জাতীয়

সালমান বনাম সালমা: লড়াইটা শুধু রাজনৈতিক নয়!

By daily satkhira

November 30, 2018

অনলাইন ডেস্ক: ঢাকা-১ নির্বাচনী আসনটা গঠিত হয়েছে দোহার আর নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে। ২০০৮ সালের আগে এই দুই উপজেলা দুটি ভিন্ন ভিন্ন আসনে ছিল, তবে সীমানা পুনর্বিন্যাসের পর এই দুটি উপজেলা ঢাকা-১ আসনের অন্তর্ভূক্ত হয়৷ এই আসনটিকে ধরা হচ্ছে এবারের নির্বাচনের সবচেয়ে হেভিওয়েট আসনগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে৷ সবচেয়ে ধনী আসনও বলা চলে এটাকে। প্রার্থীদের নামের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন কেন এটা বলা হচ্ছে৷ আওয়ামী লীগ থেকে এই আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমানকে৷ অন্যদিকে এই আসনের বর্তমান সাংসদ এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামও লড়বেন এই আসনে। সালমা ইসলাম নিজে যুগান্তর পত্রিকার প্রকাশক, তার স্বামী হচ্ছেন বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং যমুনা গ্রুপের মালিক নুরুল ইসলাম বাবুল। কাজেই এই আসনের লড়াইটাকে শিল্পপতিদের লড়াই বললেও ভুল হবে না তেমন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকেট পেয়েছিলেন আবদুল মান্নান খান৷ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মন্ত্রীও হয়েছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তাকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল, তবে সেবার তিনি প্রায় পাঁচ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির সালমা ইসলামের কাছে৷ এবার আবারও আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া আওয়ামী লীগ, আর সেকারণেই হয়তো মহাজোটের অংশীদার হবার পরেও সালমা ইসলামের হাতে না ছেড়ে সালমান এফ রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি৷

তবে জাতীয় নির্বাচনে সালমান এফ রহমানের অতীত অভিজ্ঞতা কিন্ত খুব একটা সুখকর নয়৷ ২০০১ সালে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন তিনি, প্রতিপক্ষ ছিলেন বিএনপির ব্যারিস্টার নাজমুক হুদা৷ দুজনের মধ্যে আবার আত্মীয়তার সম্পর্কও আছে৷ সেবারের নির্বাচনে তিন হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন সালমান এফ রহমান৷ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসার আগে নিজের গড়া ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আন্দোলন’ থেকে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ধানমণ্ডি এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও জামানত হারিয়েছিলেন সালমান।

ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতার হয়েছিলেন সালমান এফ রহমান, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে জেল থেকে মুক্তি পান এই ব্যবসায়ী। এর পর থেকেই ধীরে ধীরে জাতীয় রাজনীতিতে দেশের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হন সালমান এফ রহমান। মনোনীত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উপদেষ্টা প্যানেলে। নিয়োগ পান শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনোয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে।

তবে এসবের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগও আছে৷ বিশেষ করে শেয়ার বাজার ধ্বসের পেছনে তার হাত রয়েছে বলে দেশের অধিকাংশ মানুষের ধারণা৷ তাকে শেয়ার বাজারের ‘দরবেশ বাবা’ বলেও অভিহিত করেন অনেকে। এর আগে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়টায় যখন শেয়ার বাজার এমন দরপতনের শিকার হয়েছিল, তখনও সালমান এফ রহমান ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্বে।

দুই দফায় শেয়ার বাজার ধ্বসের পেছনেই তার প্রত্যক্ষ সংযোগ রয়েছে বলে মনে করেন ক্ষতিগ্রস্থদের অনেকেই। নিজের কোম্পানীর শেয়ারের দাম বাড়িয়ে দিয়ে তিনি বাজারে একটা অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ আছে। লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীর সর্বশান্ত হয়ে যাওয়ার পেছনে তার ভূমিকাটাই সবচেয়ে বেশি, এরকম দাবী করেন অনেকেই। শেয়ার বাজারের টাকা দিয়েই সালমান এফ রহমান দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন- এমন ধারণা পোষণ করেন অনেক মানুষ। সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকার কারণেই তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে- এরকম অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। খোদ আওয়ামী লীগের মধ্যেই অনেকে মনে করছেন, সালমান এফ রহমানকে মনোনয়ন দেয়ায় সমালোচনা হবে, উঠবে প্রশ্নও।

ঢাকা-১ আসনের বর্তমান সাংসদ সালমা ইসলাম ২০১৪’র আগে জাতীয় রাজনীতিতে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছিলেন না৷ তবে সেই নির্বাচনে জয়লাভ করেই হইচই ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। আগের নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন করেছিল, আসন বন্টনের সময় ঢাকা-১ আসনটা উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল সেবার। এবার মহাজোট থাকলেও আওয়ামী লীগ এখানে একক প্রার্থী দিয়েছে, পিছিয়ে যাবেন না সালমা ইসলামও, তিনিও নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং জয়লাভের ব্যাপারে আশাবাদী।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, ঢাকা-১ আসনের নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বীতাটা কিন্ত শুধু সালমান এফ রহমান এবং সালমা ইসলামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই আর৷ এটা এখন বেক্সিমকো বনাম যমুনা গ্রুপের প্রতিদ্বন্দ্বীতাও। সালমান এফ রহমানের মালিকানায় যেমন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের মতো টিভি চ্যানেল আছে, সালমার হাতেও আছে যুগান্তরের মতো পত্রিকা, আর যমুনা গ্রুপের চ্যানেল যমুনা টিভিও তো তার স্বামী নুরুল ইসলাম বাবুলের মালিকানাধীন৷ কাজেই লড়াইটা একপেশে হচ্ছে না মোটেও৷

বাংলাদেশের নির্বাচনে টাকাপয়সার ছড়াছড়িটা নতুন কিছু নয়। নির্বাচনে জয়ের জন্যে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়ে আসছে সেই আশির দশক থেকেই, কালো টাকার আধিপত্য তো আছেই৷ ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে আসার পরে সেটার প্রভাব আরও বেড়েছে। বাংলাদেশের সেরা দুই ধনকুবের গোষ্ঠী যখন এক আসনে জয়ের জন্যে যুদ্ধে নামে, তখন সেখানে টাকার ঝনঝনানি শোনা যাবে না, এটা তো অবাস্তব কল্পনা৷ কে জানে, ঢাকা-১ আসনের ভোটারেরা সেসবের আঁচ কতটা টের পাচ্ছেন!