আন্তর্জাতিক

প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজতে মঙ্গলে যাচ্ছে রোবট

By daily satkhira

November 18, 2018

অনলাইন ডেস্ক: প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজতে লাল গ্রহ হিসেবে পরিচিত মঙ্গলে পাঠানো হবে বিশেষ এক রোবট। রোবটটি ২০২১ সাল নাগাদ মঙ্গলের নিরক্ষরীয় অঞ্চলের কাছাকাছি একটি এলাকায় অনুসন্ধান চালাবে। লেইচেস্টার ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এক বৈঠকে ঐ এলাকাটির কথা সুপারিশ করা হয়েছে। পানির সাথে দীর্ঘ সময়ের মিথস্ক্রিয়ায় কঠিন শিলা থেকে এই গ্রহটিকে কাঁদামাটির প্রাচুর্যতা বেশি। ‘এক্সোমারস’ নামের এই রোবট যানটিতে থাকবে ড্রিল মেশিন এবং আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। মঙ্গলে সুদূর অতীতে কিংবা বর্তমানে কোন প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা সে সম্পর্কে অনুসন্ধান করবে এই এক্সোমারস রোবট। পুরো প্রকল্পটির তত্ত্বাবধানে থাকবে ইউরোপিয়ান এবং রাশিয়ান স্পেস এজেন্সির বিজ্ঞানীরা।

এই রোবট যানটির মঙ্গলে অবতরণের সম্ভাব্যতা নিয়ে গত চার বছর ধরে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। নাসার মাটিতে রোবট নামাতে গিয়ে বিপদের ঝুঁকি কমাতে আগেভাগেই বিশেষজ্ঞ প্যানেল বৈঠক করে। লেইচেস্টার ইউনিভার্সিটির এই বৈঠকে রাখা হয়েছিল মঙ্গলের ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ এবং প্রকৌশলীদের। বৈঠকের মাধ্যমে কোথায় এই রোবটটিকে নামালে তা নিরাপদে নামতে পারবে সেটি নির্ধারণ করা হয়। কারণ মঙ্গলপৃষ্ঠে অবতরণ করাটা যে কোন যানের জন্য খুবই কঠিন একটি কাজ। এর আগে মঙ্গলে এই ধরনের রোবট নামানোর অর্ধডজন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও মঙ্গলের মাটিতে সফলভাবে অবতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বেশিরভাগই। ২০১২ সালে নাসার পাঠানো কিউরিওসিটি রোভারই সবচেয়ে বেশি সফলতা লাভ করে। প্রায় এক টন ওজনের সেই রোবট যানটি ছিল নাসার বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে বেশি সফল। ২০১৬ সালে ইউরোপিয়ান এজেন্সির পাঠানো একটি রোবট যান মঙ্গলপৃষ্ঠে নামার আগেই ধ্বংস হয়ে যায়।

এবারের বৈঠকে মঙ্গলের উত্তরে নিরক্ষরীয় অঞ্চলের কাছাকাছি মাউরত ভ্যালিতে নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে এক্সো মারসকে। এই রোবটটি মঙ্গলে সুদূর অতীতের প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজার কাজ করবে। এই অঞ্চলটিতে সারা বছরই সূর্যালোক থাকে বলে রোবট এক্সো মারসের সোলার প্যানেল ভালোভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই অঞ্চলটির ভূপৃষ্ঠ পরিত্যক্ত কাঁদামাটি সমৃদ্ধ। সেখানকার শিলাবেষ্টিত পরিবেশের সাথে পানির দীর্ঘ সময়ের মিথস্ক্রিয়ায় এই ধরনের উপাদান তৈরি হয়েছে বলে তাদের বিশ্বাস।

এর আগে ২০১২ সালে কিউরিওসিটি রোভারের পাঠানো বিভিন্ন ছবি থেকে নাসার বিজ্ঞানীরা দাবি করেছিলেন, কিউরিওসিটি মঙ্গলগ্রহের যেখানে অবতরণ করেছে সেই এলাকা দিয়ে এক সময় বয়ে যেত পানির ধারা। মঙ্গলের ক্রেটার গহ্বরে অবতরণ করেছিল কিউরিওসিটি। ক্রেটারের উত্তরদিকে মাউন্ট শার্প এলাকায় একটি পাথরের খণ্ডের ছবি পৃথিবীতে পৌঁছানোর পর বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, ওই পাথরখণ্ডের আকার ও স্তরবিন্যাস স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে, তার ওপর দিয়ে এক সময় পানির ধারা বয়ে যেত। শুধু পানির ধারাই নয়, সেই সময় কিউরিওসিটি মঙ্গলপৃষ্ঠে প্রাচীন স্রোতবাহিত নুড়ি পাথরেরও সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মতে, এক সময় ওই এলাকাটির উপর দিয়ে প্রবল বেগে বয়ে যাওয়া পানির স্রোতের তোড়ে এসব নুড়ি পাথর ভেসে এসেছিল।

লেইচেস্টার ইউনিভার্সিটির এই কমিটিতে থাকা অধ্যাপক জন ব্রিজের মতে, এবার রোবট এক্সোমারসের প্রধান কাজ হবে মঙ্গল পৃষ্ঠের মাটিতে অনুজীব কিংবা অতীতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার নমুনার বিষয়টি অনুসন্ধান করা। এই রোবট যানটি মাটির অভ্যন্তরে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত খনন করতে পারবে। রাশিয়া পরিচালিত কাজাকাস্তানের রকেট বন্দর থেকে ২০২০ সালের ২৫ জুলাই থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এই রোবটটি যাত্রা শুরু করবে। আর ২০২১ সালের ১৯ মার্চ নাগাদ সেটি পৌঁছাবে মঙ্গলপৃষ্ঠে। -বিবিসি