দেশের খবর: ভেতরে-বাইরে নানা আলোচনা থাকলেও শেষ দিন পর্যন্ত নির্বাচনে টিকে থাকার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট কঠোর অবস্থান ধরে রাখতে চায়। বিরোধী জোটকে তারা কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়, বরং কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায় পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ আরো জোরদার করার চেষ্টা চালাবে ক্ষমতাসীনরা। দুই জোটের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে দলগুলোর এমন অবস্থানের কথা জানা গেছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয়নি। তা সত্ত্বেও তাঁরা শেষ মুহৃর্ত পর্যন্ত ভোটের মাঠে টিকে থাকার চেষ্ট করবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করছেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ পুরোপুরি বিরাজ করছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও পুলিশ প্রশাসনেরও একই মত।
নির্বাচনের আর মাত্র ৯ দিন বাকি থাকলেও সারা দেশে বিএনপির প্রার্থীরা এখনো প্রচারে নামতে পারেননি বলে দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। তাদের দাবি, তফসিল ঘোষণার পর সারা দেশে বিএনপির আড়াই হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০টি আসনে বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। আর বিভিন্ন মামলায় কারাগারে গেছেন দলটির ১৫ জন প্রার্থী। এসব ঘটনায় বিএনপি জোটের নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে এমন আলোচনাও হচ্ছে যে পরিবেশের উন্নতি না হলে নির্বাচনে টিকে থাকা কঠিন হবে বিএনপি ও এর মিত্রদের পক্ষে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে নির্বাচনে এজেন্ট দেওয়ার মতো কর্মী পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে বিএনপিতে। কেউ কেউ বলছে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে নির্বাচনের দিনও ভোটারদের কেন্দ্রে নেওয়া যাবে না। সরকারবিরোধী মনোভাব থেকে নির্বাচনের দিন বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হবে—এমন ধারণা থেকে দলটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বলে জানা যায়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচনে টিকে থাকার জন্যই আমরা অংশ নিয়েছি এবং শেষ দিন পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে টিকে থাকব।’ কিন্তু বিএনপি ও তাদের জোটের নেতাকর্মীদের সরকার মাঠে নামতে দিচ্ছে না—এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণ এবং বিদেশিরাও দেখতে পাচ্ছে এ দেশে কী ঘটছে। তবু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হয়—এমন কিছু আমরা করব না।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ মনে করেন, দেশে ভালো নির্বাচনের পরিবেশ পুরোপুরি বিরাজমান এবং সরকার ও নির্বাচন কমিশন এ অবস্থা ধরে রাখার চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি তো এর আগে বলেছে নির্বাচন কমিশন ভালো কাজ করেছে। কিন্তু এখন আবার তাদের কী হলো!’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নেই—এমন অভিযোগ করা বিএনপির পুরনো অভ্যাস। এর কোনো সত্যতা নেই। তাদের প্রচারে কেউ বাধা দিচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন বজায় রাখবে বলে আওয়ামী লীগ আশা করে।
বিএনপির একাধিক প্রার্থী জানান, তাঁরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশে নির্বাচনে অংশ নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, শেষ পর্যন্ত দলের কৌশল কী হবে সে বিষয়েও তাঁরা অন্ধকারে আছেন। শেষ দিনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হবে কি না—এমন আলোচনা ও গুঞ্জন বিএনপির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছড়িয়েছে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, সারা দেশে ব্যাপক গ্রেপ্তার এবং অনেকের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় জনমনে নানা গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের মাঠ ছাড়বে না। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে টিকে থাকা ছাড়া আমাদের সামনে অন্য কোনো অপশন নেই।’ নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুুর রহমান মান্না বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে আছি। মাঠ ছাড়ার চিন্তা করিনি। তবে সরকার আরো কঠোর অবস্থান নিলে কী করব জানি না।’
এদিকে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র দলগুলো পরিবেশ নিয়ে স্বস্তিতে থাকলেও নির্বাচনী মাঠ দখলে রাখার বিষয়ে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তারা মনে করছে, নির্বাচনী এলাকা দখলে রাখার পাশাপাশি প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও কোনো ঢিলেঢালা ভাব দেখানো যাবে না। এ জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদেরও সক্রিয় রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের টার্গেট হলো অন্তত ২০০ আসনে জয়লাভ করা। তবে প্রশাসনিক ব্যবস্থার বাইরে রাজনৈতিকভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে না পড়ার নির্দেশনা রয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের।