দেবহাটা

দেবহাটায় নির্বিচারে অতিথি পাখি নিধন: প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা

By Daily Satkhira

January 05, 2017

মীর খায়রুল আলম: দেবহাটা উপজেলায় ব্যাপক হারে শুরু হয়েছে শীতকালীন অতিথি পাখি শিকারের উৎসব। শীতের তীব্রতায় ও খাদ্যের অভাবে বিদেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি উপজেলার বিভিন্ন বিল এলাকায় আসতে শুরু করেছে। আর সেই সুযোগে ঘিরে পাখি শিকারীরা সরকারি আইন অমান্য করে প্রকাশ্যে পাখি শিকার করছে। বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৭৪ সালে বন্য প্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দ-ের বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল, এক লাখ টাকা দ- বা উভয় দ-ে দ-িত। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে অপরাধীর দুই বছরের জেল, দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই আইনের কোনো প্রয়োগ হচ্ছে না। পাখিরা শুধু প্রকৃতির শোভা বর্ধন করে না, বরং ভারসাম্যও রক্ষা করে। পোকামাকড় খেয়ে এরা কৃষকের উপকার করে। কিন্তু আইন থাকলেও পাখি নিধন বন্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। এ কারণে দেশ থেকে নানা প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হচ্ছে। এতে একদিকে জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ফসলি জমিতে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ বাড়ছে। এসব অতিথি পাখিগুলো ইয়ারগান, কাটিজ বন্দুক, ফাঁদ ও কিটনাশক দিয়ে নির্দিধায় শিকার চলছে যা প্রশাসন দেখেও যেনো দেখছে না। পাঁচপোতা গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, শীতের সময়ে হরেক রকমের পাখিদেখে সকলের মন ভরে যায়। বিরল প্রজাতির এসব পাখি গুলো শিকার করেছে একশ্রেণির কুচক্রিমহল। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন পেশাদার পাখিশিকারি জানান, বাজারে পাখির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই কোনোমতে ধরতে পারলেই বিক্রি করতে সমস্যা হয় না। প্রতি জোড়া সাদা বক ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, কাইয়ুম পাখি ৩৫০ থেকে ৪০০ ও বালিহাঁস ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। তাছাড়া মাংশ ভেদে পাখির দাম নির্ধারণ করা হয়। এদিকে, উপজেলার ঘলঘলিয়া, ভাতশালা, সখিপুর, সুবর্ণবাদ, চারকুনি, নোঁড়া, খলিসাখালি, চালতেতলাসহ বিভিন্ন বিল এলাকাগুলোতে প্রতিদিন এসব অতিথি পাখিগুলো শিকারীদের হাতে প্রাণ হারাচ্ছে। এসকল পাখির মধ্যে বকধনু, সাইবেরিয়ান হাঁস, মানিকজোড়, শারোস, আয়ালান্ডের পাখি, বিলপেঁচাসহ দেশি ও বিদেশী পাখি বিল এলাকায় খাদ্য সংগ্রহের জন্য বিচরণ করে থাকে। ঠিক তখনি পাখি শিকারীরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে পাখি শিকার করে। পরে অনেকেই বাজারে বিক্রি ও পরিবারের মাংস হিসাবে রান্না করে। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে এসব বিদেশী পাখি গোপনে বিক্রি হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে উপজেলার ঘলঘলিয়া, দেবহাটা, সখিপুর, পারুলিয়া এলাকায় পাখি শিকারের প্রকোপ বেশি। শিকারিরা প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে ইয়ারগান দিয়ে পাখি শিকার করছে এবং ক্রেতা পেলেই বিক্রয় করে দিচ্ছে। এসব পাখি শিকার রোধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করেন সচেতনমহল।