স্বাস্থ্য কণিকা: প্রতিদিন না হলেও অধিকাংশ দিনই খাদ্যতালিকায় দু-তিনটি কাঁচা ডিমের কুসুম কিন্তু দারুণ উপকারী। ডিম বা ডিমের কুসুম কাঁচা অবস্থায় খাওয়ার নাম শুনলে অবশ্য অনেকেরই ভ্রু কুঁচকে ওঠে। কিন্তু এর অঢেল উপকারিতা সম্পর্কে জানলেই বুঝতে পারবেন- কাঁচা ডিমের কুসুমের কথা শুনে ভ্রু কোঁচকানোটা নিতান্তই একটি সামাজিক অভ্যাস।
চর্বিকে দ্রবিভূত করতে পারে এমন ভিটামিনের পরিমাণ ডিমের কুসুমে অনেক বেশি। ভিটামিন এ, ডি, ই, আর কে-তে পরিপূর্ণ ডিমের কুসুম। দেহের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন বি৬ ও বি১২’র ঘাটতিতে অনেকেই ভুগে থাকেন, যা পূরণ করতে পারে ডিমের কুসুম। এছাড়া ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, প্রয়োজনীয় হরমোন-ভিটামিন ডি-নিউরোট্রান্সমিটার (স্নায়ুকেন্দ্রিক এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান) তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ কোলেস্টেরল, ওমেগা-থ্রি ডিএইচএ’র মতো গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি এসিড তো প্রচুর পরিমাণে রয়েছেই; যকৃত, মস্তিষ্ক আর ত্বকের জন্য ভীষণ উপকারী লেসিথিনেরও দারুণ উৎস ডিমের কুসুম।
কেন খাবেন কাঁচা ডিমের কুসুমডিমের কুসুমে কাঁচা অবস্থায় যে পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকে, তাপের সংস্পর্শে এলে তার প্রায় সবটাই নষ্ট হয়ে যায়। এসব পুষ্টি উপাদান আমাদের দেহের কাজে লাগানোর জন্য জরুরি উৎসেচকগুলোর কার্যক্ষমতাও নষ্ট হয়ে যায়। তারপরও রান্না করা ডিমের কুসুম পুষ্টির এক অনন্য উৎস। কিন্তু একমাত্র কাঁচা খেলেই ডিমের কুসুমের পুষ্টি উপাদান সম্পূর্ণ পাওয়া সম্ভব। বিপাকক্রিয়ার জন্য কাঁচা ডিমের কুসুমের চাইতে ভালো আর কিছু হয়ই না। ডিমে অ্যালার্জি আছে যাদের, কাঁচা ডিমের কুসুমে তাদের মধ্যেও কোনোরকম স্পর্শকাতরতা দেখা যায় না।
তারপরেও কাঁচা ডিমের কুসুমের স্বাদের কথা শুনে যারা আঁতকে উঠছেন, তাদের জন্য সুখবর হলো- একেবারে আস্ত কাঁচা ডিমই যে খেতে হবে, এমন কোনো শর্ত নেই। কয়েকটি কাঁচা ডিমের কুসুম ফেটিয়ে প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টত্ব আনতে কাঁচা মধু যোগ করতে পারেন। ঠাণ্ডা এ খাবারটি খানিকটা মিল্কশেক বা আইসক্রিমের মতোই খেতে লাগবে! আর মিল্কশেক বা আইসক্রিম খেতে পছন্দ করেন না, পৃথিবীতে এমন মানুষ বিরল। আরো স্বাদ আনতে চাইলে এর সঙ্গে রাসায়নিকবিহীন চিনাবাদামের মাখনও যোগ করতে পারেন।
তবে ডিমের সাদা অংশ কাঁচা খেলে উপকারের বদলে অপকারেরও আশঙ্কা আছে বলেই মত পুষ্টিবিদদের। কারণ এতে পুষ্টিগুণবিরোধী নানা উপাদান ও উৎসেচক থাকে, যা বিপাকক্রিয়াকে সমস্যায় ফেলতে পারে। এসব উপাদান রান্না করা ডিমে নষ্ট হয়ে গেলেই ভালো।
তবে কাঁচা ডিমের কুসুম খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে স্যালমোনেলা ব্যাক্টেরিয়ার কারণে। কিন্তু জেনে রাখা ভালো, প্রতি ৩০ হাজার ডিমের একটিতে এ সমস্যার আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন তিনটি করে কাঁচা ডিমের কুসুম খেলেও একটি স্যালমোনেলার সংস্পর্শে আসতে ২৭ বছর লেগে যাওয়ার কথা। অবশ্য জীবন পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করে না, কিন্তু কাঁচা ডিমের কুসুম খাওয়ার ভয় তাড়ানোর এটি একটি ভালো যুক্তি তো বটেই। আর বিশুদ্ধ উৎস থেকে সংগৃহীত ডিম, অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও উপায়ে বেড়ে ওঠা মুরগির ডিমে স্যালমোনেলার আশঙ্কা আরো কম।
তাছাড়া ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া থেকে রক্ষার জন্য আমাদের দেহেই রয়েছে নিজস্ব ব্যবস্থা। সারাক্ষণই দেহে দূষিত ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চলছেই, স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হলে যা আরো বেশি কার্যকর হয়। সেক্ষেত্রেও স্যালমোনেলার আশঙ্কা কমে যায়।
আর তাজা ডিমে স্যালমোনেলা থাকার আশঙ্কা আরো কম। ডিম তাজা কিনা, তা বুঝতে হলে একে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে দেখুন যে কোনো দাগ দেখতে পান কিনা। দাগ না থাকলে একে মেঝেতে গড়িয়ে যেতে দিন, দেখুন যে ডিমটি সোজা না গড়িয়ে এলোমেলোভাবে গড়াচ্ছে কিনা। এলোমেলোভাবে গড়ানো দেখতে পেলে এবার ডিমটি ভাঙুন এবং সাদা ও হলুদ অংশ লক্ষ্য করুন, দেখুন যে দু’টো অংশই একদম আলাদা রয়েছে কিনা। মিশে না গেলেই সমস্ত পরীক্ষাতে পাশ করে গেল ডিমটি। আর কোনো একটি পরীক্ষার ফলই অন্যরকম হলে অস্বস্তি নিয়ে ডিমটি খাওয়ার একদমই প্রয়োজন নেই।
তাহলে এবার কাঁচা ডিমের কুসুম খাওয়ার জন্য প্রস্তুত তো!