়, অপ্রত্যাশিত। এগুলো ঠিক নয়।’ এই সংলাপের পর অন্য কোনো দলের সঙ্গে সংলাপে বসবেন কি না জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘সেই সুযোগ নাই। তফসিল ঘোষণার পর আর কারও সঙ্গে সংলাপের সুযোগ নাই।’
ঐক্যফ্রন্টের দাবির ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনের সময় উনারা বিদেশি পর্যবেক্ষক চেয়েছেন, এতে আমাদেরও আপত্তি নাই। তবে এটা ইসির বিষয়। আপনারা বিশ্বাস রাখুন, আস্থা রাখুন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাঁদের ডেকেছেন। ড. কামাল প্রস্তাব দিয়েছেন, সে কারণেই তাঁদের ডাকা হয়েছে।’