দেশের খবর: আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, শান্তি, নিরাপত্তা এবং দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিন। আমরা আপনাদের উন্নত জীবন দেব। নৌকা মানেই স্বাধীনতা, সমৃদ্ধি, জনগণের ভাগ্যবদল ও কল্যাণ, যার শুভফল মানুষ ভোগ করছে। আর ধানের শীষ মানেই দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ, জঙ্গিবাদের সৃষ্টি। আগামীতে ক্ষমতায় গেলে দেশ গড়তে তরুণদের মেধা কাজে লাগাবো। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ফ্ল্যাট করে দেব। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
শুক্রবার রাজধানী গুলশানের ইয়ুথ ক্লাব মাঠে আয়োজিত এক বিশাল নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ব্যাপক জনসমাগমে জনসভাটি রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বিকাল সাড়ে ৩টায় জনসভার সময় নির্ধারণ ছিল। কিন্তু সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ জনসভাস্থলে আসতে থাকে।
দুপুর ২টার মধ্যে জনসভাস্থল লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। স্থান সংকুলান না হওয়ায় আশপাশের দুই কিলোমিটার এলাকায় মানুষের রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে দেখা যায়। বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী সভাস্থলে পৌঁছান। এ সময় লাখো জনতা দাঁড়িয়ে তুমুল করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন নয়, দেশের মানুষের উন্নয়ন করাই আমার মূল লক্ষ্য। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে বলেই মানুষের জীবনের আয়-রোজগার বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। এবার নৌকায় ভোট দিলে দেশের অর্থনীতি আরও উন্নত হবে। আমরা সরকার পরিচালনা করি মানুষের কল্যাণের জন্য। বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলাই ছিল আমাদের লক্ষ্য।
শেখ হাসিনা বলেন, একসময় বাংলাদেশকে খরা, দুর্ভিক্ষ, দুর্যোগ, অভাবের দেশ বলা হতো। যারা বিদেশে যেতেন তাদের এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। তবে সেই বদনাম আর নাই। আজকে আর কারও কাছে হাত পেতে আমাদের চলতে হয় না। বাংলাদেশ আজ ভিক্ষুকের দেশ না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে।
ঢাকার নাগরিক সুবিধা বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকায় বস্তির মধ্যে অনেক মানুষ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করে। আমরা এমন ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে আর তারা এভাবে না থাকেন। ফ্লাটে থাকবে তারা। স্বল্প আয় ও নিম্ন আয়ের মানুষরা যাতে সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে, সুব্যবস্থা করে দেবো। দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক হারে, যে যেভাবে চাইবেন এসব ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে পারবেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরও বলেন, ঢাকার নাগরিক সুবিধা বাড়াতে মেট্রোরেল হচ্ছে। অ্যালিভেটেড এক্সপ্রেস হবে। পাতাল ট্রেন করে দেবো। গুলশান-বনানী থেকে শুরু করে সমগ্র ঢাকার উত্তরণ, বিশেষ করে যেসব ইউনিয়ন ছিল সেগুলোকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিয়েছি। মানুষ যাতে নাগরিক সুবিধা পায় সেজন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
জঙ্গিবাদ দমন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই গুলশানে যখন হলি আর্টিজানে হামলা হলো, সবাই ধারণা করেছিল এর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। কিন্তু মাত্র ৮-৯ ঘণ্টায় আমরা কার্যকরী ব্যবস্থা নিয়েছি। এরপর থেকে আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি।
ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান (চিত্রনায়ক ফারুক) সহ ঢাকার অন্যান্য প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে সবার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এখন নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে, নির্বাচনে নৌকার জয় হবে। আমরা আবারও সরকার গঠন করে আপনাদের সেবা করবো ইনশাল্লাহ।
জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাহারা খাতুন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ব্যবসায়ী নেতা আতিকুল ইসলাম আতিক, চিত্রনায়ক ফারুক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।