অনলাইন ডেস্ক: গুঁড়া দুধ, ফলের জুসসহ বিভিন্ন শিশুখাদ্য বিএসটিআইয়ের অনুমতি ছাড়াই বন্দর পেরিয়ে দেশে ঢুকছে এবং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) এসব পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিএসটিআইকে একাধিক চিঠি দিয়েও সাড়া পাচ্ছে না। বিদেশি বলে মানুষও চোখ বন্ধ করে এগুলো খাচ্ছে। তারা ভাবছে না সত্যিকার অর্থেই এই পণ্যগুলো স্বাস্থ্যের জন্য কতটা নিরাপদ বা এর লেবেলের গায়ে যে ধরনের উপাদান থাকার কথা ঘোষণা করা হচ্ছে সেগুলো থাকছে কি না; বা দেশের কোনো নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পণ্যটি পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে দেখেছে কি না। পণ্যের মধ্যে আছে বিভিন্ন প্রকারের গুঁড়া দুধ (ফুল ক্রিম, হাফ ক্রিম), হেলথ ফর্মুলা, ইনফ্যান্ট ফর্মুলা, ফুড সাপ্লিমেন্ট, ফ্রুট জুস, ফ্রুট ড্রিংকস প্রভৃতি।
পরীক্ষা না করার প্রসঙ্গে বিএসটিআইয়ের (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট) ভাষ্য হলো এসব পণ্যের ক্ষেত্রে অনুমোদন নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা নেই; তুলনা করার মতো স্থানীয় মানও নেই। তারা এ কথা বললেও অনুমোদনহীনভাবে বাংলাদেশের বাজারে ব্যবসা পরিচালনা করার যুক্তি তুলে বিচারের মুখোমুখি আনা হয়েছে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বাংলাদেশ লিমিটেডের একটি পণ্য হরলিকসের বিরুদ্ধে। এ মামলায় আজ বুধবার আদালতে শুনানি রয়েছে।
গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বিএফএসএ চিঠির মাধ্যমে বিএসটিআইকে আমদানি করা এসব পণ্যের বিডিএস মান (জাতীয় মান) নির্ধারণের তাগিদ দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, গুঁড়া দুধ, ইনফ্যান্ট ফর্মুলা, ফ্রুট জুস, ফ্রুট ড্রিংকস, মেয়োনেজের জাতীয় মান থাকলেও বিদেশ থেকে আমদানি করা এ ধরনের খাদ্যপণ্যগুলোর লেবেলে বা গায়ে কোথাও বিএসটিআইয়ের সিল ব্যবহার করা হয় না। একই সঙ্গে বন্দরে খালাসের আগে বিএসটিআই কর্তৃক পরীক্ষাপূর্বক অনুমতিও নেওয়া হয় না, যা খাদ্য নিরাপত্তা নীতির পরিপন্থী। একটি চিঠিতে বলা হয়, এসব খাদ্যপণ্য ছাড়াও বিএসটিআই এখতিয়ারভুক্ত যত পণ্য রয়েছে সেগুলো বন্দরে খালাসের আগে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ অনুযায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, তারপরই খালাসের অনুমতি দিতে হবে। আরেকটি চিঠিতে এসব পণ্যের লেবেলে উল্লিখিত উপাদান ও পুষ্টিগুণ সঠিক এবং নিরাপদ কি না, তা নির্ধারণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) মাহবুব কবীর বলেন, ‘অমরা চিঠি দিয়েছি এক বছরের বেশি সময় হয়েছে। তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কাজ শুরু হয়েছে কি না আমাদের জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি।’ বাজার ঘুরে দেখা যায়, আমদানি করা বিভিন্ন হেলথ ফর্মুলা বা ফুড সাপ্লিমেন্টে বাজার সয়লাব। এর মধ্যে আছে হরলিকস, ওভালটিন, কমপ্লেইন, মালটোভা, বুস্টসহ আরো অনেক পণ্য; গুঁড়া দুধের মধ্যে আছে নিডো, বেবি ইনফ্যান্ট ফর্মুলা, যেমন—সেরেলাকসহ নানা প্রকার ফ্রুট ড্রিংকস, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মায়োনাইজ ও ড্রিংকস।
তবে পণ্যের মান প্রণয়নে কাজ করা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এত দ্রুত এগুলোর মান নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এর জন্য অনেক সময় এবং কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। বিএসটিআইয়ের পরিচালক (মান) মো. ইসহাক আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এসব পণ্যের স্ট্যান্ডার্ড না থাকায় আমরা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে পারি না। কারণ পরীক্ষা করতে হলে আগে আমাদের মান নির্ধারণ করতে হবে। মান না থাকলে আমরা কোনো উপাদান পরীক্ষা করতে পারব না। এ জন্য এসব পণ্য বাজারজাতে কম্পানিগুলো আমাদের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে আইনত বাধ্য নয়।’ মান নির্ধারণে বিএফএসএর তাগাদার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে অনেক সময়ের ব্যাপার। বিভিন্ন দেশের স্ট্যান্ডার্ডগুলোও দেখতে হবে। তারা কিভাবে করছে সেগুলোর খোঁজ নিতে হবে। তবে মান নির্ধারণ অসম্ভব নয়।’ বিএসটিআই এ জাতীয় যুক্তি দিলেও গ্ল্যাক্সোস্মিথাইন বাংলাদেশ লিমিটেডের একটি পণ্য হরলিকসের বিরুদ্ধে অনুমোদনহীনভাবে বাংলাদেশে ব্যবসা করা এবং লেবেলিং নীতিমালা ভঙ্গ করে মিথ্যা বিজ্ঞাপন প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে দায়ের করা এ মামলায় হরলিকসের পক্ষ থেকেও অনুমোদনের বিষয়ে একই ধরনের যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির নিয়োজিত আইনজীবী আদালতের কাছে বলেছেন, তাঁরা বিএসটিআইয়ে অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বিএসটিআইয়ের বাধ্যতামূলক পণ্য তালিকায় হরলিকস না থাকায় তারা একটি এনওসি প্রদান করে। এটি নিয়েই দেশের বাজারে হরলিকস ব্যবসা করে যাচ্ছে।
তবে এ পণ্যটির অনুমোদন দেওয়ার জন্য এখনো কেন বিএসটিআই ব্যবস্থা নিতে পারেনি, কেনই বা তাদেরকে এনওসি দিয়েছে এবং এর যৌক্তিকতা কী, বাধ্যতামূলক পণ্যের তালিকায় হরলিকস আছে কি না, না থাকলে এটি অন্তর্ভুক্ত না করার কারণ যথাযথ ব্যাখ্যাসহ লিখিতভাবে আদালতে প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ আদেশের প্রতিলিপি বিএসটিআই মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া হয়েছে। এ মামলার বিষয়ে আজ বুধবার আদালতে শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের খাদ্যপণ্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নির্ধারিত মান স্ট্যান্ডার্ড মেনেই রপ্তানি করতে হচ্ছে। সম্প্রতি ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়াম (বিআরসি) গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড সনদ অর্জন করেছে বাংলাদেশের প্রাণ অ্যাগ্রো ও নাটোর অ্যাগ্রো লিমিটেড।