জাতীয়

প্রতি ৬ মিনিটে এক প্রকল্প পাস

By daily satkhira

November 05, 2018

দেশের খবর: প্রতি ছয় মিনিটে একটি করে প্রকল্প পাস করল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। গতকাল রবিবার একনেক সভায় আগের সব রেকর্ড ভেঙে মোট ৩৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে শুরু হয়ে একনেক বৈঠক শেষ হয়েছে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। সে হিসাবে চার ঘণ্টায় বা ২৪০ মিনিটের মধ্যে প্রতি ছয় মিনিটে গড়ে একটি করে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে গত দশ বছরে গতকাল একনেক সভায় সবচেয়ে বেশি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হলো।

রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। একনেক বৈঠক শেষ করে রাত ৮টায় গণভবনে ১৪ দলের সঙ্গে সংলাপে বসেন প্রধানমন্ত্রী। ৮ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। তাই গতকালের একনেক বৈঠক বর্তমান সরকারের শেষ বৈঠক বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। গতকাল একনেক সভায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য গুলশানে আবাসিক ভবন, আগারগাঁওয়ে পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ সদস্যদের জন্য ৯টি আবাসিক টাওয়ার ভবন এবং বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রকার যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়সংক্রান্ত আলাদা চারটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এ ছাড়া র‌্যাবের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। নির্বাচনের আগে সবাইকে খুশি রাখার চেষ্টা করেছে সরকার। গতকালের একনেক সভায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, পৌরসভা উন্নয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন ও হাসপাতাল নির্মাণসংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, একনেক সভায় ৮৬ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৩৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া হবে ৬৬ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে আসবে ৩১৩ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া যাবে ১৯ হাজার ৯০৮ টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে অস্বাভাবিক প্রকল্প অনুমোদন শুরু হয় ১১ সেপ্টেম্বর একনেক বৈঠক থেকে। ওই বৈঠকে ১৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর প্রতিটি একনেক বৈঠকে গড়ে ২০টির ওপর প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ৩০ অক্টোবর একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয় ২৪টি প্রকল্প। অথচ গত ৯ বছরে একনেকে গড়ে আট থেকে দশটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হতো। নির্বাচনের আগে সেটি দ্বিগুণ এমনকি তিন গুণও হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবারও কাজ করতে হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের। প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অনেক প্রকল্প আছে, যেগুলো বাস্তবায়নে টাকা পাওয়া যাবে কি না তার নিশ্চয়তা নেই। কোনো কোনো প্রকল্প আছে, যেগুলোর কোনো সমীক্ষা করা হয়নি। এসব প্রকল্প নেওয়া কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়েও প্রশ্ন আছে কমিশনের। কোনো কোনো প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় দুটিই বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু ঠিক কী কারণে ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, তা যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করার সময়ও ছিল না কমিশনের কর্মকর্তাদের। এমনকি একজন সচিবকে দিনে পাঁচটি করে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠক করতে হয়েছে। গত দেড় মাসে ১৯০টি প্রকল্প পাস করা হয়েছে একনেক বৈঠকে; যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হবে দুই লাখ কোটি টাকার বেশি। এ বছর যেখানে এডিপির আকার এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা, সেখানে দেড় মাসে অনুমোদিত প্রকল্পের টাকা কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে শঙ্কা আছে কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্যে।

গতকাল একনেক সভায় পাস হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ রেলওয়ের জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়ন খরচ ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পাশে (কুড়িল থেকে বোয়ালিয়া পর্যন্ত) ১০০ ফুট পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ১০ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য টার্মিনাল নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা সম্প্রসারণ প্রকল্পও রয়েছে। আট হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণসংক্রান্ত প্রকল্পটির ব্যয় এক হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা সংশোধন করে অনুমোদন দেয় একনেক। কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণে খরচ হবে তিন হাজার ৭১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৯টি আবাসিক টাওয়ার ভবন নির্মাণে খরচ হবে ৯৭৬ কোটি টাকা।