দেশের খবর: মাতৃভূমির অখণ্ডতা রক্ষা তথা জাতীয় যে কোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে সদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান ও বীর রেজিমেন্টের কর্নেল অব দি রেজিমেন্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ।
আজ রবিবার সকালে সাভার সেনানিবাসে সিএমপিসি অ্যান্ড এস এর প্যারেড গ্রাউন্ডে আযোজিত এক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এডহক ১১ বীর (মেকানাইজ্ড) কে রেজিমেন্টল কালার প্রদান করার পর প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সেনাবাহিনী প্রধান প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে তাঁকে স্বাগত জানান উপস্থিত প্রিন্সিপাল স্ট্যাফ অফিসারগণ, জ্যেষ্ঠ অফিসারগণ, জিওসি নয় পদাতিক ডিভিশন ও সাভার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোঃ আকবর হোসেন। সেনাবাহিনী প্রধান রেজিমেন্টাল কালার প্রাপ্তির বিরল সম্মান ও গৌরব অর্জন করায় ‘এডহক বীর (মেকানাইজড)’ এর সকল সদস্যকে আন্তরিক অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন এবং কর্মদক্ষতা, কঠোর পরিশ্রম এবং কর্তব্য নিষ্ঠার স্বীকৃতি স্বরূপ অর্জিত পতাকার মর্যাদা রক্ষার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে সব সময় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ প্রদান করেন।
সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, ‘আমরা সবাই জানি আমাদের দেশ ছিল স্বল্পোন্নত দেশের অন্তর্ভূক্ত। সেখান থেকে আমাদের দেশ আজ ডেভেলপিং ন্যাশন হিসেবে উন্নিতি করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যখনই দেশের বাইরে যাই, তখন আমরা নিজেদেরকে বুক ফুলিয়ে পরিচয় দিতে পারি যে, আমরা একটা ডেভেলপিং ন্যাশানের সদস্য। সে হিসেবে এবং এই অর্জনের জন্য আমি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। যার বিরল এবং দূরদর্শীতার কারণে এবং সঠিক দিক নির্দেশনার কারণে আমরা এই স্ট্যাটাস অর্জনে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদেকে মনে রাখতে হবে, ডেভেলপিং কান্ট্রির এই যে স্টাটাস পেয়েছি, সেটা ২০২৪ সালের মধ্যে পার্মানেন্ট করতে হলে আমাদেরকে বর্তমানে আর্থসামাজিক অবকাঠামো, শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে সে অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে। আর যদি আমরা ২০২৪ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এই ইনডেক্স ধরে রাখতে পারি তাহলে আমাদের এই স্ট্যাটাস স্থায়ী আকার ধারণ করবে। সেই জন্য সেনাবাহিনী এই অগ্রযাত্রার অংশীদার হিসেবে আমাদের ওপরে সরকার কর্তৃক যে কোনো দায়িত্ব প্রদান করা হোক না কেনো সে দায়িত্ব আমরা পালনে এবং দেশে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য যে পরিবেশ দরকার সেই পরিবেশ রক্ষায় আমাদের যদি কোনো দায়িত্ব পালন করা দরকার হয়, আমরা সে দায়িত্ব পালন করবো।
তিনি বলেন, আগামী মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে আমাদের সেনাবাহিনীকে সম্ভবত নিয়োগ করা হবে। আমরা অতীতেও এই দায়িত্ব পালন করেছি। আমরা আমাদের পেশাদারিত্বের সাথে আমাদের অতীত অভিজ্ঞাতার আলোকে আমরা সেই দায়িত্ব সুষ্ঠভাবে পালন করে যেন একটা শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সম্পন্ন হয় সেই লক্ষ্যে আমাদেরকে নিয়োজিত করা হলে আমরা দায়িত্ব পালন করবো এবং সেনা প্রধান হিসেবে আপনাদের প্রতি আমার এই নির্দেশ থাকবে।
পরিশেষে তিনি বলেন, ‘লাখো শহীদের প্রণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। কঠোর অনুশীলন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিটি ক্ষেত্রেই দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে আমাদের সেনাবাহিনী। সেই পরিচিতি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, যেমনকরে করে আসছে আমাদের এই সেনাবাহিনী বিগত বছরগুলোতে। আমার দৃঢ বিশ্বাস, দুর্দম এগার- এর প্রতিটি সদস্য প্রশিক্ষণ, প্রশাসন, খেলাধুলো এবং সকল কর্মকা-ের মাধ্যমে উত্তরোত্তর উন্নিতির ধারা অব্যাহত রাখতে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে।
অনুষ্ঠান শেষে সেনাবাহিনী প্রধান আশুলিয়ার নবীনগর এলাকায় সাভার সেনা শপিং কমপ্লেক্সে ও খেজুরটেক রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন, সাভার ডিওএইচএস এর ভিতরে সেনা স্কুল ও কলেজ, লেক-১, লেক-২ ও কেন্দ্রীয় মসজিদ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
দুর্দম এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এই ইউনিট ১৯৮৮ সালে ১৫ জুলাই নয় পদাতিক ডিভিশনের অধীনে সাভার সেনানিবাসে ৪৬ ইস্ট বেঙ্গল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তীতে ২০০১ সালের ৫ জুলাই বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টে অন্তর্ভূক্ত হয়ে দুর্দম এগার নম ডিপ্লুম ধারণ করে ১১ বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট (১১ বীর) নামে পুনর্গঠিত হয়। আধুনিকায়ন এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেকানাইজড ইনফ্যন্ট্রির প্রয়োজনীয়তা অনুভ’ত হয়। তারই ফলশ্রুতিতে ২০০৭ সালের ১ এপ্রিল এই ইউনিট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সর্বপ্রথম মেকানাইজড ব্যাটালিয়ান হিসেবে রূপান্তরিত হয় এবং ১১ বীর (মেকানাইজ্ড) নাম ধারণ করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ইউনিট আভিযানিক, প্রশিক্ষণ, প্রশাসনিক এবং অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পালন করে আসছে। এই ইউনিট লংগদু জোনে অবস্থানকালে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০১’, মাইনীমুখ বাজারে অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ এবং ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থানকালে অপারেশন ক্লিন হাট-এ অংশগ্রহণ করে। পার্বত্য চট্রগ্রামে কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অপারেশনে দায়িত্ব পালন ছাড়াও এই ইউনিট ২০০৫ সালে ব্যানব্যাট-৫ (মোনাক) এর আওতায় ডি আর কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে। এই ইউনিট ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট বগুড়া সেনানিবাস হতে সাভার সেনানিবাসে আগমন করে এবং নয় পদাতিক ডিভিশনের আওতাধীন ৭১ মেকানাইজড ব্রিগেডের অধিনস্থ হয়। গত ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস প্যারেডে এই ইউনিট বীর কন্টিনজেন্ট হিসেবে অংশগ্রহণ করে।