মোস্তাফিজুর রহমান: সাতক্ষীরা সদরের ফিংড়ী ইউনিয়নের গ্রাম্য ডাঃ এনামুল হক (৫২) সুদখোর ও এনজিও’র অত্যাচারে অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন। ঘটনাটি ঘটেছে, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হাবাসপুর গ্রামে। জানাগেছে, তার বেড রুমের ফ্যানের সিলিং এর সাথে রশ্মি বেধে গলায় ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। ঘটনার সময় তার স্ত্রী হামেদা খাতুন রান্না ঘরে রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। রান্না ঘর থেকে ফিরে এসে তিনি তার স্বামীকে ফ্যানের সিলিং এর সাথে ঝুলতে দেখে চিৎকার দিলে আশ পাশের লোকজন এসে তাকে নিচে নামানোর আগেই তার মৃত্যু হয়। জানাগেছে, হাবাসপুর গ্রামের গ্রাম্য ডাঃ মৃত নিছার উদ্দীনের পুত্র এনামুল হক পারিবারিক অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে কয়েক বছর ধরে সুদে কারবারি ও বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নেন। সুদেকারবারিদের চড়া সুদের টাকা এবং এনজিওর কিস্তি সময় মত দিতে ব্যর্থ হলে তারা তাকে বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ ও হুমকি ধামকি দিতে থাকে। সুদের টাকার জোগাড় দিতে না পেরে মান সম্মানের ভয়ে ২ মাস পূর্বে তিনি ঢাকায় চলে যান। পরিবার সূত্রে জানাগেছে, অত্যাচার ও অপমান না করার প্রতিশ্রুতিতে স্থানীয়দের সহায়তায় পাওনাদারদের টাকা পর্যায় ক্রমে দেয়ার ওয়াদা নিয়ে কিছু দিন আগে তিনি বাড়িতে আসেন। কিন্তু বাড়িতে আসার পরে কয়েকটি এনজিও’র টাকা পরিশোধ এবং সুদে মহাজনদের সুদের টাকা কম বেশি দিতে থাকেন। তার স্ত্রী হামেদা খাতুন জানান, বুধহাটা ইউনিয়নের শ্বেতপুর গ্রামের নুর ইসলাম ও তার মেয়ে রেশমা খাতুনের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় কয়েক দিন পূর্বে বাড়িতে এসে আমি সহ আমার স্বামীতে মারধর করতে আসে এবং সময় মত টাকা পরিশোধ করতে না পারলে ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে যান। একই ইউনিয়নের নওয়াপাড়া গ্রামের আবু বক্করের পুত্র আলাউদ্দীন কিছু দিন আগে বুধহাটা বাজার হতে তার সাইকেল কেড়ে নেয় বলে জানান স্থানীয়রা। এছাড়া আত্মহত্যার আগে তার লিখে রেখে যাওয়া সুদখোরদের নামের তালিকা ও তাদের আসলসহ সুদের তালিকার আলাউদ্দীন, ইউনুচ, কাওয়াল, আসলাম, তরিকুল, কাঁকড়া মামা, ছোট ময়না, কাকুলী, রোকেয়া, রিবা, কাকুলির জামাই, নুর ইসলাম, বেল্লাল, খলিল নওয়াপাড়া এদের অনেকেই প্রায়ই তার স্বামীর চেম্বারে গিয়ে রুগিদের সামনে মান অপমান এমনকি জামার কলার ধরেছে। পুলিশ ঘটনা স্থান পরিদর্শন করেছেন। সুরত হাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহতের পরিবার থেকে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো বলে জানিয়েছে। সচেতন মহলের দাবী চড়া সুদের জ্বালে জড়িয়ে বিভিন্ন এলাকায় আত্মহত্যা প্রবনতা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। আশাশুনি সদরের ধান্যহাটি গ্রামের রশিদ সরদারের স্ত্রী নাজমা খাতুন, বুধহাটা এলাকার শতাধিক সুদখোর ও আশপাশের এলাকার সুদখোরদের দৌরত্ব রুখে দেয়ায় দায়িত্ব কার? এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বহু সাধারন মানুষ। সাবেক সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মঞ্জুরুল কবিরের চেষ্টায় সাতক্ষীরা থেকে চড়া সুদে কারবার ওঠে গেলেও সম্প্রতি আবারও তারা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেছে চক্রটি। সুদের জ্বালে জড়িয়ে আরও একটি জীবনের সমাপ্তি ঘটনার আগে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বিষয়টি আমলে নিয়ে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন এমনটি প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।