ক্রীড়া ডেস্ক: বাতাসের শহর বলে খ্যাতি আছে ওয়েলিংটনের। শুধু খ্যাতি বললে ভুল হবে। সোজা কথা—ওয়েলিংটনই পৃথিবীর সবচেয়ে বাতাসবহুল শহর। বাতাসের গতির এতটা তীব্র আর কোনো শহরে নেই। সমুদ্র থেকে দেশটির নর্থ ও সাউথ আইল্যান্ডের মাঝের ‘করিডর’ দিয়ে ঢোকা প্রচণ্ড হাওয়া শহরটাকে সব সময়ই করে রাখে আলুথালু। বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ যেন এই শহরের আবহ সংগীত। ওয়েলিংটনের তীব্র বাতাসে বাংলাদেশ দল এর আগেও খেলে গেছে। কিন্তু আজকের বাতাসটা একটু বেশিই ছিল। সকাল বেলা শহরের বাসিন্দা উবার ট্যাক্সি চালক জনের দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতাও তাই বলল, ‘আজকের বাতাসটা কিন্তু স্বাভাবিক নয়…। খেলা কি হবে?’ খেলা শেষ পর্যন্ত সময় মতোই শুরু হয়েছে। তবে বাতাসের সঙ্গে আসা বৃষ্টির ঝাপটায় বন্ধ হয়েছে দুবার। প্রথমবার ম্যাচ শুরুর ৫০ মিনিট পর। স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ১০ মিনিটে খেলা শুরু হয়ে ২ টা ৪০ মিনিটে বন্ধ হয় দ্বিতীয় দফা। বৃষ্টির উৎপাত কমার পর আরও ২৫ ওভার খেলা চালানোর আশা নিয়ে বিকেল ৫টা ৪২ মাঠে নামেন আম্পায়াররা। তবে ১১ ওভার ২ বল হওয়ার পরই আলোকস্বল্পতায় শেষ করে দেন দিনের খেলা।শেষের এই কয় ওভারে মাহমুদউল্লাহর আউটটাই বিয়োগান্ত ঘটনা। মুমিনুলের সঙ্গে ভালোই জুটি জমছিল তার। কিন্তু ওয়াগানের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে করা বলে অযথাই জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালিয়ে কট বিহাইন্ড হয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ। দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ১৫৪। মাহমুদউল্লাহ ওই শটটা না খেললে এই ছবিটা হতে পারত আরও সুন্দর। আবার আরেকটু খারাপও হতে পারত, যদি ৪ রান থাকা সাকিব আল হাসানের ক্যাচটা স্কয়ার লেগে মিচেল স্যান্টনার না ফেলতেন।তবু আশার কথা, বাতাস আর বৃষ্টি ছাড়া ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম দিন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আর কিছুই তেমন সমস্যায় ফেলতে পারেনি। প্রথম সেশনের ৫০ মিনিট আর দ্বিতীয় সেশনের দেড় ঘণ্টায় মাত্র দুটি উইকেট ফেলতে পেরেছেন নিউজিল্যান্ডের বোলাররা। এর মধ্যে ইমরুলের আউটে যতটা না বোলারের কৃতিত্ব, তার চেয়ে বেশি ‘কৃতিত্ব’ ব্যাটসম্যানের বাজে শটের। টিম সাউদির লেগ স্টাম্পের ওপর করা শর্ট বলটা ছেড়ে দেওয়াই উচিত ছিল ইমরুলের। কিন্তু তিনি করতে গেলেন পুল এবং তাতেই বোল্টের ক্যাচ হয়ে মাত্র ১৬ রানে বাংলাদেশের প্রথম উইকেটের পতন।আরেক ওপেনার তামিম ইকবাল, মুমিনুল এবং তামিমের আউটের পর মাহমুদউল্লাহর ব্যাটেও দেখা গেছে টেস্টের মেজাজ। তামিমের ৫০ বলে ৫৬ রানের ইনিংসে ১১টি বাউন্ডারি দেখে মনে হতে পারে টেস্ট ভুলে বুঝি টি-টোয়েন্টিই খেলতে নেমেছিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালের চরিত্রটাই এমন যে মারার বল পেলে ছাড়েন না। বোল্টের করা ইনিংসের প্রথম ওভারেই তাই বাতাসের গতি কাজে লাগিয়ে বাউন্ডারি। বোল্টের পরের দুই ওভারেও নিয়েছেন দুটি করে বাউন্ডারি। এক ওভারে তামিম দুটি করে বাউন্ডারি মেরেছেন সাউদি, গ্র্যান্ডহোমকেও।১০.৩ ওভারে তামিমের ৩১ রানের সময় গ্র্যান্ডহোমের বলে এলবিডব্লুর আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। নিউজিল্যান্ডের একটা রিভিউও বৃথা যায়। পরে অবশ্য রিভিউতেই এলবিডব্লু হয়েছেন তামিম, বোলার এবার বোল্ট। তার আগেই পূর্ণ হয়ে গেছে টেস্টে তামিমের ২০তম ফিফটি।তামিমের সঙ্গে ৪৪ রানের জুটি ভাঙার পর তৃতীয় উইকেটে মুমিনুল-মাহমুদউল্লাহ মিলে যোগ করেছেন ৮৫ রান। মাহমুদউল্লাহ ২৬ রানে ফিরে গেলেও ইংল্যান্ড সিরিজের পর প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমে দারুণ স্বচ্ছন্দ মুমিনুল। টেস্টে নিজের ১১তম ফিফটিও পেয়ে গেছেন কালই। ওয়াগনারের একটা বল গ্লাইড করে পয়েন্ট ও গালির মাঝ দিয়ে চার মেরেই ব্যাট উঠিয়ে উদ্যাপন করলেন ফিফটি।অথচ মুমিনুলকে নিজের প্রথম রানটাই নিতে হয়েছে তার জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জ হয়ে আসা এক বলে। বুক সমান উচ্চতায় শট বল দিয়েছিলেন সাউদি। মুমিনুল একটুও অস্বস্তিতে না পড়ে স্কয়ার লেগের দিকে পুলের মতো খেলে দিলেন। বোল্ট, গ্র্যান্ডহোমরা এরপরও বারবারই শর্ট বলে বিপদে ফেলতে চেয়েছেন তাঁকে। কিন্তু দলের সঙ্গে লম্বা সময় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ঘুরে এই কন্ডিশনের ব্যাটিংটা যেন মুখস্থই হয়ে গেছে তাঁর। ৪২ বলে প্রথম ১০ রান করার পরই খুলতে থাকে মুমিনুলের হাত। ১১ থেকে বোল্টের এক ওভারে তিন বাউন্ডারি মেরে পৌঁছে যান ২৩-এ। দ্বিতীয়বার খেলা বন্ধ হওয়ার আগে মুমিনুলের ঝড়টা বেশি টের পেয়েছেন সাউদি। ২৭তম ওভারে দুই বাউন্ডারি, ২৯তম ওভারে দুই বাউন্ডারির সঙ্গে এক ছক্কাও। হতে পারে এটা টেস্ট ম্যাচ, মারার বল ছাড়বেন কেন মুমিনুল? তা ছাড়া টেস্টের আগেই বলেছিলেন, এই উইকেটে সেট হতে পারলে বড় ইনিংস খেলা সম্ভব। মুমিনুলের ইনিংস সেই অর্থে এখনো অত বড় হয়নি, তবে কাল সেটা হতে বাধা কোথায়! বেসিন রিজার্ভের উইকেটে আর যাই হোক ব্যাটসম্যানদের জন্য বিষ নেই। উইকেটে হালকা সবুজ আভা থাকলেও ছেঁটে ফেলা হয়েছে ঘাস। টসে জিতে আগে বোলিং নিলেন, সারা দিন শুধু পেসারদের দিয়ে বল করালেন, তবু খুব একটা সুফল পেলেন না নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। তবে হ্যাঁ, ব্যাটসম্যানদের জন্য বাতাসের বন্ধুত্বটা এখানে বড় বেশি জরুরি।