দেশের খবর: আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য তাঁর দলকে পুনর্নির্বাচিত করতে তরুণ, বয়োবৃদ্ধ এবং মা-বোনসহ সবার কাছে ভোট প্রত্যাশা করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারুণ্যের কাছে ভোট চাই, আমাদের যারা মা-বোনেরা আছেন তাঁদের কাছে ভোট চাই, আমাদের যারা বয়োবৃদ্ধ আছেন- সবার কাছেই ভোট চাই।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা ভোট দিন, আমরা উন্নয়ন দেব, সমৃদ্ধি দেব, সুন্দর জীবন দেব, উন্নত জীবন দেব।’
আজ রোববার বিকেলে পীরগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে, নৌকার বিজয় হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামাত জোটের মধ্যে যারা জামায়াত ১৯৭১ সালে তারা ছিল যুদ্ধাপরাধী। তারা এদেশে গণহত্যা চালিয়েছে, মা-বোনের ইজ্জত লুটেছে, তারা এ দেশের মানুষকে খুন করেছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। বিএনপি এই মিঠাপুকুর থেকে শুরু করে একেবারে সাদুল্লাহপুর গোবিন্দ গঞ্জ, পলাশবাড়ি পুরো এলাকায় বাসে আগুন দিয়ে বাস পুড়িয়েছে। ট্রাকে আগুন দিয়েছে, রাস্তা-ঘাট কেটেছে, গাছ কেটেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা একবার চিন্তা করেন- সিএনজি, লঞ্চ, বাস, প্রাইভেট কারে পেট্রল ঢেলে মানুষকে আগুন দিয়ে যারা পোড়ায় তারা মানুষ নয়, দানব। ওদের কোনো স্থান এই বাংলার মাটিতে হবে না।’ ‘কাজেই ওই ধানের শীষ ওয়ালাদের গায়ে মানুষ পোড়া গন্ধ, তাদের থেকে সাবধান থাকবেন।’ প্রধানমন্ত্রী পীরগঞ্জে এসেই প্রথমে তাঁর স্বামী এবং দেশের প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করেন।
এর আগে দুপুরে প্রধানমন্ত্রী তারাগঞ্জে তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে এক নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পীরগঞ্জ থেকে নৌকার প্রার্থী জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও পীরগঞ্জের সমাবেশে বক্তৃতা করেন এবং শেখ হাসিনা রংপুরে তাঁর দল এবং মহাজোটের প্রার্থীদেরও সভায় সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং আহমেদ হোসেন, পীরগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মণ্ডল এবং বিশিষ্ট অভিনেতা ফেরদৌস, পূর্ণিমা এবং তারিনও সমাবেশে বক্তৃতা করেন। পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজিজুর রাঙ্গা সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।
এক সময়কার অবহেলিত এবং মঙ্গাপীড়িত রংপুরের উন্নয়ন আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামীতে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারলে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সফলভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি চলমান উন্নয়নের ধারাকে আরো অনেকদূর নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন।
প্রধানমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে তাঁর নিজের কন্যা আখ্যায়িত করে বলেন, ‘আপনারা তাঁকে নির্বাচিত করতে পারলে এবং আমরা ক্ষমতায় আসতে পারলে তাঁকে আবার জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত করতে পারব। কাজেই আমি দোয়া করি তাঁকে আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।’
শেখ হাসিনা এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মণ্ডলের আওয়ামী লীগে যোগদানকে স্বাগত জানিয়ে পীরগঞ্জের উন্নয়নে একটি মাস্টার প্লান প্রণয়নের জন্য তাঁকে বলেছেন বলেও জানান।
পীরগঞ্জের উন্নয়নের তাঁর সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ব্রিজ করে দিয়েছি। রাস্তা করে দিয়েছি, আজকে আমার করা ব্রিজ দিয়ে আমি চলে যাব দিনাজপুরে। এত সহজে আগে দিনাজপুরে পৌঁছানো যেত না।’ তিনি পীরগঞ্জে শতভাগ বিদ্যুতায়নের প্রসংগ উল্লেখ করে বলেন, ‘আজকে সারা পীরগঞ্জে শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়ে দিয়েছি। প্রত্যেক ঘরে আজকে বিদ্যুতের আলো জ্বলছে। এজন্য প্রত্যেকটি ছেলেমেয়ের আজকে কাজ করার সুযোগ হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সাল নাগাদ দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়নে তাঁর সরকারের পরিকল্পনার কথাও এ সময় উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা রংপুরে রেল যোগাযোগ স্থাপন, বঙ্গবন্ধু ও তিস্তা সেতু নির্মাণ এবং ঢাকা-রংপুর ৪ লেনের হাইওয়ে নির্মাণে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, ‘আপনারা শুধু একটা জিনিসই চিন্তা করবেন ১০ বছর আগেও এই এলাকা কোথায় ছিল আর আজকে কোথায় এসেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। ছেলেমেয়েরা সেখানে বসে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করে বাংলাদেশ মহাকাশ জয় করেছে।’
এই স্যাটলাইট নির্মাণে তাঁর ছেলে এবং তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের বিরাট অবদান রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এই দেশে আর কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না। গৃহহারা থাকবে না। রোগে ভুগে কষ্ট পাবে না।’
প্রধানমন্ত্রী যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থানের উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, ‘কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে মাত্র ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জে বিনা জামানতে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এই ঋণ নিয়ে যুব সমাজ স্বাবলম্বী হতে পারবে। কারো কাছে চাইতে হবে না, নিজেরাই চাকরি দিতে পারবে।’