দেশের খবর: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রামের পিপির সুপারিশে ১৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের দুর্নীতি মামলার আসামির জামিন পাওয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতার স্ত্রী তিনি। পিপি যেখানে আসামির জামিনের কঠোর বিরোধিতা করে কারাগারে পাঠিয়ে থাকেন, সেখানে উল্টো আসামিকে জামিন পাইয়ে দিতে জোরালোভাবে সহযোগিতা করেছেন শুনানিতে। পিপি আসামির জামিনের কোনো বিরোধিতাই করেননি! দুদক পিপির পক্ষ থেকে জামিন দিতে সম্মতি দেওয়া আসামিকে জামিন দেওয়া হয়েছে বলে বিচারকের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। তার এ কাণ্ডে আসামি এখন জামিনে কারামুক্ত। গত ১৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। জামিন পাওয়া আসামি হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর স্ত্রী জমিলা নাজনীন মাওলা। তাকে জামিন পাইয়ে দেন দুদক পিপি অ্যাডভোকেট কাজী ছানোয়ার হোসেন লাভলু।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ চট্টগ্রাম মহানগর পিপি। অন্যদিকে এ বিষয়ে অন্ধকারে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় দুর্নীতি দমন কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আইনজীবী হিসেবে আমার পেশাগত জীবনে এই প্রথম দেখলাম কোনো দুদক পিপি আসামির জামিনের বিরোধিতা না করে তাকে জামিন পাইয়ে দিতে আদালতের কাছে অনুরোধ করেছেন। দুর্নীতি মামলার আসামি জমিলা নাজনীন মাওলার জামিন শুনানিতে দুদক পিপি কাজী ছানোয়ার হোসেন জামিনের কোনো বিরোধিতা না করায় হতবাক হয়েছি। পিপি যেখানে আসামির জামিন ঠেকাবেন, সেখানে দুদক পিপি উল্টো আসামিকে জামিন পাইয়ে দিয়েছেন; যা বিচারকের আদেশে উঠে এসেছে।’
অভিযুক্ত দুদক পিপি কাজী ছানোয়ার হোসেন লাভলু বলেন, ‘জামিনের বিরোধিতা করিনি এই অভিযোগটি সঠিক নয়। যারা এ কথা বলছেন, ঠিক বলছেন না তারা।’ বিচারকের আদেশে জামিন দেওয়ার বিষয়ে ‘পিপি সিরিয়াসলি অ্যাপ্রুভ দ্য বেইল’ উল্লেখ করা আছে জানালে তিনি আর কোনো মন্তব্য করেননি।
দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক আকতার হোসেন বলেন, ‘দুদক পিপি দুর্নীতি মামলার আসামিকে জামিন পাইয়ে দিয়েছেন, এ বিষয়টি জানা নেই। আপনার কাছ থেকে শুনলাম। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ১৩৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের দুর্নীতি মামলায় বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী স্ত্রী জামিলা নাজনীন মাওলা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম সিনিয়র স্পেশাল জজ-১ আকবর হোসেন মৃধার আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন তাকে। জামিন শুনানির আদেশে বিচারক উল্লেখ করেছেন, ‘দুদক পিপি (অ্যাডভোকেট কাজী ছানোয়ার হোসেন লাভলু) আসামির জামিনের নিছক বিরোধিতা করেছেন। আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হলো।’ এরপর ১৭ অক্টোবর ফের একই আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন জামিলা নাজনীন মাওলা। জামিন শুনানিতে দুদক পিপি কাজী ছানোয়ার হোসেন লাভলু আসামির জামিনের বিরোধিতা না করে আসামিকে জামিন দিতে প্রকাশ্যে আদালতকে অনুরোধ করে বসেন। দুদক পিপির জামিনের অনুরোধ ও আসামি পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামি জামিলার জামিন মঞ্জুর করেন। জামিন শুনানির আদেশে বিচারক উল্লেখ করেছেন- ‘দুদক পিপি (অ্যাডভোকেট কাজী ছানোয়ার হোসেন লাভলু) সিরিয়াসলি অ্যাপ্রুভ করায় আসামিকে জামিন দেওয়া হলো।’
অভিযোগ আছে, বিএনপি নেতার স্ত্রীর জামিনে সহযোগিতা করে দেওয়ার ঘটনায় বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়েছে। তাই দুদক পিপি জামিন শুনানিতে আসামির জামিনের কোনো ধরনের বিরোধিতা করেননি। উল্টো জামিন দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে সুপারিশ করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সাউথ ইস্ট ব্যাংকের হালিশহর শাখায় খোলা ৪টি এলসির মাধ্যমে ৪টি জাহাজ ক্রয় করে রাইজিং স্টিল মিলস লিমিটেড। ওই চারটি এলসির মাধ্যমে ১৩৫ কোটি ৮০ লাখ ৪০ হাজার ২৮৮ টাকা ঋণ গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি ওই অর্থ আত্মসাৎ করে। বিষয়টি দূর্নীতি দমন কমিশনের নজরে আসার পর ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন উপ-পরিচালক মো. মোশারফ হোসাইন মৃধা বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামি করে হালিশহর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আসামিরা হলেন- বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী, তার স্ত্রী জামিলা নাজনীন মাওলা, তার ভাই আমজাদ হোসেন চৌধুরী, মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল আলম, সাউথ ইস্ট ব্যাংক হালিশহর শাখার ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রাহমান সাব্বির। চলতি বছর দুই ব্যাংকারকে বাদ দিয়ে চার আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় দুদক।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলুকে পিপি হিসেবে নিয়োগ দেয় দুদক।