দেশের খবর: ক্রিকেটার মাশরাফিকে বারবার চোটের সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়েছে। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে টিকে যাওয়ার পেছনে সবসময়ই নিজের স্ত্রীকে ক্রেডিট দিয়েছেন মাশরাফি। বলেছেন, সুমনা হক সুমি তার ক্যারিয়ারের আড়ালের নায়িকা। দুই সন্তানসহ সংসারের সব কিছু সুমি নিপুণ দক্ষতায় সামলিয়েছেন বলেই সব ভুলে শুধু খেলায় মন দিতে পেরেছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক। কখনই তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি।
রাজনীতির অধ্যায়ের শুরুতেও স্ত্রীকে পাশে পেয়েছেন মাশরাফি। সুমির ভরসা আর নির্ভরতায় নির্ভার ক্রিকেটের নায়ক। আর স্বামীর পক্ষে প্রচারে নেমে নিজের ব্যক্তিত্ব, বক্তৃতা ও আন্তরিকতা দিয়ে সুমিও ভোটারদের নজর কেড়েছেন ইতিমধ্যে।
ক্রিকেটে মাশরাফি যেমন অন্তর্মুখী, তেমনি তার স্ত্রীও ব্যক্তিজীবনে চাপা স্বভাবের। ক্রিকেটের নানা আনুষ্ঠানিকতা বা আয়োজনে মাশরাফির সঙ্গে তার উপস্থিতি খুব কমই দেখা গেছে। তবে রাজনীতিতে বক্তৃতায় সুমি কিছুটা হলেও খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। স্বামীকে জয়ী করতে বারবার ভোট চেয়েছেন। ভোটাররাও তার কথায় বেশ সাড়া দিয়েছেন।
তবে একাদশ সংসদ নির্বাচন সুমির ব্যক্তিত্বের আরেকটি দিক সামনে নিয়ে এসেছে। কদিন আগে নড়াইলে এক জনসভায় সুমি বলেছিলেন-৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে আপনারা মাশরাফিকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। নড়াইলে নতুন বছরের সূর্য হবে-‘উন্নয়নের সূর্য।’ সুমির সেই ‘উন্নয়নের সূর্য’ এখন নড়াইলবাসীর মুখে মুখে।
সব মিলিয়ে নড়াইলের ভোটের মাঠে এবার বড় চমক হয়ে এসেছেন মাশরাফির স্ত্রী সুমি। মাশরাফির মতোই নড়াইল-২ আসনে চষে বেড়িয়েছেন এ তরুণী।
নড়াইল সদর ও লোহাগড়ার নানা প্রান্তে পথসভা করেছেন। এর আগে ভিডিও কনফারেন্স করে ভোটও চেয়েছেন। শুধু সুমি নন, ভোটের মাঠে মাশরাফিকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন সুমির বোন ও ভগ্নিপতিরা। তাই তো নড়াইয়ে ভোটের আলোচনা, পাড়া-মহল্লার আড্ডা, আর চায়ের কাপের ঝড়ে মাশরাফির পাশাপাশি সুমির প্রসঙ্গও ঘুরে-ফিরে আসছে। তরুণ-যুবাদের অনেকেই মজা করে বলছেন- ‘ভাইয়ের জনপ্রিয়তার দুর্গে ভাবি হানা দিয়েছেন’।
বৃহস্পতিবার মাশরাফির একটি পথসভা ছিল লোহাগড়া উপজেলার দেবী গ্রামে, যেখানে সুমির জন্ম ও পড়াশোনা শুরু। সেখানে বক্তৃতা দেন সুমি। যেটি সবার নজর কাড়ে। সুমি বলেন, আমি আপনাদেরই মেয়ে। এই গ্রামেরই মেয়ে। আমি আজকে এসেছি আপনাদের জামাইয়ের জন্য ভোট চাইতে। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম, আমার ভোট চাওয়া লাগবে না। আপনারাই ওকে জয়ী করার জন্য অনেক চেষ্টা করছেন। এ জন্য আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
এ সময় সবাই সুমির বক্তৃতায় মাত হয়ে যায়। বলে-ভাইয়ের জনপ্রিয়তার দুর্গে হানা দিয়েছেন ভাবি।
মাশরাফি বিন মুর্তজা বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার কমলাপুর, রতডাঙ্গা, এড়েন্দা, দত্তপাড়া, তালতলা, চালিতাতলা বাজার, বাঁশগ্রাম বাজার, আউড়িয়াবাজার, মুলিয়াবাজার, তুলারামপুর বাজার, চাঁচড়ার মোড় এবং পেড়লি গ্রামে গণসংযোগ এবং নির্বাচনী পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এ সময় ৩০ ডিসেম্বর নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটের জয়ী করার আহ্বান জানান।
তার স্ত্রী সুমিও দিনভর লোহাগড়া উপজেলার দেবী শুরশোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লোহাগড়া ফয়েজের মোড়, লোহাগড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সদর উপজেলার বেদভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সর্বশেষ ভাদুলিডাঙ্গা মন্দিরের সামনে উঠান বৈঠকে নৌকায় ভোট প্রার্থনা করেন।