আসাদুজ্জামান: সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সাব রেজিস্ট্র্রার লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে এবার সরকারি সম্পত্তি (ভিপি) ব্যক্তি মালিকানাধীন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা রেজিস্ট্রি করার অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্বও ফাঁকি দেয়া হয়েছে। আর এ সরকারি জমিটি হচ্ছে শহরের কাটিয়া নারকেলতলা সার গোডাউনের পিছনে স্বর্ণ ব্যবসায়ী দে ব্রাদার্সের মালিক আশুতোষ দের দখলে থাকা তিনতলা বাড়িসহ ২৪ শতক জমি। আশুতোষ দে এই সম্পত্তি শহরের এক ধর্ণাঢ্য স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে বর্তমানে ভারতে বসবাস করছেন। জানা গেছে, সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া মৌজায় নারকেলতলা সার গোডাউনের পিছনে ৩৩ শতক সরকারি জমি রয়েছে। যা বাংলাদেশ সরকারের ২০১২ সালের গেজেটে ১ লাখ ৪৭ হাজার ২’শ ৪১ নম্বর পৃষ্ঠার ১৩ নং সিরিয়ালে ১৩৯৫ খতিয়ানের খাস জমি বলে লিপিবদ্ধ আছে। বর্তমান মাঠ জরিপে এই জমিটি খাস খতিয়ান হিসেবে উল্লেখ আছে। যার খতিয়ান নং ডিবি ১/১। এই ৩৩ শতক জমির মধ্যে জাল মাঠ জরিপ দিয়ে তিনতলা বিশিষ্ট বাড়িসহ ২৪শতক জমি শহরের ধণাঢ্য স্বর্ণ ব্যবসায়ী দ্বীন বন্ধু মিত্রের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। যার দলিল নং ১৩২/২০১৭ সাল। এই জমির বর্তমান বাজার মূল্য ৩ কোটির উর্দ্ধে। অথচ দলিলে মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৯৫ লাখ টাকা। বাড়ির মালিক শহরের নারকেলতলা এলাকার দুলাল চন্দ্র দের ছেলে স্বর্ণ ব্যবসায়ী আশুতোষ দে। আশুতোষের বাড়িটি সরকারি সম্পত্তির উপর নির্মাণ করা বুঝতে পেরে বাড়িটি দ্বীন বন্ধু মিত্রের কাছে বিক্রি করার জন্য মোটা অংকের টাকা বায়না পত্র করেন। এরপর তিনি ভারতে চলে যান। হঠাৎ গত ৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ভোমরা স্থল বন্দর সংলগ্ন লক্ষ্মিদাড়ি সীমান্ত এলাকার এক বাড়িতে এসে আশুতোষ দে তার বাড়িটি দ্বীন বন্ধু মিত্রের নামে রেজিস্ট্র্রি করে দিয়ে তিনি আবারও ভারতে চলে যান। এই জমির দলিল লেখক নাহিদুল ইসলাম জানান, তিনি তার সিনিয়র দলিল লেখক মাহমুদুল হাসান বাটলুর কথামতো ওই দলিলে স্বাক্ষর করেছেন এর বেশি তিনি আর কিছুই জানেন না। তিনি আরো জানান, দলিলটি রেজিস্ট্রি হওয়ার পর তিনি অফিসে গেলে এ বিষয়ে অনেকেই অনেক কিছু তার কাছে বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি খুব দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বলে জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দলিল লেখক ও একজন বড় ব্যবসায়ী জানান, দলিলটি রেজিস্ট্রি করার জন্য কমিশন হিসেবে জায়গা নির্ধারণ করা হয় কাটিয়া নারকেলতলা আশুতোষ দের নিজ বাড়িতে। অথচ সেখানে কমিশন না করে আশুতোষ দে ভারত থেকে এসে ভোমরা স্থল বন্দর সংলগ্ন লক্ষিদাড়ি এলাকার এক বাড়িতে বসে জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। এরপর তিনি আবারও ভারতে চলে যান। তারা আরো বলেন, আর সাব রেজিস্ট্রারকে এ কাজে সহযোগিতা করেছেন বর্তমান দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি। এ ব্যাপারে জানার জন্য দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামানের কাছে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন। সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের প্রধান সহকারী (হেড ক্লার্ক) গোলাম মাওলা বাচ্চু জানান, এ ব্যাপারে আমাকে কোন কিছুই জানানো হয়নি। তিনি কিছুটা আক্ষেপ করে আরো জানান, শুধু এই ব্যাপারটি নয়, অনেক কিছুই আমাকে জানানো হয়না। সাতক্ষীরা সদর সাব-রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমান জানান, আমার কাছে যে সমস্ত কাগজপত্র দাখিল করা হয়েছিল তা সঠিক থাকার কারণে আমি এই জমিটি রেজিস্ট্রি করিয়াছে। দলিলটি রেজিস্ট্রি করার জন্য কমিশন হিসেবে জায়গা নির্ধারণ করা হয় কাটিয়া নারকেলতলার এক বাড়িতে অথচ তা না করে ভোমরা স্থল বন্দর সীমান্ত সংলগ্ন লক্ষিদাড়ি এলাকার এক বাড়িতে বসে জমি রেজিস্ট্রি করলেন কি কারণে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা সঠিক নয়। নারকেলতলার এক বাড়িতে বসে কমিশন করা হয়েছে।