আমিনুল ইসলাম বজলু ॥ পাইকগাছা-খুলনা প্রধান সড়কের কপিলমুনি থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিঃমিঃ চলাচলের অনুপযোগী সড়কে অবশেষে শুরু হয়েছে সংস্কার কাজ। তবে এবার সড়কে কোন পিচের পুটিং নয়, ঈদকে সামনে রেখে সড়ক ও জনপদ বিভাগ সড়কের বিভিন্ন অতি বড় বড় খাঁদ এলাকাগুলোতে ইটের হেরিং বোল্ড দিয়ে সংস্কার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আর এ ঘটনায় এলাকায় রীতিমত হৈ-চৈ পড়ে গেছে যে, পিচের রাস্তার উপর কি না চলছে ইটের সোলিং এর কাজ। তাও কি না আবার দেশের অতিগুরুত্বপূর্ণ পাইকগাছা-খুলনা প্রধান সড়কে। সুন্দরবন উপকূলীয় দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ব্যস্ততম সড়কের কপিলমুনি থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত অংশটুকু দীর্ঘ দিন সংস্কার না করায় তার পিচ উঠে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কটি দিয়ে চলাচল করছে স্ব’ স্ব’ যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক,লরি, পিকআপ, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট সহ বিভিন্ন যানবাহন। ইতোমধ্যে সড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধনও করেছে পাইকগাছা নাগরিক কমিটি সহ সর্বস্তরের মানুষ। সড়কের নাজুক অবস্থা ও তা নির্মাণে মন্ত্রাণালয়ে ডিও লেটার প্রদান সহ জাতীয় সংসদে সংশ্লিষ্ট সড়ক ও সেতু মন্ত্রীর একাধিক বার দৃষ্টি আকর্ষণও করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হক। এনিয়ে দেশের বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় গনমাধ্যমে ফলাও করে ধারাবাহিক সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। তবে এত কিছুর পরও জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের উপর নতুন করে ইটের হেরিং বোল্ড করার বিষয়টিকে মোটেও ভালো চোখে দেখছেননা অবহেলিত জনপদের মানুষরা। প্রসঙ্গত, সড়ক ও জনপথ বিভাগের পাইকগাছা খুলনা রুটের ৬৬ কিলোমিটার সড়কের বেতগ্রাম থেকে খুলনা পর্যন্ত ৩৩ কিঃমিঃ সড়ক হাইওয়ের আওতায় রয়েছে। বেতগ্রাম থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত বাকি ৩৩ কিঃমিঃ সড়কের বেতগ্রাম থেকে কপিলমুনি পর্যন্ত ২০ কিঃমিঃ সড়ক ব্যাপক আন্দোলন-সংগ্রামের পর সংস্কার হলেও কপিলমুনি থেকে পাইকগাছা উপজেলা সদর পর্যন্ত ১৩ কিঃমিঃ এক অজ্ঞাত কারণে সংস্কার হয়নি। দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদের একমাত্র সড়কটি দিয়ে জেলা সদর থেকে শুরু করে রাজধানী সহ সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ ও রপ্তানী পণ্য পরিবহন হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী অদ্যবধি কোন সরকার সকড়টি নির্মাণে যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি। যদিও কয়েক মাস পূর্বে পুটিং সর্বস্ব সংস্কার কাজ শুরু হলেও অদৃশ্য কারণে তাও বন্ধ রয়েছে। ঠিক এমন অবস্থায় চলতি বর্ষা মৌসুমে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে জনপদের লাখ লাখ মানুষের ভোগান্তি আজ চরমে পৌছেছে। বিশেষ করে একটু বৃষ্টিতেই সড়কের খাঁদগুলোতে পানি জমে মনে হয় সড়কটিতে নতুন করে গজিয়েছে অসংখ্য পুকুর। আর তখন গাড়ি চালকদেরকেও চরম বিপাকে পড়তে হয় মূল রাস্তাটি ঠিক কোন দিকে তা নিয়ে। এমন বিভ্রান্তিতে তাদের প্রায়ই পড়তে হয় ছোট-বড় দূর্ঘটনার মধ্যে। খুলনা জেলার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরা জেলার সদর, আশাশুনি,কালিগঞ্জ ও তালা সহ প্রত্যান্ত এলাকার লাখ লাখ মানুষের জেলা, রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন শহরে সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন সরাসরি যাতায়াত করে দূরপাল্লার ২৫-৩০ টি পরিবহন। এছাড়া জেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগে চলাচল করে শতাধিক যাত্রীবাহী বাস। দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানী পণ্য হিমায়িত চিংড়ি উৎপাদনের মূল কেন্দ্রস্থল পাইকগাছা-কয়রা থেকে প্রতিদিন মাছবাহী শ’ শ’ ট্রাক-পিকআপ সহ অসংখ্য মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট সহ বিভিন্ন পরিবহন চলাচলের একমাত্র সড়কটির ভবিষ্যত নিয়ে তাই জনপদে মানুষের রাতকাটছে একপ্রকার নির্ঘুম। খুলনা বিভাগীয় বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির লাইন সেক্রেটারী শেখ জাহিদুল ইসলাম জানান, পাইকগাছা খুলনা রুটে প্রতিদিন কমপক্ষে ১২০টি বাস যাতায়াত করে থাকে। এছাড়াও সড়কটি দিয়ে এতদঞ্চলের উৎপাদিত হাজার হাজার টন চিংড়ি ও মৎস্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে। অথচ দক্ষিণাঞ্চলের জন গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারোরই যেন কোন প্রকার মাথাব্যাথা নেই। সর্বশেষ রাস্তার সংস্কার প্রসঙ্গে পাইকগাছা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর বলেন, গোটাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন অবহেলিত জনপদের জনগুরুত্বপূর্ণ পাইকগাছা-খুলনা প্রধান সড়কের (১৩ কিলোমিটার) সংস্কার কার্যক্রম দেখে প্রশ্ন উঠেছে সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ঠিক কোন দিকে ধক্ষাবিত হচ্ছি আমরা?