আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: সৌদি আরবে নারীদের জীবন কাটাতে হয় নিয়মের নানা বেড়াজালের মধ্যে। এই দেশটিতেই সব প্রথা ভেঙে ভিন্ন রকম জীবন কাটান রাজকুমারী আমিরাহ আল তাউইল। রাজকুমারী আমিরাহর জন্ম ১৯৮৩ সালের ৬ নভেম্বর, সৌদি আরবের রিয়াদে। বেড়ে উঠেছেন সেখানেই। তবে তিনি শুধু ছবির সুন্দর রাজকুমারী হয়েই বেঁচে থাকতে চাননি। আত্মনিয়োগ করেছেন নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন অর্জনে। ইতিমধ্যে জনসেবামূলক কাজ করে নজর কেড়েছেন তিনি। যে দেশে নারীদের কঠোরভাবে পর্দা করতে হয়, সেখানে তিনি পশ্চিমা পোশাকে ঘুরে বেড়ান। তৈরি করেছেন নিজস্ব স্টাইল। রূপকথার রাজকুমারীর জীবনে যেমন রাজকুমার এসে জীবন বদলে দেয়; আমিরাহর জীবনেও তেমনটাই হয়েছে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি প্রেমে পড়েন প্রিন্স আলওয়ালেদ বিন তালালের। তাঁদের বয়সের ব্যবধান ছিল ৩২ বছর। আর আলওয়ালেদ তত দিনে দুবার বিয়ে করে ফেলেছেন। কিন্তু কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। ২০০১ সালে বিয়ে করেন তাঁরা।
বিয়ের পর আমিরাহ শুধু প্রিন্স আলওয়ালেদের স্ত্রী হিসেবে থাকতে চাননি। তিনি আলওয়ালেদ বিন তালাল ফাউন্ডেশনসের ভাইস চেয়ারপারসন হন। আর তখন থেকেই তিনি পাদ-প্রদীপের আলোতে আসতে শুরু করেন। দাবি তোলেন নারীদের অধিকারের। পাশে দাঁড়িয়েছেন দরিদ্র, নারী ও শিশুদের। তিনি এখন পরিচিত মানবতাবাদী, উদ্যোক্তা, ফ্যাশন আইকন, সুবক্তা ও টাইম এন্টারটেইনমেন্ট হোল্ডিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে। তাঁর প্রতিষ্ঠান তরুণকেন্দ্রিক গণমাধ্যম ও প্রযুক্তিশিল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে, যা সৌদি সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া তিনি তাসামি সোশ্যাল ইনিশিয়েটিভস সেন্টারের সভানেত্রী ও অন্যতম উদ্যোক্তা। প্রতিষ্ঠানটি সৌদি আরবজুড়ে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকে।
আল আরাবিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজকুমারী আমিরাহ সৌদি নারীর স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের শক্তির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সৌদি নারীরা বাস্তব জগতে নিজের মনের কথাগুলো বলার সুযোগ পায় না। সেই কথাগুলো বলার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, যেখানে নারীরা সমান সুযোগ পায় নিজেকে প্রকাশ করার। তবে এখানেও নারীকে নানা বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়, বিশেষ করে বিতর্কিত ব্যক্তিরা যখন নারীর বিরুদ্ধে ক্রমাগত আপত্তিকর কথা বলে যান। কিন্তু এরপরও কোনো দাবির পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য নারীদের ভালো প্ল্যাটফর্ম এটি।
তবে নিজের জীবনে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়ে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে হয় আমিরাহকে। স্বামী পাশে থাকলেও তাঁর চলাফেরা-কর্মকাণ্ড নিয়ে আপত্তি তুলেছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তাঁর দেবর প্রকাশ্যে স্বামীকে হুমকি দিয়েছিলেন, স্ত্রীকে (আমিরাহ) সামলাতে না পারলে কঠিন ঝামেলায় পড়তে হবে। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান, ২০১৩ সালে। তবে সাবেক স্বামীর সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে বলে দাবি তাঁর।