দেশের খবর: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে মহাজোটের একক প্রার্থীর নাম আগামী রবিবার বা ২৫ নভেম্বরের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে ২৩০ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন জোটের শরীক দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে আলোচনা এবং শেষ মুহূর্তের দর কষাকষি চলছে। জানা গেছে, এবার জোট শরিকদের আসন বণ্টন করতে গিয়ে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে আওয়ামী লীগের। ২১টি আসনে আওয়ামী লীগের ও জোট শরিকদের প্রার্থী রয়েছেন। কার প্রার্থী থাকবে, কার প্রার্থী বাদ যাবে— তা নিয়ে এখন শেষ সময়ের হিসাব-নিকাশ চলছে। ২০০৮ সালের মতোই মহাজোট করে এবার নির্বাচনে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে ওই বছরের তুলনায় এবার জোটের আকার অনেক বড়। ১৪ দলীয় জোটের পাশাপাশি জাতীয় পার্টি (জাপা) আছে জোটে। এছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট, বিএনপির সাবেক নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপি, বিএনপির সাবেক শরিক ইসলামী ঐক্যজোটসহ আরও কিছু ধর্মভিত্তিক দলও যুক্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগ জোটে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও এখনো দেওয়া হয়নি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। ৬৫ থেকে ৭০টি আসন জোট শরিকদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। নতুন দল-জোট শরিকে যুক্ত হওয়ায় আসনের দাবিদার যেমন বেড়েছে, তেমনি দলের নেতারাও যারা নির্দিষ্ট কিছু আসনে কয়েক বছর ধরে তত্পর, সেগুলো ছেড়ে দিতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে এসব আসন নিয়ে বারবার আলোচনায় বসতে হচ্ছে। তবে সবাই তাকিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর।
সিলেট-৬ আসন থেকে মহাজোটের মনোনয়ন চান বিকল্পধারার নেতা শমসের মবিন চৌধুরী। এ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হলেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। ময়মনসিংহ-৪ আসনে বর্তমান ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান নাকি বিরোধী দলীয় নেতা জাতীয় পার্টির (জাপা) রওশন এরশাদকে প্রার্থী করবে মহাজোট— এই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে উঠেছে। ২০০৮ সালে বিজয়ী আওয়ামী লীগ আর রওশনকে ছাড় দিতে চাইছে না। আবার রওশনও এই আসন থেকে নিজের শক্তিতে জিতেছেন ১৯৯৬ সালে। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া চট্টগ্রাম-১ আসনের মনোনয়ন চাইছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোশাররফ হোসেন বর্তমান সংসদ সদস্য। চট্টগ্রাম-৯ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির (জাপা) জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে চান চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ঢাকা-১৮ আসনে গত দুইবারের সংসদ সদস্য সাহারা খাতুন এবারও ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে জাতীয় পার্টি (জাপা) আসনটি দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের জন্য চায়।
মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ ঢাকা-১৭ আসন চান। তিনি নিজেই এ আসন থেকে নির্বাচনে লড়তে চান। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মহাজোটের আরেক শরিক বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া এখান থেকেই আবার প্রার্থী হতে চান চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়েখ্যাত সারাহ বেগম কবরী। লক্ষ্মীপুর-২ আসনে গত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে বিজয়ী হন মোহাম্মদ নোমান। তিনি এবার মহাজোটের প্রার্থী হতে চান। তবে সেখানে আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ। তিনি ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্যও। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) লিয়াকত হোসেন খোকার বিপরীতে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। তবে এবার আসনটি চাইছেন দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য এ এইচ এম মাসুদ দুলাল। সাবেক সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাতও সেখানে মনোনয়ন চান।
ঢাকা-৪ (শ্যামপুর-কদমতলী) আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) বর্তমান এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। ২০০৮ সালে জয়ী সানজিদা খানম এবং প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সহকারী সচিব আওলাদ হোসেন এ আসনে অওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) এমপি সালমা ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল মান্নান খানও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। গত নির্বাচনে আব্দুল মান্নান খানকে হারিয়ে নির্বাচিত হন সালমা ইসলাম। এবারও তিনি জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী হতে চান। তার ছেলে শামীম ইসলাম নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেছেন ঢাকা-১১ আসন থেকে। ঢাকা-৮ (রমনা-মতিঝিল-পল্টন) আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে ২০০৮ সাল থেকেই ছাড় দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। এবার এ আসনে মনোনয়ন চান আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউছার। নোয়াখালী-৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী। তিনি সংগঠন ও জনগণের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এ আসন থেকে মহাজোটের মনোনয়ন পেতে চান বিকল্পধারার মহাসচিব আব্দুল মান্নান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মান্নান নোয়াখালীর ওই আসন ছাড়াও ঢাকা-১২ ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকেও ভোট করেন। তবে বিজয়ী হতে পারেননি একটিতেও।
বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচন করতে চান। এখানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আছেন আরও বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। নড়াইল-১ আসন থেকে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া নৌকা প্রতীক চাচ্ছেন। এখানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি। নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে বাছাই করেছে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। এই আসনটি গতবার ছাড় দেওয়া হয়েছিল ওয়ার্কার্স পার্টিকে। এবার মাশরাফিকে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী সেক্রিফাইস করেছেন জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কথাবার্তা বলেই আমরা দিয়েছি। নেত্রকোনা-৫ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হতে চাইছেন জাসদের সহ-সভাপতি লুত্ফা তাহের। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ওয়ারেস হোসেন বেলাল। তিনি লুত্ফা তাহেরের দেবর। গত নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৮ আসনে ছাড় দেওয়া হয় জাতীয় পার্টির (জাপা) ফখরুল ইমামকে। তাই তার দল আসনটি আবার চাইছে। তবে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার এবার এ আসনে মনোনয়ন চান। গাজীপুর-৪ আসনে মনোনয়ন চান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি ও গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লাহ শিকদার। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় চার নেতার অন্যতম তাজউদ্দীন আহমদ কন্যা সিমিন হোসেন রিমি এ আসনের আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনি এবারও মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র ক্রয় করেছেন। সাতক্ষীরা-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুত্ফুল্লাহ। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান। এছাড়া জাতীয় পার্টির (জাপা) শক্তিশালী অবস্থান থাকা রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামেও আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য জিতে এসেছেন লড়াই করে। কিন্তু সেগুলো জাপা এবার চায়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মহাজোট মনোনীত প্রার্থীর নাম ২৪ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে। দলীয়ভাবে কিছু ঘোষণা হবে না। আগে দলীয়ভাবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত ছিল। পরে ১৪ দল, যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় পার্টি (জাপা)সহ আমাদের জোট শরিকদের অনুরোধে আমরা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি। জোটগতভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে।’ তিনি বলেন, জোটের শরীকদের ৬৫ থেকে ৭০ টি আসন ছেড়ে দেয়া হবে। এর বাইরে আমরা যাব না।