জাতীয়

অবৈধভাবে চাকরি করছেন বিজেএমসির তিন উপদেষ্টা!

By daily satkhira

November 29, 2018

দেশের খবর: বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) তিন উপদেষ্টাকে নিয়ে জটিলতা অনেক দিনের। প্রায় দুই বছর তাঁরা উপদেষ্টা হিসেবে চাকরি করছেন। কোনো প্রকার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এই তিন উপদেষ্টা চাকরি করছেন বলে জানা গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয় তিন উপদেষ্টার চাকরি ‘বৈধ নয়’ বলে মত দিয়েছে। পাশাপাশি তিন উপদেষ্টা বেতন হিসেবে যে টাকা নিয়েছেন তা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক অতিরিক্ত সচিব এ কে নজমুজ্জামান (উৎপাদন ও পাট), যুগ্ম সচিব সিরাজুল ইসলাম (বিপণন) এবং যুগ্ম সচিব বাবুল চন্দ্র রায় (গবেষণা ও মান নিয়ন্ত্রণ) ডেপুটেশনে বিজেএমসির উল্লিখিত বিভাগগুলোতে পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ কে নজমুজ্জামান ২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর, সিরাজুল ইসলাম ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর এবং বাবুল চন্দ্র রায় ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি অবসরে যান। অবসরের তারিখ থেকে হিসাব করে পরবর্তী এক বছর তাঁরা পিআরএলে থাকার কথা। পিআরএলে থাকা অবস্থায় সরকারের সব সুযোগ-সুবিধা তাঁরা ভোগ করবেন—এটাই নিয়ম। তবে ‘উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে’ পাবলিক সার্ভেন্টস রিটায়ারমেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৭৪ অনুযায়ী পিআরএলে যাওয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী দুই বছরের জন্য তাঁদেরকে পরিচালক পদের বিপরীতে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেএমসি, যা পুরোপুরি অবৈধ বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

আইন অমান্য করে, রাষ্ট্রপতি, জনপ্রসাশন ও আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া না মেনে এই তিনজনকে এক দিনের মধ্যে নিয়োগ দেয় বিজেএমসি। ৮০ হাজার টাকা বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাঁদেরকে ২০১৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পরপরই তাঁরা বিজেএমসিতে চাকরি শুরু করেন। তবে বিজেএমসিতে নতুন চাকরি শুরু করলেও তাঁরা পিআরএলে থাকাকালে আগের পদের বিপরীতে সরকারি অর্থ গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ একই সঙ্গে দুই বেতনে এক চাকরি করেন তাঁরা। আইনত যা অবৈধ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে তিন কর্মকর্তার নিয়োগকে অবৈধ বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি তাঁরা যে টাকা বেতন হিসেবে গ্রহণ করেছেন তা আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, পিআরএল ভোগরত অতিরিক্ত সচিব এ কে নজমুজ্জামান, যুগ্ম সচিব সিরাজুল ইসলাম এবং যুগ্ম সচিব বাবুল চন্দ্র রায় বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের গণকর্মচারী (অবসর) আইন ১৯৭৪-এর ৫ ধারা মতে দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মানী গ্রহণ এবং উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগকে বৈধ বলে গণ্য করার সুযোগ নেই।

এ অবস্থায় উল্লিখিত কর্মকর্তাদের সম্মানী ভাতা হিসেবে কী পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছে তা হিসাব করে আদায় করে সরকারি খাতে জমা দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছে। চিঠির অনুলিপি বিজেএমসিকেও পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বিজেএমসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ সবুর বলেন, ‘জনপ্রসাশনের চিঠি আমরা পেয়েছি। তবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিয়ে আমাদেরকে জানাবে। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাইনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘তাঁরা যে প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পেয়েছেন সেটা পুরোপুরি অবৈধ। কারণ নিয়োগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম মানা হয়নি। বিজেএমসির বোর্ড তাঁদের আর প্রয়োজন নেই মনে করছে।’

বিজেএমসি তিন উপদেষ্টাকে নিয়োগ দিলেও এখন মনে করছে তাঁদের আর প্রয়োজন নেই। এ কারণে দুই বছরের চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই চলতি বছরের আগস্ট মাসের ১৬ তারিখে বিজেএমসি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠায়। বিজেএমসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মাহমুদুল হাসান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়, ‘উপদেষ্টা হিসেবে ওই তিন কর্মকর্তাকে বিজেএমসিতে আর রাখার প্রয়োজন না থাকায় চুক্তি বাতিল করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে চুক্তির শর্ত মোতাবেক মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মাস আগে তাঁদেরকে নোটিশ দেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।’ যদিও বিজেএমসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মাহমুদুলের সময়েই নিয়োগটি দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘জনপ্রশাসনের চিঠি আমরা পেয়েছি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। কাজ শেষ হলে আমরা বিজেএমসিকে এ বিষয়ে নির্দেশনা পাঠাব।’