জাতীয়

দুটি কিডনি কেটে ফেলায় মৃত্যু: হাইকোর্টের রুল

By daily satkhira

November 20, 2018

দেশের খবর: চলচ্চিত্র নির্মাতা রফিক শিকদারের মা রওশন আরার দুটি কিডনি কেটে ফেলার পর মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে কেন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেনে হাইকোর্ট। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং রফিক শিকদারের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

এছাড়া রুলে চরম অবহেলা ও অপেশাদারীভাবে রওশন আরার দুটি কিডনি অপসারণ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং অস্ত্রোপচারে মনোনীত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণ ও চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কেন বিএসএমএমইউ’র কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

এছাড়াও অস্ত্রোপচার সংস্লিষ্ট চিকিৎসকের পেশাগত নিবন্ধন বা সনদ বাতিলের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

স্বাস্থ্য সচিব, বিএসএমএমইউ’র পক্ষে উপাচার্য, বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, সহকারী অধ্যাপক ফারুক হোসাইন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি), পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ডিএমপি কমিশনারকে চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আজ আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম. আসাদুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আনিসুল হাসান ও মো. শাহীনুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পূরবী সাহা।

রিটের পক্ষের আইনজীবী আসাদুজ্জামান পরে সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসক হাবিবুর রহমান লিখিতভাবে অপরাধ স্বীকার করে চুক্তি করেছিলেন যে, নিজ খরচে তিনি কিডনি প্রতিস্থাপন করে দেবেন। কিন্তু তিনি কালক্ষেপণ করেছেন। এবং রওশন আরাকে বিএসএমএমইউ’র আইসিইউয়ের লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। রওশন আরার বেলায় যা হয়েছে বা যা ঘটেছে, তা এক কথায় স্বেচ্ছাচারী, অপেশাদারীত্ব ও চিকিৎসায় চরম অবহেলা। এটাকে শুধু মেডিকেল নেগলেজেন্সি বললে কম বলা হবে, দিস ইজ পিওরলি অ্য ক্রিমিনাল অফেন্স।

এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর রওশন আরার কিডনি অপসারণ নিয়ে যুগান্তর পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। ‘বিএসএমএমইউ: একটি কিডনি ফেলতে গিয়ে দুটিই বাদ!’ শিরোনামের প্রকাশিত সে প্রতিবেদন যুক্ত করে পরে রিট করা হয়েছে। সে রিটের শুনানি নিয়ে আদালত আজ রুল জারি করলেন।

পত্রিকায় প্রকাশিত সে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইউরোলজি বিভাগে রওশন আরাকে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানতে পারেন তার একটি কিডনিতে ইনফেকশন রয়েছে। কিডনিটির অবস্থা বিবেচনা করে তারা অপারেশন করে সেটি কেটে ফেলে দেয়ার পরামর্শ দেন। সে পরামর্শ অনুযায়ী ৫ সেপ্টেম্বর তার অপারেশন হয়। অপারেশনের পর তাকে পোস্ট অপারেটিভে নেয়া হয়। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে আইসিইউতে নেয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু হাসপাতালের আইসিইউ খালি না থাকায় স্বজনরা রোগীকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান।

সেখানে ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন রওশন আরার শরীরে কোনো কিডনি নেই। এ কারণে সেখানে চিকিৎসা দিতে অনীহা প্রকাশ করায় তাকে পুনরায় বিএসএমএমইউর ইউরোলজি বিভাগে নেয়া হয়। একই সময়ে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর পরীক্ষা করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরাও জানান, রোগীর শরীরে কিডনির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। এসব রিপোর্ট বিএসএমএমইউর সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের দেখানো হলে তারা বলেন, কিডনি নন ফাংশনিং হলে সেটি পরীক্ষায় ধরা নাও পড়তে পারে।

রওশন আরার ছেলে রফিক শিকদার প্রতিবেদনে বলেন, মায়ের বাম পাশের কিডনিতে ইনফেকশন ছিল। চিকিৎসকরা জানান, এটি ফেলে দিতে হবে। তার বাম পাশের কিডনিটা ফেলে দিলে তিনি সুস্থ থাকবেন। তবে মায়ের ডানপাশের কিডনি ভালো ছিল। এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বর বিএসএমএমইউর ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলালের তত্ত্বাবধানে মায়ের বাম কিডনি অপসারণে অস্ত্রোপচার করা হয়।

‘‘অস্ত্রোপচারের পর পোস্ট অপারেটিভে মাকে নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বলেন, তাকে আইসিইউতে নিতে হবে। তখন মায়ের জ্ঞান ছিল, তিনি কথাও বলছিলেন। মাকে দেখে তো মনে হচ্ছল না আইসিইউতে নেয়ার প্রয়োজন আছে। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে নেয়ার জন্য চাপ দেন।’’

তিনি বলেন, বিএসএমএমইউর আইসিইউ খালি না থাকায় মাকে রাত ৩টা-৪টার দিকে মগবাজারের ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়। পরদিন ওই হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. ফখরুল মাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য পাঠান।

‘‘সেখানে সিটি স্ক্যান করার পর ডা. ফখরুল বলেন, আগের কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে তার (রওশন) বাম কিডনি কেটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সিটিস্ক্যান পরীক্ষার পর দেখা যাচ্ছে তার ডান পাশের কিডনিও নেই। এমনকি অপারেশনের পর থেকে তার প্রসাব হয়নি।

এরপর সব রিপোর্ট পর্যালোচনা করে ইনসাফ হাসপাতালের ডা. ফখরুল তার হাসপাতালে মাকে রাখতে অপারগতা প্রকাশ করেন।’’

রফিক শিকদার বলেন, এরপর মাকে আবার বিএসএমএমইউতে নিয়ে গেলে চিকিৎসক অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলাল অন্য চিকিৎসকদের ভৎসনা করেন।

এ সময় তার কাছে দুটি কিডনি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক দুলাল জানান, কারও কথায় কান দেবেন না। তার পেটে কিডনি আছে। কিন্তু ফাংশনাল না হওয়ায় পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না। বিষয়টি নিয়ে এরপর অন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা বলেন, দৃশ্যমান জিনিস পেটের মধ্যে থাকলে তা অবশ্যই ধরা পড়বে।

তাই বিষয়টি নিশ্চিত হতে বিআরবি হাসপাতালে অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদের কাছে গেলে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে তিনিও জানান, মায়ের পেটে কোনো কিডনি নেই। গত ১২ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইউরোলজিক্যাল সার্জনস (বিএইউএস)।

ওই সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা উল্লেখ করে এর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে সংগঠনের নেতারা বলেন, রওশন আরার দুটো কিডনি একসঙ্গে জোড়া লাগানো থাকায় একটি অপারেশন করতে গিয়ে আরেকটি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অপসারণ হয়ে যায়।

‘‘এর আগেও তার কিডনিতে অপারেশন করা হয়েছিল, যার কারণে অপারেশন করতে গিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেগ পেতে হয়েছিল। ফলে অপারেশন করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবেই ভালো কিডনিটা অপসারণ হয়ে যায়।’’