জাতীয়

নির্বাচনের আগেই ভর্তি পরীক্ষায় সম্মতি ইসির

By daily satkhira

November 26, 2018

দেশের খবর: ভোটের আগেই সারা দেশের সরকারি হাইস্কুলে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ১ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে আবেদন নেয়া হবে। ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা যাবে আবেদন। ১৭ ডিসেম্বর শুরু হবে ভর্তি পরীক্ষা। শেষ হবে ২০ ডিসেম্বর। ঢাকা মহানগর এবং দেশের অন্যান্য শহর ও জেলা-উপজেলায় এই সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম। শিক্ষার্থী বাছাই শেষ হলে নির্বাচনী কাজে কোনো বিঘ্ন না ঘটিয়ে ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তি কাজ শেষ করা যাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ইসি এই সময়সূচির ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান।

এদিকে রোববার এসব স্কুলে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন স্বাক্ষরিত ওই নীতিমালা অনুযায়ী, এবার স্কুলগুলোতে ১০৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।

এর মধ্যে ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী হবে মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী এবং শিক্ষা বিভাগ কোটায়। বাকি ১০০ শতাংশের মধ্যে ৪০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকা কোটার এবং অবশিষ্ট ৬০ শতাংশ আসন উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় পূরণ করা হবে। ভর্তির ক্ষেত্রে সহোদর বা সহোদরা অগ্রাধিকার পাবে। এক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষার ন্যূনতম শর্ত বা পাস নম্বর পেলেই চলবে। কেবল ষষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তির ক্ষেত্রে মোট আসনের ১০ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণী উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।

ইসি এবং মাউশি সূত্র জানিয়েছে, ২৯ ডিসেম্বর অপরাহ্ন থেকে ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা অবস্থান করবেন। এছাড়া ৭-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৮-২৩ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা আছে। প্রশিক্ষণের জন্যও ভোট কেন্দ্র বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করা হবে। তাই উল্লিখিত দুই প্রশিক্ষণ সিডিউল এবং ভেন্যু বাদে অন্যত্র ও ভিন্নসময়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে ইসির যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অনুমতি দেয়া হয়।

মাউশি পরিচালক বলেন, ‘আমরা ওই চিঠির আলোকেই এখন পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করছি। ১৮-২৩ ডিসেম্বর প্রশিক্ষণের কথা উল্লেখ আছে। তবে মৌখিকভাবে ইসি বলেছে, শুক্র ও শনিবারই সাধারণত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ কারণে ১৭-১৯ ডিসেম্বর পরীক্ষা নিতে কোনো সমস্যা হবে না বলেই মনে হচ্ছে। আর প্রথম শ্রেণীর লটারি স্বল্পপরিসরে হয় বলে তা ২০ ডিসেম্বর নেয়া সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু ভর্তি কার্যক্রমটা ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উৎসবের সঙ্গে জড়িত। তাই এই সিডিউল অনুযায়ী পরীক্ষা না নিলে উৎসব বিঘ্নিত হয়। ইসি এই বিষয়টি ইতিবাচকভাবে গুরুত্ব দিয়েছে।’

এবার ঢাকার ৪১ হাইস্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। হাইস্কুলগুলো তিন গ্রুপে ভাগ করে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ৪১টি হাইস্কুলের মধ্যে ‘ক’ ও ‘খ’ গ্রুপে ১৪টি করে এবং ‘গ’ গ্রুপে ১৩টি হাইস্কুল আছে। এর মধ্যে ৩৮টি হাইস্কুলে ১২ হাজার ৩৬৬টি আসন আছে। এর মধ্যে ১৭ হাইস্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ১ হাজার ৯৬০টি আসন রয়েছে। এছাড়া ২য় শ্রেণীতে ৮৪৯টি, ৩য় শ্রেণীতে ২ হাজার ১২৬টি, ৪র্থ শ্রেণীতে ৮২২টি, ৫ম শ্রেণীতে ৮৪৯টি, ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ৩ হাজার ৫৫৭টি, ৭ম শ্রেণীতে ৭৩৮টি, ৮ম শ্রেণীতে ৯৯৭টি এবং ৯ম শ্রেণীতে ৪৬৮টি আসন রয়েছে।

নতুন প্রতিষ্ঠিত তিনটিতে আলাদা ভর্তি কার্যক্রম চলবে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের আসনসংখ্যা এখন পর্যন্ত ঠিক হয়নি। স্কুল তিনটি হচ্ছে, হাজী এমএ গফুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সবুজবাগ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং শহীদ মনু মিঞা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। প্রথম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী নেয়া স্কুলগুলোর মধ্যে আছে- আজিমপুর গবর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ধানমণ্ডি গভ. ল্যাবরেটরি উচ্চবিদ্যালয়, ধানমণ্ডি গভ. বয়েজ উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমণ্ডি গভ. বয়েজ উচ্চ বিদ্যালয়ের ফিডার শাখা, তেজগাঁও বালক উচ্চবিদ্যালয়, তেজগাঁও বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মতিঝিল বালক উচ্চবিদ্যালয়, খিলগাঁও সরকারি হাইস্কুল, খিলগাঁও সরকারি হাইস্কুলের ফিডার শাখা, নারিন্দা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ সংযুক্ত উচ্চবিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও গণভবন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়।

মাউশি পরিচালক ড. মান্নান বলেন, আবেদন কার্যক্রম পরিচালিত হবে টেলিটকের মাধ্যমে। www.dshe.gov.bd এবং www.teletalk.com সাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। ঢাকা মহানগর এবং ঢাকার বাইরের প্রায় সাড়ে ৩শ’ স্কুলের ভর্তি কার্যক্রম আলাদাভাবে সম্পন্ন হবে। প্রথম শ্রেণীর ভর্তিতে শিক্ষার্থীর বয়স জানুয়ারিতে ছয় বছরের বেশি হতে হবে।

ভর্তি নীতিমালা: সব মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা সদরের সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। উপজেলা সদরেও কেন্দ্রীয় অনলাইন পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক। তবে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কোনো কারণে অনলাইনে না করা গেলে কেবল উপজেলার ক্ষেত্রে ম্যানুয়ালি করা যাবে। দ্বিতীয়-অষ্টম শ্রেণীর শূন্য আসনে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাক্রম অনুসারে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

নবম শ্রেণীর ক্ষেত্রে জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বোর্ডের প্রস্তুত করা মেধাক্রম অনুসারে নিজ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির পর অবশিষ্ট শূন্য আসনে অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নির্ধারিত ভর্তি কমিটির বাছাই করতে হবে। ভর্তির ফরম বিদ্যালয়ের অফিসে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, ডিসি অফিস, বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পূর্ণমান-৫০, এর মধ্যে বাংলা-১৫, ইংরেজি-১৫, গণিত-২০ নম্বর। ভর্তি পরীক্ষার সময় ১ ঘণ্টা। চতুর্থ-অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পূর্ণমান-১০০। এর মধ্যে বাংলা-৩০, ইংরেজি-৩০, গণিত-৪০ নম্বর থাকবে। ভর্তি পরীক্ষার সময় ২ ঘণ্টা।