খেলার খবর: সিলেটের অভিষেক টেস্টে সফরকারী জিম্বাবুয়ের কাছে ১৫১ রানের বড় ব্যবধানে হারের লজ্জা পায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। ফলে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে টাইগাররা। সিরিজ হার এড়াতে হলে আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে জয় ছাড়া কোন বিকল্প পথ খোলা নেই বাংলাদেশের। তাই জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছে না বাংলাদেশ শিবির। জয় দিয়ে সিরিজ হার এড়াতেই মরিয়া টাইগাররা। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে নাস্তানাবুদ করে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে টাইগাররা। ওয়ানডে সিরিজ থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস, টেস্ট সিরিজে উপকৃত করবে বাংলাদেশকে এতে কোন সন্দেহ ছিলো না। তারওপর সিরিজের প্রথম ম্যাচটি ছিলো সিলেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ফলে সিরিজের প্রথম ম্যাচ দিয়ে টেস্ট অভিষেক ছিলো সিলেটের। তাই নতুন ভেন্যুকে জয় দিয়ে উদযাপন করতে চেয়েছিলো বাংলাদেশ। সিরিজ শুরুর আগে এমনটাই বলেছিলেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু ম্যাচ শুরুর পর থেকে সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দেয় জিম্বাবুয়ে। সিলেটের অভিষেক ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে দাপট দেখিয়েছে আইসিসি টেস্ট র্যাংকিং-এ মাত্র ২ রেটিং সংগ্রহে থাকা জিম্বাবুয়ে। ৬৭ রেটিং নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশ লড়াইয়ের ছিটেফটাও দেখাতে পারেনি। ম্যাচ শুরুর আগ থেকেই একাদশ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলাদেশ। এক পেসার নিয়ে খেলতে নামে তারা। তারপরও বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের ৬ উইকেট শিকারে প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে ২৮২ রানে আটকে দেয় বাংলাদেশ। জবাবে ১৮১ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ব্যর্থই ছিলেন স্বাগতিকদের স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা। লিটন দাস থেকে মুশফিকুর রহিম, কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। সাত নম্বরে নেমে অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংস খেলেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা আরিফুল হক। যা বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ যেখানে এক পেসার নিয়ে খেলেছে, সেখানে দুই পেসার নিয়ে খেলে ফায়দা লুটেছে সফরকারী দল। জিম্বাবুয়ের কাইল জার্ভিস ও তেন্ডাই চাতারা দু’জনে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। প্রথম ইনিংস থেকে ১৩৯ রানের লিডকে সাথে নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস ভালো করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। আবারো বল হাতে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের বেকাদায় ফেলেন বাংলাদেশের তাইজুল। এবার নেন ৫ উইকেট। এছাড়া মেহেদি হাসান মিরাজ ৩টি ও নাজমুল ইসলাম ২টি উইকেট নেন। এতে ১৮১ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। তবে বাংলাদেশের সামনে ৩২১ রানের বড় টার্গেট ছুড়ে দিতে পারে জিম্বাবুয়ে। ম্যাচের তৃতীয় দিনের শেষ দিকে জবাব দিতে নেমে বিনা উইকেটে ২৬ রান করেছিলো বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে দুই ওপেনারের ব্যাটিং নৈপুন্যে আশার বেলুন ফুলিয়েছিলেন বাংলাদেশের কোচ স্টিভ রোডস। তৃতীয় দিন শেষে বলেছিলেন, ‘শেষ বিকেলে দারুন ব্যাট করে লিটন ও ইমরুল। আশা করি, চতুর্থ দিনও আমরা ভালো ব্যাট করবো এবং পুরো তিন সেশনেই আধিপত্য বিস্তার করতে পারবো।’ কিন্তু চতুর্থ দিন চা-বিরতি পর্যন্তও টিকতে পারেনি বাংলাদেশ। চা-বিরতির আগেই ১৬৯ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। তাই র্যাংকিং-এর তলানিতে থাকা জিম্বাবুয়ের কাছে লজ্জাজনক হারের তিক্ত স্বাদ পেতে হয় বাংলাদেশকে। এই ইনিংসেও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা ছিলো চোখে পড়ার মত। কোন ব্যাটসম্যানই অর্ধশতকের দেখা পাননি। সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন ওপেনার ইমরুল কায়েস। অবশ্য চলমান বছরের জানুয়ারি থেকে টেস্ট ফরম্যাটে ব্যর্থতার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। চার টেস্টের আট ইনিংসের কোনটিতেই দলীয় স্কোর ২শ পার করতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। সবচেয়ে বেশি ১৬৯ ছিলো সিলেটের দ্বিতীয় ইনিংসটি। শ্রীলংকার বিপক্ষে দেশের মাটিতে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথমটিতে ৫১৩ ও ৫ উইকেটে ৩০৭ রান করে বাংলাদেশ। এরপরের সাত ইনিংসে বাংলাদেশের রান ছিলো- ১১০, ১২৩, ৪৩, ১৪৪, ১৪৯, ১৬৮ ও ১৪৩। ঢাকা টেস্টে সিরিজ হার এড়াতে ব্যাটসম্যানদের বড় ইনিংস খেলতেই হবে। যাতে প্রতিপক্ষকে রানের চাপায় পিষ্ট করা যায়। তবে বোলারদের পারফরমেন্স নিয়ে চিন্তার ভাজ কপালে নেই বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টে নিজেদের সেরাটাই দিয়েছে তাইজুল-মিরাজ-নাজমুলরা। বাংলাদেশের পক্ষে মূলত বোলাররাই দাপট দেখিয়েছে। এছাড়া জানুয়ারিতে শ্রীলংকার কাছে সিরিজের প্রথম টেস্ট ড্র’র পর থেকে চারটি টেস্টে বোলাররাই ছিলো উজ্জল। বিশেষভাবে তাইজুল। চারটি টেস্টে ২২ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এরমধ্যে দু’বার ইনিংসে পাঁচটি করে উইকেট শিকারের কীর্তিও গড়েছেন তাইজুল। এরপরই আছেন মিরাজ। সর্বোচ্চ শিকারে দ্বিতীয়স্থানে রয়েছেন তিনি। ৪ টেস্টে ১৫ উইকেট রয়েছে তার। তবে যাই হোক একাদশে পরিবর্তন নিয়ে ঢাকা টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ। দলে ফিরছেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। মিডল-অর্ডারে অভিষেক হতে পারে মোহাম্মদ মিথুনের। এদিকে ব্যাকফুটে থেকেই বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরু করছিলো জিম্বাবুয়ে। কারন ২০১৩ সালের পর টেস্ট ফরম্যাটে কোন ম্যাচই জিতেনি জিম্বাবুয়ে। সাতটি টেস্ট সিরিজ খেলে সবক’টিতেই হেরেছিলো তারা। এরমধ্যে বাংলাদেশের কাছে একটি সিরিজ হারে জিম্বাবুয়ে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় জিম্বাবুয়ে। তাই সাড়ে পাঁচ বছর কোন টেস্টে ও ১৭ বছর পর এ্যাওয়ে টেস্টে জয় পায় জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় লড়াইয়েও জয়ের পাল্লা ভারী জিম্বাবুয়ের। ১৫ ম্যাচে মুখোমুখি হয়ে ৭টিতে জিতেছে তারা। ৫টি জিতে বাংলাদেশ। ৩টি ম্যাচ হয় ড্র। তাই এসব পরিসংখ্যানের সাথে সিলেটের অভিষেক টেস্টে দুর্দান্ত জয় চলমান সিরিজের শেষ ম্যাচেও জিম্বাবুয়েকে ভালো খেলতে উৎসাহী করবে, এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশ দল : মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, মোমিনুল হক, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, আরিফুল হক, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, আবু জায়েদ চৌধুরি রাহি, শফিউল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ মিথুন, খালেদ আহমেদ ও নাজমুল ইসলাম অপু। জিম্বাবুয়ে দল : হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (অধিনায়ক), ব্রায়ান চারি, ক্রেইগ আরভিন, ব্রেন্ডন টেইলর, সিন উইলিয়ামস, সিকান্দার রাজা, পিটার মুর, রেগিস চাকাভা, ডোনাল্ড তিরিপানো, কাইল জার্ভিস, ব্রেন্ডন মাভুতা, জন নিয়ুম্বু, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, রায়ান ব্রুল, তেন্ডাই চাতারা ও ক্রিস এমপফু।