দেশের খবর: ‘অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে একাদশ জাতীয় নির্বাচন হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এজন্য অপমান সয়েও দেশের মানুষের কথা ভেবে সংলাপে বসেছি। তাদের বক্তব্য শুনেছি, সংবিধান মেনে যতোটুকু সম্ভব তাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা যখন সংলাপে বসছে তখনই আবার আন্দোলনেরও ডাক দিচ্ছে। এটা কিভাবে দেখবো? সেটা দেশবাসীর ওপর ছেড়ে দিলাম।’
শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে (কেআইবি) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত জেল হত্যা দিবসের স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে সংলাপে বসার জন্য আমি তাকে ডাকলাম। তাকে ফোন করলাম, তিনি ধরলেন না। ফিরতি ফোন করার মতো ভদ্রতাও দেখাননি। এরপর আমি আবারও ফোন করি, কী ধরনের অকথ্য গালিগালাজ করা হয়েছিলো আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে। এরপর, নির্বাচন হলো।’
‘২০১৫ সাল, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে যখন মারা গেল; আমি গেলাম সন্তানহারা একজন মাকে মায়ের জায়গা থেকে সান্তনা দিতে। এটা এমন এক সময় যখন খালেদা জিয়া থ্রেট করেছে আমাদের সরকারকে উৎখাত না করে ঘরে ফিরবে না। তারপরও আমি গেলাম, কারণ আমি একজন মা।’
‘অথচ সমবেদনা জানাতে যাওয়ার পরও মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল। ভেতরে গাড়ি ঢুকতে দেবে না। আমি বললাম আমি ছোট গেট দিয়ে যাবো। সে গেটটাও বন্ধ করে দেওয়া হলো। এরকম একটা অপমান, তারপরও আপনারা দেখেছেন; সবকিছু জেনেও, হয়ত ভুলতে পারবো না- সহ্য করে, চেয়েছি আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ হয়, কোন সন্দেহ না থাকে তাই সংলাপ হোক।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট থেকে সংলাপের জন্য চিঠি দেওয়া হলো, আমি স্বাগত জানালাম। ময়মনসিংহে মিটিং করে, তারপর এসেও আমি আলোচনা করেছি। ঐক্যফ্রন্ট-যুক্তফ্রন্ট দুইটা গ্রুপের সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়ে গেছে। এরপর আরো সকলের সঙ্গে আমরা আলোচনা করব। তারা আলাপ করতে চেয়েছে, সংলাপ করতে চেয়েছে; আমরা করেছি। তারা যে দাবি করেছে, আমাদের পক্ষে সংবিধান মেনে যতটুকু সম্ভব আমরা মেনে নেওয়ার কথা বলেছি।’
‘তারা রাজবন্দীদের মুক্তি চেয়েছে। আমি বলেছি তালিকা দেন, যদি খুনের মামলা না থাকে; আমরা সেটা দেখবো। ২০১৪ সালে খালেদা জিয়া যখন মানুষ পুড়িয়ে মারছিলেন তখনই তো তাকে গ্রেপ্তার করতে পারতাম, করিনি। আমরা কাউকে রাজবন্দী করিনি। বরং আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন, তাদের বানানো রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন, তাদের বানানো সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ, তাদেরই বানানো বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফখরুদ্দীন খালেদা জিয়াকে মামলা দিয়েছিলেন। বিএনপিই তো ক্ষমতায় এসে তাদের বসিয়েছিলো। আরেকজন মইনুল হোসেন। তাদের বর্তমান একজন উপদেষ্টা, তত্বাবধায়কের সময় সম্ভবত সে ছিল আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। সেই মামলা তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলো।’
এখানে সরকারের কিছু করার নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলা মামলা ১০ বছর ধরে চলেছে। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কোন দুরভিসন্ধি যদি থাকতো, মামলা শেষ হতে ১০ বছর লাগতো না। দশ বছর ধরে মামলা চলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে আমাদের তো কিছু করার নেই। বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ স্বাধীন, বিচার বিভাগ যে রায় দিয়েছে সেই রায় খালেদা জিয়া সাজা ভোগ করছে। খালেদা তারেক জিয়া শাস্তি হয়েছে, এরা দুর্নীতিতে জড়িত তা জাতির কাছে প্রমাণিত। তারপরও আমি তাদের বলেছি, আপনারা তালিকা দেন, দেখব। আমরা চাই সকলের সকলের অংশগ্রহণে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এদেশের মানুষকে যেন জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো ঘটনার সম্মুখীন হতে না হয়। দেশের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে। দেশের মানুষ তার ভোটটা দিতে পারে। সংলাপে এসে বেশিরভাগ সময়ই তারা কথা বলেছে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর্যন্ত তারা কথা বলেছেন, শেষে আমরা কতোটুকু করতে পারবো জানিয়ে দিয়েছি। এই সংলাপ যখন চলছে, তারা আন্দোলনের কর্মসূচি দিচ্ছে? এটাকে দেশ ও জাতি কিভাবে নেবে আমি জানি না।’