বিদেশের খবর: ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের এক আস্তানায় দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানে তিন বিদ্রোহীর প্রাণহানির পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে। বিক্ষোভকারীদের হটাতে পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে অন্তত সাত বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে। এর আগে শনিবার সকালের দিকে ওই অভিযানের শুরুতে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক সেনাসদস্য নিহত হয়।
স্থানীয় হাসপাতালের কর্মকর্তা ও পুলিশ বলছে, শনিবারের এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত এক সেনাসদস্য, তিন বিদ্রোহী ও সাত বেসামরিকের প্রাণহানি ঘটেছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের দক্ষিণাঞ্চলের পুলওয়ামা এলাকার একটি বাড়িতে বিদ্রোহীরা লুকিয়ে ছিল। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই বাড়ি ঘেরাও করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। কাশ্মিরের পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সোম প্রকাশ পানি ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘সংঘর্ষে সেনাবাহিনীর সাবেক এক সদস্য; যিনি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলেন, তিনি-সহ তিন বিচ্ছিন্নতাবাদী নিহত হয়েছে। গোলাগুলির সময় নিরাপত্তাবাহিনীর এক সদস্যও মারা গেছেন।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ওই বাড়িতে সংঘর্ষ চলাকালীন শত শত গ্রামবাসী তীব্র শীত উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে বাড়িটির দিকে অগ্রসর হতে থাকেন এবং নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, একটা গোলমাল হয়েছে। সেনাবাহিনীর গুলিতে ছয় বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। তবে স্থানীয় একটি হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলেছেন, গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর মারা গেছেন।
আন্তর্জাতিক একটি পর্যবেক্ষক গ্রুপ বলছে, ২০০৯ সালের পর চলতি বছরে কাশ্মিরে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালে জম্মু-কাশ্মিরে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে দেড়শ বেসামরিক নাগরিক-সহ প্রায় ৫৫০ জন নিহত হয়েছে।
নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, চলতি বছরে ২৩০ জন বিদ্রোহীকে হত্যা করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই কাশ্মির উপত্যকার স্থানীয় বাসিন্দা। তবে প্রতিনিয়ত কাশ্মিরের বিদ্রোহী গোষ্ঠীতে নতুন নতুন সদস্য নিয়োগ করা হচ্ছে।
২০১৬ সালে কাশ্মিরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জনপ্রিয় এক নেতার প্রাণহানির পর বিদ্রোহীদের প্রতি কাশ্মিরের জনগণের সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় হাজার হাজার গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর ভারত পাকিস্তান বিভক্ত হয়। তখন থেকেই কাশ্মির দ্বিখণ্ডিত। দুই দেশের মাঝে অবস্থিত হিমালয় অঞ্চলের কাশ্মিরকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে ভারত-পাকিস্তান।
কাশ্মিরের স্বাধীনতা অথবা পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে আসছে বিদ্রোহীরা। তবে ভারত সরকার কাশ্মিরকে তাদের ভূখণ্ড দাবি করে ওই অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য প্রায় ৫ লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন রেখেছে। ১৯৮৯ সালের পর থেকে কাশ্মিরে অন্তত ৭০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে; এদের অধিকাংশই বেসামরিক। সূত্র : এএফপি।