দেশের খবর: চূড়ান্ত বহিষ্কারের হুশিয়ার সত্ত্বেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকতে চান রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ দুই নেতা। তাদের একজন হলেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সদস্য ও সাবেক সভাপতি তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক। অন্যজন হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ।
জানা গেছে, তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক এবার রাজশাহী-৫ ( পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। ফারুকের বাড়ি এই আসনের দুর্গাপুরে। তিনি রাজশাহী-৫ আসনে ( সাবেক আসন নং-৪) ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় টিকিটে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলীয় নেতাকর্মীদের মতে, একাধারে কয়েকবার ইউপি ও দুর্গাপুর উপজেলা চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন ফারুক। ১৯৮৬ সালে রাজশাহী-৫ আসনে দলীয় মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। রাজশাহী-৫ আসনে এবার যে ১০ জন নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন, তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ। রাজশাহী-৫ আসনে তার নিজস্ব ভোটার রয়েছে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ফারুক গত ২৮ নভেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। বিদ্রোহী হলেই দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের ঘোষণা সত্ত্বেও ফারুক বিদ্রোহী হিসেবে ভোটের মাঠে থাকার বিষয়ে এখনও অনড়।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের ডিসেম্বর ও ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনেও তাজুল ইসলাম ফারুককে মনোনয়ন না দিয়ে আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে মনোনয়ন দিয়েছিল দল। দারা এবার মনোনয়ন পাননি। দলীয় সিদ্ধান্ত উপক্ষো করে প্রার্থী হিসেবে থেকে যাওয়া প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক বলেন, তিনিই সবচেয়ে প্রবীণ নেতা। দীর্ঘ চারযুগ ধরে নানারকম চড়াই উৎরাই ও সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে দলকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু তার আসনে একজন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে এবার মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ কারণে তিনি আসনটি ধরে রাখার স্বার্থেই স্বতন্ত্র হিসেবে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এবার রাজশাহী-৫ আসনে এবার জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মনসুর রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিদ্রোহী) হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এই আসনের সাবেক এমপি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ভোটে তিনি বিএনপির প্রভাবশালী নেতা কবীর হোসেনকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দেয়ার বদলে রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তরুণ নেতা আয়েন উদ্দিনকে মনোনয়ন দেয়া হলে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
এদিকে এবারও মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ রাজশাহী-৩ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু দল থেকে আবারও আয়েন উদ্দিনকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গত ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তাজুল ইসলাম ফারুকের মতো মেরাজ মোল্লাহও একাধারে ইউপি ও পবা উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালে এমপি হন। মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহও দল থেকে বহিষ্কারের হুশিয়ারি সত্ত্বেও বিদ্রোহী হিসেবে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকতে চান বলে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ বলেন, পবা উপজেলায় তার নিজস্ব ভোটব্যাংক রয়েছে। তাছাড়া তিনি চান রাজশাহী-৩ আসনে স্থানীয়ভাবে কেউ এমপি নির্বাচিত হোন। এলাকার জনগণের মতামত নিয়েই তিনি শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে লড়ে যেতে চান।
দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বহিস্কার হলেও তিনি প্রার্থী থাকবেন বলে জানিয়েছেন মেরাজ।
এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়েছে। এরপরও যদি তারা প্রার্থীতা নিয়ে ভোটের মাঠে বিদ্রোহী থাকেন তাহলে কেন্দ্রকে অবহিত করা হবে। কেন্দ্র তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।