স্বাস্থ্য কণিকা: বায়োলজিক হোমিওস্ট্যাসিস বা থার্মোরেগুলেশনের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় (৩৬.৫° থেকে ৩৭.৫°সেলসিয়াস বা ৯৮ থেকে ১০০° ফারেনহাইট) থাকে। হাইপোথার্মিয়া এমন একটি অবস্থা যখন ব্যক্তির কোর তাপমাত্রা স্বাভাবিকের (৩৫° সেলসিয়াস বা ৯৫° ফারেনহাইট) তুলনায় কমে যায় এবং বিপাকীয় কার্যাবলী স্বাভাবিক ভাবে সম্পন্ন হয় না। এ অবস্থায় ব্যাক্তির শরীরে কাঁপুনি শুরু হয়ে যায় আর সেই সাথে অনেকে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না। দিকভ্রান্ত হয়, হোঁচট খেতে থাকে এবং গতি ধীর হয়ে যায়।
আবার তীব্র শীতে অনেকের হাতের আঙুল নীল হয়ে যায়। শীত প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত কমে গিয়ে (হাইপোথার্মিয়া) মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই এই সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিৎ। আসুন আজ আমরা হাইপোথার্মিয়া সম্পর্কে জানুন। সচেতন হোন এবং এই শীতে সুস্থ থাকুন, নিরাপদ রাখুন আপনার সন্তানকেও।
সর্দি-জ্বরের সময় বিশ্রামে থাকতে পারলে ভালো। গরম চা বা কফি খাওয়া যেতে পারে। হালকা গরম পানিতে লবণ দিয়ে গার্গল করা যেতে পারে। মধু, আদা, তুলসী পাতার রস, লেবুর রস খাওয়া যায়।
এ ধরনের সমস্যায় সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়ে না। জ্বর ও ব্যথানাশক এবং অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ কারো কারো লাগতে পারে। তবে অবশ্যই ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হাঁপানি রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শমতো প্রতিরোধমূলক ইনহেলার বা অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। রোগীর থালা, গ্লাস, রুমাল, তোয়ালে প্রভৃতি আলাদা রাখতে হবে। যেখানে-সেখানে থুথু, কফ বা শ্লেষ্মা ফেলা যাবে না।
ছোটখাটো সর্দি-জ্বর, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকেই নিউমোনিয়া বা এ ধরনের বড় রোগ হতে পারে। তাই শিশু আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডায়রিয়া হলে স্যালাইন ও অন্য পুষ্টিকর স্বাভাবিক খাবার খাওয়ান। ছোট শিশুর ক্ষেত্রে মায়ের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করবেন না।
স্ক্যাবিস জাতীয় চর্মরোগ হলে পরিবারের সবার একসঙ্গে চিকিৎসার প্রয়োজন পড়তে পারে।
শিশুদের ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাই শিশুকে ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকে দূরে রাখুন। প্রয়োজনে মাথায় সব সময় সুতি কাপড়ের স্কার্ফ বা টুপি পরিয়ে রাখুন। শিশু যাতে নিজে নিজেই পরনের কাপড় খুলে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখুন। বেশি সময় খালি গায়ে রাখা হলে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।
এ কারণে প্রস্রাব-পায়খানা বা গোসল করানোর পর শিশুদের দ্রুত গরম কাপড় পরিয়ে দিন। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে শিশুকে আসতে না দেয়াই ভালো। শিশু আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ডায়রিয়া হলে স্যালাইন ও অন্যান্য পুষ্টিকর স্বাভাবিক খাবার খাওয়ান।
শীতকালে সচেতন থাকা আর কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে রোগবালাই থেকে অনেকাংশেই মুক্ত থাকা যায়। যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা বাতাস এড়িয়ে চলুন। ঠাণ্ডার সময় গরম কাপড় পরুন, এমনকি ঘরের ভেতরেও। পাকা মেঝের ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা পেতে ঘরে চটি বা স্পঞ্জ পায়ে দিন।
বাইরে গেলে অবশ্যই কানটুপি, মাফলার এবং জুতা-মোজা, হাত-মোজা ব্যবহার করুন। ঠাণ্ডা বাতাস সরাসরি যাতে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে। শুষ্ক বাতাস ত্বক থেকে পানি শুষে নেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক ও দুর্বল হয়ে ফেটে যায়। পরে খোশপাঁচড়াসহ নানা চর্মরোগ দেখা দেয়। প্রতিদিন সাবান মেখে গোসল করুন। গোসলের জন্য হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। সারা শরীরে ভালো কোনো তেল বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন গোসলের পর।
মুখে হালকা করে লাগাতে পারেন ভালো কোনো কোল্ড ক্রিম। ঠোঁট শুকিয়ে গেলে ভ্যাসলিন, লিপজেল প্রভৃতি ব্যবহার করুন। জিভ দিয়ে বারবার ঠোঁট ভেজাবেন না। ঠোঁট শুকিয়ে গেলে শুষ্ক আবরণ টেনে তুলবেন না।
সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে হাত ধুতে হবে বারবার। বিশেষ করে কাজ শেষে ঘরে ফেরার পর অবশ্যই ব্যাকটেরিয়ানাশক সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুতে হবে।
অনেককেই খাবার পর যতটা যত্ন নিয়ে হাত ধুতে দেখা যায়, খাবার আগে তারা ততটা সময় নিয়ে হাত পরিষ্কার করেন না। অথচ খাবার আগে ভালোভাবে হাত ধোয়াটা খুবই জরুরি।
ঘর পরিষ্কার রাখুন, যাতে ধুলোবালি না জমে। চাদর, বালিশের কভার নিয়মিত পরিষ্কার করে দীর্ঘক্ষণ রোদে শুকাতে দিন। কার্পেট ব্যবহার না করাই ভালো। বিশেষত শোবার ঘরে। কারণ কার্পেটের ফাঁকে জমে থাকা ধুলো শ্বাসনালীর রোগ বাড়ায়। একই কারণে রোমযুক্ত বালিশ, চাদর, লেপ-কাঁথা ব্যবহার করা উচিত নয়।
দরজার বা ফ্রিজের হাতল, ফ্যান-লাইটের সুইচ, টেলিফোন, টিভির রিমোট কন্ট্রোল সংক্রমণ ছড়ানোর অন্যতম জায়গা। জীবাণুনাশক দিয়ে নিয়মিত এসব স্থান পরিষ্কার রাখুন। রান্না করার সময় ধোঁয়া যাতে ওখান থেকে বেডরুম বা ড্রইংরুমে আসতে না পারে সে জন্য রান্নাঘরের জানালা খোলা রাখুন।