অনলাইন ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে। তিনি দীর্ঘ যাচাই-বাছাই করেই এ তালিকা প্রস্তুত করেছেন। তালিকায় স্থান পাননি বিতর্কিত কিছু এমপি ও মন্ত্রিসভার সদস্য। যুক্ত হয়েছেন দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত এবং ক্লিন ইমেজের কিছু নতুন মুখ। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরই ‘নৌকার যোগ্য মাঝি’দের তালিকা প্রকাশ করা হবে। জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিকদের ‘ছাড়’ দেওয়ার কারণে অতীতের মতো এবারও কপাল পুড়বে অনেকের। মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টি এবার আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসন চায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণভবন ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘জয়-পরাজয়’কে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল ‘বাঁচা-মরা’র লড়াই হিসেবে দেখছে। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ ও প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পথে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সে কারণে নির্বাচনী সফর অব্যাহত রেখেছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এর পাশাপাশি এবার দলীয় প্রার্থী বাছাইকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এজন্য ‘জনপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থী’ চূড়ান্ত করা হয়েছে। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব টিম, দলীয় জরিপ, কয়েকটি সরকারি সংস্থার একাধিক জরিপের ভিত্তিতে ৩০০ আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ নামের তালিকা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ল্যাপটপে। যারা প্রথমবারের মতো দলের টিকিট পাচ্ছেন তাদের ইতিমধ্যে দলীয় সভানেত্রী ডেকে নিয়ে মাঠে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোটের শরিক দলগুলোর প্রার্থী চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সংসদ নির্বাচনে সব দল মিলে অর্ধশতাধিক আসনে ছাড় দিলেও এবার প্রত্যেক দলের চাহিদাই বেশি। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১০০ প্রার্থীর তালিকা দিয়েছে জাতীয় পার্টি। ১৫টি আসন চায় ওয়ার্কার্স পার্টি। জাসদের চাহিদাও গতবারের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি-জেপি, তরিকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপসহ জোটের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যে তাদের চাহিদার কথা জানিয়েছে আওয়ামী লীগকে। তাদের চাহিদা ও মাঠের বাস্তবতা বিবেচনায় রেখেই এবার প্রার্থী দেওয়া হবে। তবে কত আসন দেওয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করছে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি। তবে জোট প্রার্থীদের ‘ধরে’ নিয়েই আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই জোট শরিকদের সঙ্গে বসছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করা না হলেও একটি ধারণা দেওয়া হবে জোট শরিকদের।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সর্বশেষ যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থী চূড়ান্ত করার আভাস দেন। গত সপ্তাহে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গেও কথা বলেন প্রার্থী নিয়ে। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সঙ্গে যুক্ত দুজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়েক দফা জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছেন দলীয় সভানেত্রী। আগামীতে কারা নৌকা প্রতীক পাবেন সে তালিকা তার টেবিলে। তফসিল ঘোষণা এবং দলের মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমার পরে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ‘এক বছর থেকে মনোনয়ন বাছাইয়ের কাজ চলছে। নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পর দলীয় প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করবেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।’
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু বলেন, ‘প্রার্থী চূড়ান্ত করার এখতিয়ার একমাত্র দলীয় সভানেত্রীর। সারা দেশের নেতা-কর্মী তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর আস্থাশীল। যেখানে যাকে দিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত হবে তিনি তাকেই প্রার্থী করবেন। আমার বিশ্বাস, তিনি সেভাবেই প্রার্থী চূড়ান্ত করছেন।’ গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিত হচ্ছেন আলোচিত-সমালোচিত বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি। চূড়ান্ত তালিকায় তাদের নাম রাখা হয়নি। এর মধ্যে যাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হলে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া অসাধ্য হবে এসব মন্ত্রী-এমপিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ প্রার্থী’ হিসেবে চিহ্নিত করেই বাদ দেওয়া হয়েছে। তাদের কারও বিরুদ্ধে এলাকায় জনপ্রিয়তা হ্রাস, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, অনেকের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, অনৈতিকভাবে বিত্তবৈভব গড়ার মতো অভিযোগ রয়েছে। কারও বিরুদ্ধে আনা হয়েছে সন্ত্রাস ও দলীয় কোন্দল সৃষ্টির অভিযোগ। দলীয় নেতা-কর্মীদের উপেক্ষা করে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি এমনকি বিএনপি-জামায়াত নেতাদের নিয়েও নিজস্ব বলয় সৃষ্টির অভিযোগ আছে কারও বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা এবং কয়েকটি বিশেষ টিম আসন ধরে ধরে প্রার্থীদের বায়োডাটা সংগ্রহ করেছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করেছেন দলীয় প্রধান। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য রশিদুল আলম বলেন, ‘দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থী চূড়ান্ত বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলো মেনেই প্রার্থী দেওয়া হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দলের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে সবার মতামত নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন সভানেত্রী।’
আসন ভাগাভাগির চাপ বাড়ছে : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। নির্বাচনী জোর প্রচার-প্রচারণায় না থাকলেও ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি চলছে দলটির। সে কারণে অতীতের মতো এবারও মহাজোটগতভাবেই নির্বাচনে যাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এজন্য বর্তমানে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে চায় দলটি। জাতীয় পার্টিও আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত। সে কারণে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১০০ প্রার্থীর নামের তালিকা জমা দিয়েছেন। জোটের অন্য শরিকরাও নিজেদের মতো করে প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করে জমা দিয়েছেন তাঁর হাতে। যারা দেননি, তারা কয়েকদিনের মধ্যেই জমা দেবেন বলে জানা গেছে। জোট শরিকরা চান নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই প্রার্থী নিশ্চিত করতে। এখনই আসন ভাগাভাগি করার তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডকে। জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, তরিকত ফেডারেশনের একাধিক নেতা বলেন, এখনই আসন ভাগাভাগি না করলে পরবর্তীতে সমস্যা সৃষ্টি হবে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করলে সবাই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। ফলে কোথাও কোথাও বিদ্রোহী প্রার্থী থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে এখনই প্রার্থী ঘোষণা করতে হবে।