জাতীয়

ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকতে চায় বিএনপি

By daily satkhira

November 14, 2018

দেশের খবর: বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবির একটিও পূরণ হয়নি। তারপরও বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ভোটের মাঠে নেমেছে। গত দুই দিন ধরে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করছে বিএনপি। ফরম ক্রয়ের জন্য নেতাদের সাথে সারাদেশের কর্মী-সমর্থকরাও ঢাকায় এসেছেন। ভোটকে উপলক্ষ করে নয়াপল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকায় ব্যাপক শো-ডাউন এবং উত্সবের আবহ সৃষ্টি হয়েছে। এমন উত্তাল মুখর দৃশ্য বিএনপিতে গত এক যুগে দেখা যায়নি। মামলা হামলা গ্রেফতারে নাস্তানাবুদ বিএনপির নেতা-কর্মীরা গত দুই দিন স্বস্তি বোধ করছেন বলে তারা জানাচ্ছেন। বিএনপি তার দুই শরিক জোটের সাথে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। আর এ কার্যক্রমের শুরুতেই দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে কেনা হয়েছে তিনটি সংসদীয় আসনের মনোনয়ন ফরম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেবল দলীয় আনুগত্য বা শ্রদ্ধার নিদর্শন নয়, এর পেছনে বড় ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা কৌশলও থাকতে পারে বিএনপির। এখন ঐক্যফ্রন্ট বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করে নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার জন্য দাবি করছে। তাদের দাবি নিয়ে আজ নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক করবেন নেতারা।

এদিকে এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণের প্রশ্নে দলের একটি পক্ষ চেয়েছিলো কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে দাবি পূরণে বাধ্য করে নির্বাচনে যেতে। অপর পক্ষটি চেয়েছিলো যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নিতে। এখন দুই পক্ষই চাচ্ছে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সব দলের জন্য সমতল নির্বাচনী ময়দান। তা না হলে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদল করার কথাও মাথায় রেখেছেন তারা।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, দেশে নির্বাচনের উপযুক্ত কোনো পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। বর্তমানে নির্বাচনের যে পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত, সেটা হচ্ছে না, ধরপাকড় চলছে। তাতে যদি এটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হয় তাহলে হয়তো আমরা নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করব। সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি না হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত আমরা পুনর্বিবেচনা করব। সেই সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি আন্দোলনের অংশ হিসাবে। এর মাধ্যমে আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো। তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন, তা করতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু তা করা হয়নি। এতে আমরা অত্যন্ত হতাশ।

তবে বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনের মাঠে থাকতে চান। কোনো প্রকার প্রতিরোধহীন ও চ্যালেঞ্জবিহীনভাবে নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে যাবে না বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আসন বণ্টন সমন্বয় কমিটির প্রধান ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন,আমাদের যে সাতটি দফা আছে, সেগুলো আদায় করার ক্ষেত্রে আমরা অবিচল আছি। যদি সরকার এসব দাবি পূরণ না করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে থাকবো। ভোট কেন্দ্র ভিত্তিক হবে আমাদের এবারের আন্দোলন। এই নির্বাচনে আমাদের মূল স্লোগান হবে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, ধানের শীষে ভোট চাই। তিনি বলেন, ভোটের মাঠে যে অভূতপূর্ব উত্সাহ উদ্দীপনা দেখা গেছে তাতে প্রমাণ হয়, জনগণ এই নির্বাচনকে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। তবে মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার যদি তাদের গ্রেফতার ও দমনপীড়ন আগের মতই অব্যাহত রাখে তাহলে আমরা শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারি। সব কিছু নির্ভর করছে সরকারের আচরণের ওপর।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখনো প্রতিদিন আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে গায়েবি মামলা দিয়ে গ্রেফতার করছে, আমাদের হাজার হাজার কর্মী জেলে। লাখ লাখ কর্মী মামলার আসামি। আমরা সবাই মিলে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচনে নেমেছি। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা নির্বাচনের মাঠে থাকতে বদ্ধপরিকর।