খেলার খবর: শেষ বিকালে দ্রুত মুশফিককে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। তবে সেই চাপ টের পেতে দিলেন না সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দুর্দান্ত খেললেন তারা। দুজনের মধ্যে গড়ে উঠেছে দারুণ মেলবন্ধন।
ইতিমধ্যে ক্যারিয়ারে ২৪তম ফিফটি তুলে নিয়েছেন সাকিব। ৯৮ বলে ১ চারে এ রান করেন তিনি। তাকে অসাধারণ সঙ্গ দিলেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম দিন শেষে ৫ উইকেটে ২৫৯ রান করেছে বাংলাদেশ। সাকিব ৫৫ রান নিয়ে ক্রিজে আছেন। ৩১ রান নিয়ে সঙ্গী ডেপুটি মাহমুদউল্লাহ। এরই মধ্যে ৬৯ রানের জুটি গড়ে ফেলেছেন তারা।
মিরপুরের উইকেট হচ্ছে স্পিন সহায়ক। প্রথম দিনই বেশ সহায়তা পেয়েছেন স্পিনাররা। সময় যত গড়াবে বল তত টার্ন ও স্কিড করবে। সেই সঙ্গে লাফিয়ে উঠবে ও নিচু হয়ে যাবে। এ অবস্থায় প্রথম ইনিংসে ৪০০ করতে পারলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া যাবে। প্রথম দিন শেষে সেই পথেই আছে বাংলাদেশ। ফলে দিনটি স্বাগতিকদের বলা যায়।
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ১-০তে এগিয়ে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে দাপুটে জয়ের পর ঢাকা টেস্টেও দুর্দান্তভাবে জিতে সিরিজ জয় লক্ষ্য স্বাগতিকদের। এ টার্গেটে খেলতে নেমে টস ভাগ্যকে পাশে পান টাইগার দলপতি সাকিব আল হাসান। প্রথম টেস্টের মতো টস জিতে এ টেস্টেও আগে ব্যাটিং নেন তিনি।
অভিষিক্ত সাদমান ইসলামকে নিয়ে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে নামেন সৌম্য সরকার। কিন্তু ফের ব্যর্থ হন তিনি। প্রথম টেস্টে দুই ইনিংস মিলে করেন মাত্র ১১ রান। ঢাকা টেস্টে সতর্ক শুরু করেন সৌম্য। তবু ব্যর্থতার ঘেরাটোপ থেকে বের হতে পারেননি বাঁহাতি ওপেনার। রোস্টন চেজের বলে শাই হোপকে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ১৯ রানে ফেরেন তিনি।
ওয়ানডাউনে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন মুমিনুল হক। তোলেন দ্রুত রান। বোলারদের ওপর হন ভীষণ চড়া। টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে যে মেজাজ মোটেও যায় না। এর খেসারত গুনেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন। একরকম উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন তিনি। কেমার রোচের করা শর্ট বলটি অনায়াসে ছেড়ে দিতে পারতেন লিটল মাস্টার। কিন্তু পুল করে উড়িয়ে মারতে গিয়ে রোস্টন চেজকে ক্যাচ দিয়ে আসেন। শটটি ছিল ভীষণ দৃষ্টিকটু। যেন তাকে ক্যাচ প্র্যাকটিস করান পয়েট অব ডায়নামো। ফেরার আগে ৪৬ বলে ২ চারে ২৯ রান করেন টেস্ট স্পেশালিস্ট।
পরে সাদমানকে দারুণ সঙ্গ দেন মোহাম্মদ মিঠুন। জমে উঠে তাদের জুটি। তাতে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। তবে সেই রেসটা ধরে রাখতে পারেননি মিঠুন। তিনিও উইকেট ছুড়ে আসেন। দেবেন্দ্র বিশুর বল ক্রস ব্যাটে খেলে বোল্ড হয়ে ফেরেন এ মিডলঅর্ডার। এতে ভাঙে ৬৪ রানের জুটি। ফেরার আগে ২৯ রান করেন তিনি।
একে একে টপঅর্ডারের সবাই ফিরলেও একপ্রান্ত আগলে ছিলেন সাদমান। ধীরে ধীরে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করার দিকে ধাবিত হচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু মিঠুনকে হারিয়ে বেশিক্ষণ ক্রিজে স্থায়ী হতে পারেননি বাঁহাতি ওপেনার। তিনিও সাজঘরের পথ ধরেন। দারুণ খেলতে থাকা এ ব্যাটসম্যান দেবেন্দ্র বিশুর বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন। ফেরার আগে অবশ্য বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় তার নাম লিপিবদ্ধ হয়। দেশের হয়ে অভিষেকে সপ্তম সর্বোচ্চ রান করার কীর্তি গড়েন তিনি। প্রথম ইনিংস বিবেচনা নিলে তৃতীয় সর্বোচ্চ। ১৯৯ বলে ৬ চারে ৭৬ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার।
এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে সাবলীল ছিলেন না মুশফিকুর রহিম। বেশিক্ষণ টিকতেও পারেননি। শারমন লুইসের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে অবশ্য প্রত্যাশিত মাইলফলক স্পর্শ করেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৪ হাজার রান করার কীর্তি গড়েন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।
এদিন ১৪ রান করে ফেরেন মুশফিক। এতে ক্রিকেটের অভিজাত সংষ্করণে তার রান হয় ৩৫.১৪ গড়ে ৪ হাজার ৬ রান। ১২৩ ইনিংসে প্রায় ৪৭ স্ট্রাইক রেটে এ রান সংগ্রহের পথে ৬ সেঞ্চুরি ও ১৯ ফিফটি হাঁকান তিনি। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস টাইগারদের হয়ে রেকর্ড ২১৯*।
এর আগে এ নজির স্থাপন করেন তামিম ইকবাল। ৫৬ ম্যাচে ১০৮ ইনিংসে ৩৭.৮৪ গড়ে ৪ হাজার ৪৯ রান করেন তিনি। ৫৫.৩২ স্ট্রাইক রেটে এ রান করার পথে ৮ সেঞ্চুরি ও ২৫ হাফসেঞ্চুরি হাঁকান ড্যাশিং ওপেনার। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ২০৬।