তালা

জীবনের গল্প: যেভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন চলে তালার রেশমাদের

By Daily Satkhira

January 04, 2017

সেলিম হায়দার: রেশমা বেগম (১৫)। দুই বছরের ছেলে জিসানকে নিয়ে ইটের ভাটায় কাজ করছে সে। ছেলেকে কখনো কোলে, কখন কাঁধে নিয়ে চলছে তার কাজ। সাথে আছে ছোট ভাই মালেক (৬)। সেও ইট ভাটার শ্রমিক। ভাই-বোনে ১০ টাকা হাজার চুক্তিতে ইট উল্টানোর কাজ করছে ইটের ভাটায়। খেয়ে না খেয়ে দিন চলে রেশমা-মালেকের। যে বয়সে রেশমা ও মালেকের বিদ্যালয়ে থাকার কথা ছিল, তাদের কাঁধে এখন সংসারের বোঝা। যে হাতে রঙ-পেন্সিলে ছবি আঁকার কথা ছিল, সে হাতে উল্টাতে হচ্ছে ভাটার ইট। যে চোখ স্বপ্ন দেখতো এক সোনালী আগামীর, সে চোখ শুধুই রোজগারের পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে। শৈশব-কৈশোরের উল্লাস-উচ্ছাসের আনন্দ ওদের কাছে মলিন হয়ে গেছে। এ বয়সেই তাদের সংসারের ঘানি টানতে হচ্ছে। রেশমা ও মালেক সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জেঠুয়া গ্রামের কুদ্দুস শেখের মেয়ে ও ছেলে। হত দরিদ্র পরিবারে জম্ম তাদের। বাড়ির পাশর্^বর্তী গোনালী এলাকার আরবিএস ইটের ভাটায় ভাই-বোন মিলে এখন কাজ করছে। ঢাকার এক বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতো রেশমা। সেখানে কুমিল্লার ছেলে সবুজ ভুইয়ার সাথে পরিচয় হয় তার। পরিচয়ের পর গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। তিন বছর আগে সবুজের সাথে বিয়ে হয় রেশমার। তাদের সাংসারিক জীবনে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। নাম তার জিসান (২)। কিন্তু পাঁচ মাস আগে রেশমার স্বামী ফেলে রেখে চলে যায় তার নিজ বাড়ি কুমিল্লায়। এখন কাজ না করলে কে দিবে তার ছেলে জিসানের মুখে ভাত এমন প্রশ্ন রেশমার। সোমবার (২ জানুয়ারী) বিকালে তালা উপজেলার গোনালী আরবিএস ইটের ভাটায় গিয়ে দেখা হয় রেশমার সাথে। ছেলে জিসান কখনও কোলে, কখন কাঁধে। কখনও পিঠে। আর ইট উল্টানোর কাজ তার। এক হাজার ইট উল্টালে পাবে ১০ টাকা। ছোট ছেলেকে নিয়ে কি করবে রেশমা। ভেবেই পারছে না সে। ছোট ভাই মালেক আর রেশমা মিলে ইট উল্টানো কাজ করছে। সাথে সহযোগীতা করছে তার বৃদ্ধ মা আনোয়ারা বেগম। রেশমা জানান, কাজ না করলে কে ক্ষেতে দিবে তাদের। স্বামী চলে গেছে প্রায় পাঁচ মাস। দরিদ্র বাবার সংসারে কত সময় বসে খাওয়া যায়। বাধ্য হয়ে ইটের ভাটায় কাজ নিয়েছি। ছোট ভাইকেও সাথে নিয়ে এসেছি। ও আমার সাথে যা সহযোগিতা করে তা অনেক। ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করতে আজ কাজ বেছে নিয়েছি। কাজ করে ছেলেকে মানুষ করবো। ওর বাপ এখন আর কোন খোজ নেয় না। ছোট মালেকের কাছে প্রশ্ন তুমি স্কুলে যাও না ? উত্তরে মালেক বলে,‘আমি কাজ করছি দেখেন না। আপার সাথে কাজ করছি। কখন যাবো স্কুলে।’ রেশমার মা আনোয়ারা বেগম জানান, তার পাঁচ ছেলে মেয়ে। বড় মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। মেজো মেয়ে তার কাছে। ছোট মেয়ে ঢাকায় একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে। দুই ছেলে আর মেজো মেয়ে আমার কাছে থাকে। ওর বাবা এখন আর কাজ করতে পারে না। অনেক কষ্টের মধ্যে দিন পার করতে হয় তাদের। কখনও খাওয়া হয়, কখনও খাওয়া হয় না। শ্রমিক সর্দ্দার ছাত্তার হোসেন জানান, ১০ টাকা হাজারে তারা ইট উল্টানোর কাজ করছে। সপ্তাহে তারা ৬০০/৭০০ টাকা পাবে। ওরা নতুন কাজ শুরু করেছে। সপ্তাহে ওদের টাকা পরিশোধ করা হবে। আরবিএস ভাটার মালিক মুন্না হোসেন জানান, তারা শ্রমিক সর্দার সাত্তারের সাথে চুক্তি করে কাজে এসেছে। কম-পেল কী বেশি পেল সেটা আমাদের বিষয় না।