সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় খেজুর গাছের রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা

By daily satkhira

December 12, 2018

জি.এম আবুল হোসাইন : মনে করিয়ে দেয় সেই অঞ্চল বিখ্যাত সঙ্গীত- খিলে ধুয়ে দে বৌ গাছ কাটতে যাব, খেজুর গাছে চুমরি বারুইছে তোরে আনে দেব। সাতক্ষীরার সর্বত্র এলাকা জুড়ে খেজুর গাছ উঠানোর কাজে অতি ব্যস্থতার মধ্যে সময় অতিবাহিত করছেন গাছিরা। সাধারণত নভেম্বরের শেষের দিকে আর ডিসেম্বর শুরুর সময়ে শীতের আগমনীর মধ্য দিয়ে গাছিরা তাদের গাছ পরিচর্চা করতে শুরু করেছে। অবিরাম ছুটে চলেছেন এমাঠ হতে ও মাঠ, ক্ষেতের আইল আবার রাস্তার ধারে দন্ডায়মান থাকা খেজুরগাছগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করার কাজে। প্রায় ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৪ মাসের অধিক সময় ধরে গাছিরা তাদের রস বের করার কাজে ব্যস্থ থাকে। একাজে শুধুমাত্র গাছিদেরই ব্যস্থতা বাড়ে না, ব্যস্থতা বেড়ে যায় গাছ মালিকের বাড়ির অন্যান্য লোকেরও। রসের ভাঁড় গুলো পরিষ্কার করে ধুয়ে দেয়া। তারপর শুকানো। অতঃপর পাত্রে রাখা রসটি যেন ঘোলাটে না হয় সেজন্য পাত্রগুলো সারিবদ্ধভাবে উঠানে রেখে তাতে আগুন দিয়ে ভালোভাবে জ্বালানো। তারপর সেগুলো গাছে পেতে রাখার জন্য মাঠে কিংবা যথাস্থানে পৌছে দেয়া। ভাদড়া গ্রামের রিজাউল ইসলাম জানান, এবছর গাছের সংখ্যা খুবই সীমিত। গাছ প্রতি ১’শ টাকার নিচে রাখা যাবে না। এবছর গাছের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় উঠানোর সংখ্যা অনেক কম, যা ভাঁড় প্রতি রস বিক্রি ৮০ থেকে ১০০ টাকা করে না নিলে গাছ মালিকেরও খুব বেশি লাভ হবে না। একথা বলতেই যেন বাল্যকালের কথা মনে করিয়ে দিল গাছি। দেখা যেত মাঠের পর মাঠ অসংখ্য খেজুর গাছ। গাছের বুকে ভাঁড় পেতে রাখলে পাটখড়ি দিয়ে চুরি করে মাঠ থেকে রস খাওয়ার মজাটাই যেন অন্যরকম। অতি ভোরবেলা গাছ থেকে রসের ভাঁড় এনে কনকনে শীতে গ্লাস ভর্তি রসের স্বাদ যেন সত্যিই তৃপ্তিদায়ক। পরে পরিবারের সবাই রস খেয়ে ব্যারেলে অথবা কড়াই করে রসগুলো জ্বালানো হতো। তা থেকে গুড়ে পরিণত করে খেজুরের পাটালি বানানো হতো। ব্যারেলের গায়ে লেগে থাকা শেষাংশের সামান্য গুড় যেন হুমড়ি খেয়ে সেগুলো উঠিয়ে নিত স্থানীয় শিশু ও বৃদ্ধরা। সারাবাড়ি রসের ও পাটালির মৌ মৌ গন্ধে ভাঁড় ভর্তি করে রাখা গুড় একসময় মিশ্রির (দানা) পড়ে যেত। সকাল বেলা নারকেল কোরা আর দানা মিশ্রিত গুড় দিয়ে পানতা ভাত যেন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বহন করে।

বাংলাদেশ বেতারের কবি ও নাট্যকার ডা. মো. সামছুজ্জামান বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব, লবণ পানির আগ্রাসন ও জ্বালানি হিসেবে ইট ও টালি পোড়ানোর কাজে অবাধে খেজুর গাছ ব্যবহারের ফলে মারাত্মকভাবে কমে যায় খেজুরগাছ। বর্তমানে বসতবাড়ি কিংবা  রাস্তাঘাটের পাশেও দেখা মিলে না খেজুরগাছের। অনেকটাই বিলপ্তির পথে পরিবেশবান্ধব গুরুত্বপূর্ণ এ গাছ। এক সময় রস সংগ্রহ করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করলেও বেশির ভাগই ছেড়ে দিয়েছেন এ পেশা। দু’একজন এখনো ধরে রেখেছেন। বলাডাঙ্গা, ছয়ঘরিয়া, মাধবকাটি, ঝাউডাঙ্গা সহ বিভিন্ন এলাকার একাধিক গাছিরা জানান, শীত কম থাকায় এখনো রস বেশি মিলছে না। শীত বাড়লে রসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

জ্বালানি কাঠ হিসেবে ইট ও টালি কারখানায় পোড়ানো বন্ধ করা হলে পরিবেশ বান্ধব খেজুর গাছ সংরক্ষণ সহজ হবে বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।