জাতীয়

মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতার লাশ উদ্ধার

By Daily Satkhira

November 23, 2018

দেশের খবর: আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের জন্য ঢাকায় এসে চার দিন আগে পল্টন থেকে নিখোঁজ যশোরের বিএনপি নেতা আবু বকর আবুর লাশ মিলেছে বুড়িগঙ্গায়।

বিএনপি দাবি করেছে, ক্ষমতাসীনদের মদদে হত্যা করা হয়েছে ধানের শীষ নিয়ে ভোট করতে আগ্রহী স্থানীয় এই নেতাকে।

আবু বকর আবু (৫৮) যশোর জেলা বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। চিরকুমার এই জনপ্রতিনিধি টানা চতুর্থ বার কেশবপুরের মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করলেও সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন চেয়েছিলেন এবারই প্রথম।

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি শাহ জামান বলেন, মঙ্গলবার বিকালে বুড়িগঙ্গা নদীর ফরিদাবাদ ডকইয়ার্ড বরাবর নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়।

বুধবার রাতে তার স্বজনরা সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন বলে জানান তিনি।

ওসি শাহ জামান বলেন, “লাশ অনেকটাই পচে গেছে। পরনে ছিল স্যান্ডো গেঞ্জি আর পাজামা। তার ভাগ্নে আর ভাতিজা তাকে আবু বকর আবু হিসেবে শনাক্ত করেছেন।”

তার ভাগ্নে খুলনার একটি স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক জাহিদ হাসান বলেন, “গত রোববার রাতে পল্টনের মেট্রোপলিটন হোটেল থেকে মামা নিখোঁজ হন। আজ তার লাশ পাওয়া গেল।”

পরিবারের সদস্যরা বলছেন, আবুকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকাও আদায় করা হয়েছে। কিন্তু তাকে আর মুক্তি দেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে বুধবার দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, সেখানেও আবুর নাম ছিল।

তবে কারা কেন কীভাবে আবুকে হত্যা করেছে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা পুলিশ দিতে পারেনি।

ভাগ্নে জাহিদ হাসান জানান, যশোর-৬ আসনের মনোনয়ন ফরম নেওয়ার জন্য গত ১২ নভেম্বর ঢাকায় এসে পল্টন এলাকার মেট্রোপলিটন হোটেলে ওঠেন আবু। মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম তার সঙ্গে ছিলেন।

বিএনপির মনোনয়ন ফরম তুলে ও জমা দেওয়ার পর সোমবার সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি ওই হোটেলেই ছিলেন। সেখান থেকে রোববার রাত ৮টার দিকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তিনি অপহৃত হন বলে স্বজনদের ধারণা।

জাহিদ জানান, সেদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার মামার ফোন থেকে কয়েকটি মিসড কল যায় কেশবপুরে তার ফুপাতো ভাই (আবুর ভাতিজা) হুমায়ূন কবিরের ফোনে। পরে অন্য একটি নম্বর থেকে হুমায়ূন কবিরকে ফোন করে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা দেওয়ার জন্য একটি বিকাশ নম্বরও দেওয়া হয়।

“কিন্তু সেদিন রাত হয়ে যাওয়ায় বিকাশে আর টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। সোমবার অপহরণকারীরা অন্য একটি নম্বর থেকে যোগাযোগ করে। পরে তাদের দেওয়া কয়েকটি নম্বরে দেড় লাখ টাকা বিকাশ করা হয়।”

জাহিদ বলেন, মঙ্গলবার অপহরণকারীরা যোগাযোগ করে দেড়লাখ টাকা পাওয়ার কথা জানিয়ে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে আরও ২০ হাজার টাকা দেওয়ার রফা হয়। দুটি নম্বরে সেই টাকা পাঠানো হয়।

“অপহরণকারীরা টাকা পাওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে পল্টন এলাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও মামাকে আর ছাড়েনি। পরে তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।”

শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাফর আলী বিশ্বাস বলেন, “আবু বকর আবুর ভাতিজা হুমায়ুন কবির মঙ্গলবার থানায় এসে তার চাচার নিখোঁজ হওয়ার কথা জানান। এরপর আমি অনুসন্ধান শুরু করি। পল্টনের ওই হোটেলে গিয়ে সিসিটিভির ফুটেজও সংগ্রহ করি। সেখানে রোববার রাতে একটি ব্যাগ হাতে তাকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।”

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে আবুর মোবাইল ফোনের সিগনাল পাওয়া যায় পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডের একটি টাওয়ারে। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি জানতে পারেন, কেরানীগঞ্জে একটি লাশ পাওয়া গেছে, যেটি আবুল লাশ হিসেবে শনাক্ত করেছেন তার ভাতিজা ভাগ্নেরা।

‘পরিকল্পিত হত্যা’

আবু বকরের লাশ শনাক্ত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, “সরকার এখন আগুন নিয়ে খেলা শুরু করেছে। যশোর জেলা বিএনপির নেতা ও চারবারের একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধিকে হোটেল থেকে তুলে নেওয়া হল, আর গায়েব করে হত্যা করার মাধ্যমে তার লাশ বুড়িগঙ্গায় ফেলা দেওয়া হল।

“বর্তমান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এজেন্সির মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। আমি আবু বকর আবুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। অবিলম্বে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।”

রিজভী বলেন, “বুড়িগঙ্গা নদীতে তার লাশ পাওয়া গেছে। জনপ্রিয় এই জনপ্রতিনিধিকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর লাশ বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয় হত্যাকারীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনে এভাবেই একজন আন্দোলনকারীর লাশ ভেসে উঠেছিল বুড়িগঙ্গায়। সরকার গোটা দেশকে এখন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করেছে।”