আন্তর্জাতিক

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আরেকবার শপথ নিলেন বিক্রমাসিংহে

By daily satkhira

December 17, 2018

বিদেশের খবর: শ্রীলঙ্কায় ‘প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায়’ আরেকবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। গতকাল রবিবার প্রেসিডেন্ট মাইত্রিপালা সিরিসেনা তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান। এই সিরিসেনাই মাস দুয়েক আগে তাঁকে বরখাস্ত করেছিলেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে দেশটি রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট নিরসনের দিকে যাত্রা শুরু করল। তবে ক্ষমতার লড়াই বন্ধ হলেও সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহের মধ্যকার তিক্ত সম্পর্ক এখনো রয়েই গেছে।

গতকাল কলম্বোতে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে এক রুদ্ধদ্বার অনুষ্ঠানে শপথ নেন বিক্রমাসিংহে। নীতিগত মতপার্থক্যের কারণে গত ২৬ অক্টোবর তাঁকে সিরিসেনা বরখাস্ত করেছিলেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে। কিন্তু বিক্রমাসিংহে বরখাস্তের আদেশ অমান্য করলে দেশটি গভীর রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকটে পড়ে যায়; অকার্যকর হয়ে পড়ে সরকারব্যবস্থা।

পার্লামেন্টে অবশ্য বিক্রমাসিংহের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। আস্থা ভোটে ছয়-ছয়বার তিনি রাজাপক্ষেকে পরাজিত করেন। কিন্তু রাজাপক্ষে সেই আস্থা ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রীর পদ আঁকড়ে থাকেন। অন্যদিকে সিরিসেনা পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন। সুপ্রিম কোর্ট আবার সিরিসেনার এই সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানি বলে রায় দেন। সব মিলিয়ে একটা গভীর সংকটে পড়ে দেশটি। এমনকি এখন পর্যন্ত নতুন বাজেটও পাস হয়নি।

এ অবস্থায় গত শনিবার রাজাপক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলে আশার আলো দৃশ্যমান হয়। আর গতকাল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিক্রমাসিংহে শপথ নিলে আরো খানিকটা উজ্জ্বল হয় সেই আশার আলো।

গতকালের শপথ অনুষ্ঠানেও অবশ্য বিক্রমাসিংহের সঙ্গে সিরিসেনার তিক্ততা ফুটে ওঠে। বিশেষ করে সাংবাদিকদের শপথ অনুষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেননি সিরিসেনা। ফলে শপথ অনুষ্ঠানের বিষয়টি গণমাধ্যম নিশ্চিত হয় বিক্রমাসিংহের দলের এক টুইটার বার্তার মাধ্যমে। ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) ওই বার্তায় বলা হয়, ‘অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যাঁরা লড়াই করেছেন, তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

বিক্রমাসিংহের এক মুখপাত্র জানান, কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে, যেখানে সবচেয়ে প্রাধান্য পাবে ২০১৯ সালের বাজেট প্রণয়নের বিষয়টি।

এদিকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানো রাজাপক্ষে বলেছেন, আগামী স্থানীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তিনি আবারও ক্ষমতার লড়াইয়ে আবির্ভূত হবেন। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে যাঁরা আমাদের সমর্থন জুগিয়েছেন, ভবিষ্যতেও তাঁরা যে আমাদের সঙ্গে থাকবেন, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা এই সমর্থন নিয়েই অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে ক্ষমতার লড়াইয়ের ইতি ঘটলেও দেশটির সামনে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্চ রয়েই গেছে। বিশেষ করে ৫১ দিনের রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে অনেক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই শ্রীলঙ্কার ব্যাপারে অনীহা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া বন্ড হোল্ডারদের ১৫০ কোটি ডলার আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে সরকার ফিরিয়ে দিতে পারবে কি না, তা নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনাকে নিয়েও নতুন করে জটিলতা তৈরি হতে পারে। কয়েক দিন আগে তিনি দাবি করেন, তাঁকে হত্যার ছক কষা হয়েছিল। সিরিসেনার এই দাবি বানোয়াট কি না, তা তদন্ত করার দাবি তুলেছে বামপন্থী দল ‘পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট’ (জেভিপি)। প্রয়োজনে সিরিসেনার বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরুর কথাও বলছে তারা।

সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ও সিরিসেনার জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। গত বুধবার আদালত বলেন, ‘গত ৯ নভেম্বর পার্লামেন্ট বিলুপ্তি করে এবং আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে সিরিসেনা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।’ সূত্র : এএফপি।