জি.এম আবুল হোসাইন : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ১৫টি সোস্যালাইজেশন সেন্টারে প্রতিনিয়তই খেলাধুলা, লেখাপড়া আর বিনোদনে মেতে ওঠে স্থানীয় শিশুরা।সেভ দ্য চিলড্রেন’র সহযোগীতায় ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’র বাস্তবায়নে সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে কুশখালি, বৈকারি, ঝাউডাঙ্গা, ফিংড়ি ও ভোমরা ইউনিয়নে “গুড কজ ক্যাম্পেইন” প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এসব ইউনিয়নে ১৫টি সোস্যালাইজেশন সেন্টারের অধীনে ৩৫টি শিশু ক্লাব গঠন করা হয়েছে। এই ক্লাব গুলোতে কর্মএলাকার ৫৩১২ জন শিশুকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
সরেজমিনে কুশখালী, ঝাউডাঙ্গা ও ভোমরা ইউনিয়নের কয়েকটি শিশু কেন্দ্র পরিদর্শন করেন দাতা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন-সুইডেন এর প্রতিনিধিসহ উগান্ডা, ইথোপিয়া ও সুইডেন’র ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। কেন্দ্র পরিদর্শনকালে স্থানীয় শিশু, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি ও সমাজ ভিত্তিক শিশু সুরক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান, এসব এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সের এসব শিশুদের খেলাধুলা, লেখাপড়া আর বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছে প্রতিটি সোস্যালাইজেশন সেন্টার। এখানে শিশুদের জন্য রয়েছে খেলাধুলার নানা সরঞ্জাম। লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে সেখানে সকাল বিকাল শিশুরা এসে হৈ হুল্লোড়ে মেতে ওঠে। উন্মুক্ত মাঠে খেলাধুলা করে। নিজের শরীরের সীমানা ও ভালোমন্দ দিক সম্পর্কে নিজেরা অবগত হয়। শিশুরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বরদের কাছে যেয়ে নিজেদের অধিকারের বিষয় নিয়ে মত বিনিময় করে থাকে।শুধু অভিভাবক নয়, কথা হয় পলাশ শিশু কেন্দ্রের সদস্য আতিক ইকবাল, তন্বী, সাথী, ফতেমা, রিপা, রিমি, তাসনিয়া, জাহিদ, ইমদাদুল, সানজিদুর রহমানের সাথে। এখন ওরা নিয়মিত স্কুলে যায়। ক্লাস থেকে ঝরে পড়া শিশুর তালিকা করে স্কুলে ভর্তিতে সহযোগীতা, বাল্যবিবাহ, যৌন হয়রানী, পাচারের কবল থেকে নিজেদের রক্ষায় এখন তারা জোরালোভাবে সোচ্চার।
তারা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে রাস্তা সংস্কার, এলাকার পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে সহযোগিতা লাভ করেছে। ছোট ছোট শিশু ও নারীরা যাতে পাচার না হয়, কোনো বখাটে যুবক যাতে তাদের উত্ত্যক্ত করতে না পারে, কোনো ধরনের হয়রানি বা অনৈতিকতার মুখে না পড়ে, তারা যাতে অনিরাপদ অভিবাসনের শিকার না হয় সে জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বলতে পারছে। আমি খেলি, আমি শিখি অনিরাপদ স্থানান্তর থেকে নিরাপদ থাকি। শিখবে শিশু হেসে খেলে, শাস্তিমুক্ত পরিবেশ পেলে, এই সব স্লোগানে মুখরিত এসব কেন্দ্রগুলো।
সমাজ ভিত্তিক শিশু সুরক্ষা কমিটির প্রতিনিধিরা বলেন, শিশুরা যাতে কোনো ধরনের সন্ত্রাস মাদক ও খারাপ সাথে জড়িত না হয় সে জন্য আমরা সচেতনতার সৃষ্টি করছি। প্রতিটি কেন্দ্রে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শিশুদের জন্য প্রাইভেট পড়ার ব্যবস্থা ও খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।কুশখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম (শ্যামল) জানান, এই এলাকাগুলোতে বেশির ভাগ মানুষ অনিরাপদ ভাবে স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। তাদের বাবা-মায়ের সাথে দেশের বিভিন্ন জেলা ও পার্শবর্তী দেশ ভারতে কাজ করতে যাওয়ার সময় শিশুকেও সাথে নিয়ে যাওয়া হয়ে থাকে। সেই শিশু জানেনা তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখান তারা যাওয়ার আগে ইউনিয়ন পরিষদে রেজিঃ করে স্থানান্তরিত হচ্ছে। স্থানীয় শিশু ও অভিভাবকেরা অনেক কিছু শিখতে, জানতে পারছে। লাইব্রেরীতে বই পড়ে, খেলাধুলা করে, ফেলানো জিনিস দিয়ে তারা অনেক ভালো ভালো খেলনা ও শো-পিচ তৈরী করছে।শিশু বান্ধব সুশাসন প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে এসব শিশু ক্লাব, অভিভাবক দল, সমাজ ভিত্তিক শিশু সুরক্ষা কমিটি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ অবদান রাখায় সেভ দ্য চিলড্রেন’র পক্ষ হতে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, সুইডেনের নিনা মারিয়া ভিক্টোরিয়া, আন্না সারা মারিয়া, হিডেন মাগনুস, উগান্ডার মুগিশা গেফরি, ইথোপিয়ার গেটাছি আডাম, ফিটসাম, ফিকরু সহ ১২সদস্যের প্রতিনিধি দল। এসময় তাদের সফর সঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সেভ দ্য চিলড্রেন’র ম্যানেজার মো. মাসুদুর রহমান, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’র পরিচালক (কর্মসূচি ও পরিকল্পনা) মো. জাহিদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা প্রকল্প অফিসের ডেপুটি ম্যানেজার ও ইনচার্জ মো. শরিফুল ইসলাম, ইনসিডিন বাংলাদেশ, এসিডি ও বিটিএস এর প্রতিনিধিবৃন্দ।