খেলার খবর: মুকুট মাথায় উঠেছে অনেক। বাংলাদেশ দল দ্বিমুকুটও পরেছে কয়েকবারই। কিন্তু ‘ত্রিমুকুট’ একবারও নয়। প্রথমবার সেটি মাথায় তোলার সম্ভাবনার চৌকাঠেই দাঁড়িয়ে এখন সাকিব আল হাসানরা। যাঁর নেতৃত্বে সেই ২০০৯ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও এ রকম কিছুর হাতছানি ছিল বাংলাদেশের সামনে। বেতন-ভাতা নিয়ে শীর্ষ ক্রিকেটারদের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের বিরোধের জেরে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সারির ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া ক্যারিবীয় দলও সেবার ত্রিমুকুটের নাগাল পেতে পেতেও পেতে দেয়নি সফরকারীদের। টেস্ট আর ওয়ানডে সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করা বাংলাদেশ নিজেরাই একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে হেরে দেশে ফিরেছিল অপূর্ণতা নিয়ে।
পরের ৯ বছরে বাংলাদেশ অর্জনের কত-শত সিঁড়ি ডিঙিয়ে অনেক প্রাপ্তির ডানা মেলার আনন্দে ভাসলেও দ্বিপক্ষীয় সিরিজে কোনো দলকে তিন ফরম্যাটেই হারানোর চক্র পূরণ করতে পারেনি। পারেনি পূর্ণতার পথে শেষ বাধাটুকু পেরোতেও। দ্বিপক্ষীয় লড়াইয়ে অবশ্য কোনো একটি ফরম্যাটে সিরিজ জেতার ঘটনা আছে অনেক। দুই ফরম্যাটে জেতার ঘটনাও আছে এ বছরই। গত জুলাই-আগস্টের ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরেই ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিল। কিন্তু তার আগে টেস্ট সিরিজের ভরাডুবিতে ত্রিমুকুটবিষয়ক কোনো আলোচনাই তোলার সুযোগ হয়নি।
তবে এবার সেই সুযোগ এসে যায় টেস্ট সিরিজে ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করার পর ওয়ানডে সিরিজও ২-১-এ জেতায়। তাই ত্রিমুকুট জেতার লক্ষ্য নিয়েই টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। সিলেটে প্রথম ম্যাচের আগে হেড কোচ স্টিভ রোডসকেও সে রকম কিছুর সম্ভাবনার রোমাঞ্চ ছুঁয়ে যাচ্ছিল, ‘অবশ্যই সম্ভব। আমরা নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টাই করব। ওদের তিনটি সিরিজেই হারাতে আমাদের খুব ভালো লাগবে।’
যদিও সিলেটে প্রথম ম্যাচের হারে সেই সম্ভাবনা সত্য হওয়া নিয়ে শঙ্কাই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তবে মিরপুরে গত পরশু সাকিবের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে যেভাবে ক্যারিবীয়দের উড়িয়ে দিয়ে সিরিজে ফিরেছে, তাতে স্বাগতিক শিবিরে আত্মবিশ্বাসের উত্তুঙ্গ হাওয়াই বয়ে যাচ্ছে। আজ বিকেল ৫টায় শুরু হতে যাওয়া সিরিজ নির্ধারণী টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগে সাকিবরা কতটা ফুরফুরে মেজাজে আছে, সেটি তো গতকালের আবহই পরিষ্কার বুঝিয়ে দিতে সক্ষম। ক্যারিবীয় দল যেখানে কঠোর অনুশীলনে দ্বিতীয় ম্যাচের ভুলত্রুটি শুধরে নিতে চাইল, সেখানে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের দেওয়া হলো পুরো দিনের বিশ্রাম। এতে করে ত্রিমুকুট জেতার জন্য সাকিবরা নিশ্চিতভাবেই আরো চনমনে হয়ে নামবেন।
সেই সঙ্গে নামবে আরেকবার ক্যারিবীয়দের ধসিয়ে দেওয়ার আত্মবিশ্বাস নিয়েও। বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশী কাল দুপুরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হতে এসেও তাই বলে গেলেন, ‘গতকাল (দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি) আমরা দারুণ খেলেছি। আমাদের খেলার ধরনই ভিন্ন ছিল। সিলেটের ম্যাচের তুলনায় মিরপুরে আমাদের যে মানসিকতা দেখা গেছে, তা ছিল এক কথায় অসাধারণ। এই জয়ের পর দল দারুণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে আছে।’
না হওয়ারও কারণ নেই কোনো। প্রথম ম্যাচে যে দল ১২৯ রানের বেশি স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারেনি, তারাই কিনা পরের ম্যাচে পুরো উল্টো চেহারায়। দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো এই ফরম্যাটে ২০০ ছাড়ানো স্কোর। ২১১ রান করার পথে পারফরম্যান্সের আলোয় উজ্জ্বল হয়েছেন অনেকেই। বিশেষ করে গত আগস্টে ফ্লোরিডায় ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচভাগ্য গড়ে দেওয়া ঝোড়ো ইনিংস খেলা লিটন কুমার দাশ আবারও মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ঝলসে উঠেছেন। পেটের পীড়া নিয়েও অধিনায়ক সাকিব খেলেছেন অপরাজিত ৪২ রানের ইনিংস। তাঁর সঙ্গে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের সেরা পঞ্চম উইকেট পার্টনারশিপ (অবিচ্ছিন্ন ৯১ রান) গড়েছেন মাহমুদ উল্লাহও। দারুণ ব্যাটিংয়ের পর এই ফরম্যাটে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নেওয়া সাকিব দানবীয় ব্যাটিং শক্তিকে বিনাশ করার কাজটিও খুব সহজ করে দিয়েছিলেন।
প্রথম ম্যাচ হারার পর তৈরি হওয়া শঙ্কার ছায়া মুছে দিয়ে যা আবার ভীষণ সজীব করে তুলেছে সিরিজ জেতার স্বপ্নকেও। এখন অবশ্য শুধুই আর সিরিজ জেতার স্বপ্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না ব্যাপারটি। স্বপ্নটি এখন কখনোই মাথায় না তোলা ‘ত্রিমুকুট’ জেতারও।