স্বাস্থ্য কণিকা: চিরতা একটি ভেষজ উদ্ভিদ, বাংলাদেশসহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর জন্মে। জেসিএনেসি বর্গের অন্তর্গত এই গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Swertia chirayita (Roxb. ex Fleming) H. Karst.।
চিরতা বর্ষজীবি উদ্ভিদ। গাছটির গড় উচ্চতা প্রায় দেড় মিটার। গাছের পাতা কম-বেশি ১০ সে.মি. দীর্ঘ। পাতার অগ্রভাগ সূঁচালো। ফুল বৃন্তহীন, জোড়ায় জোড়ায় বিপরীতমুখী হয়ে ফোটে। ফুল হালকা সবুজের সঙ্গে বেগুনী মেশানো প্রত্যেক পাপড়ি লতিতে এক জোড়া সবুজ গ্রন্থি থাকে। ফল ৬ মি.মি. কিম্বা তারও বেশি লম্বা এবং ডিম্বাকৃতি। এর ডাল শুকিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে, সারারাত ভিজিয়ে রাখা হয়। সেটি ওষুধি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এই চিরতার পানি খুব উপকারি। চোখের জন্য এছাড়াও জ্বরের ক্ষেত্রে উপকারি। এছাড়া আরো অনেক গুণ আছে চিরতার। আজ দেখবো চিরতার সেইসব গুণ।
১. চিরতা শরীরকে ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস আক্রান্ত হতে দেয় না আমরা জানি তেঁতো খাবার খেলে শরীর ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস থেকে কম আক্রান্ত হয়। তার ফলে শরীর কম অসুস্থ হয়। আর চিরতার স্বাদ অত্যন্ত তেঁতো। তাই চিরতা জল শরীরকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবার হাত থেকে বাঁচায়।
২. চিরতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারি চিরতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারি। কারণ চিরতা রক্তে চিনির পরিমাণ কমায়। ব্লাডে সুগার লেবেলকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও চিরতার পানি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম করে।
৩. চিরতা জ্বরের সময় কাজ দেয় জ্বরের ক্ষেত্রেও চিরতা উপকারি। জ্বরের ফলে শরীরে এনার্জি না লাগা, জ্বর ভাব এগুলি দূর করতে চিরতা উপকারি।
৪. চিরতা তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে নিজের তারুণ্য ধরে রাখার জন্য রোজ চিরতার জল খেতে পারেন। কারণ চিরতা রক্তকে পরিষ্কার করে। রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। যেটি তারুণ্য ধরে রাখার একটি শর্ত।
৫. চিরতা অ্যালার্জির সমস্যা দূর করে অনেকেরই মারাত্মক অ্যালার্জির সমস্যা থাকে। অ্যালার্জির জন্য শরীর ফুলে যায়, চোখ ফুলে যায় ও আরো সমস্যা হয়। চিরতা এক্ষেত্রে উপকারি। রোজ সকালে চিরতার পানি খান উপকার পাবেন। এছাড়াও ত্বকের অন্যান্য সমস্যাও নিয়ন্ত্রণ করে চিরতার পানি।
৬. চিরতার জল লিভারকে পরিষ্কার রাখে আজকাল অনেকেই লিভারের সমস্যায় ভোগেন এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে চিরতার পানি উপকারি। চিরতার পানি লিভারকে পরিষ্কার রাখে। এছাড়া লিভারের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ফ্যাটি লিভার ও আরো অন্যান্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে।
৭. চিরতা শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখে চিরতা পরিষ্কারক হিসাবেও কাজ করে। চিরতার পানি শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বার করে। শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখে। ফ্রেশ রাখে। যেটা শরীরকে সুস্থ রাখতে খুব জরুরি।
৮. চিরতা ত্বকের যত্ন নিতে সাহায্য করে ত্বকের জন্যও চিরতা খুব উপকারি। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন, চামড়ার ঘা, অন্যান্য ক্ষত সারাতে অনবদ্য। এছাড়াও ত্বকের অন্যান্য যেকোনো ইনফেকশন সারাতে এটি উপকারি। রোজ যদি চিরতার পানি খাওয়া যায় তাহলে স্কিন ইনফেকশনের হাত থেকে বাঁচা যায়। ত্বক ভালো থাকে। ত্বকের মরা কোশ দূর করে
৯. চিরতা বদহজম, অ্যাসিডিটি থেকে রক্ষা করে যদি হজমের সমস্যা থাকে তাহলেও খেতে পারেন চিরতার পানি। এটি বদহজম, অ্যাসিডিটি থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও যদি কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থাকে তাহলে চিরতার জল খুব উপকারি। এই সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য রোজ চিরতার পানি খেলে উপকার পাবেন।
১০. চিরতা অ্যানিমিয়ার সমস্যা দূর করে এছাড়াও অ্যানিমিয়ার সমস্যা কমাতেও চিরতার পানি খুব উপকারি। রক্ত কমে গেলে অ্যানিমিয়ার সমস্যা দেখা দেয়। চিরতার পানি রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে।
তবে চিরতা যেহেতু ব্লাড সুগার লেবেলকে কম করে, তাই এটি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত। আর চিরতা খুব তেঁতো তাই বমি হয়ে যাবার সম্ভবনা থাকে। এছাড়া চিরতার পানি খুবই উপকারি সেটা দেখলেন। তাই শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য এবার থেকে রোজ খান চিরতার পানি।