স্পোর্টস ডেস্ক: কেমন কেটেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ২০১৮ সাল? খালি চোখে হিসেব করলে বছরের শুরুতে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল জিততে না পারা ও বছরের শেষ দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হেরে যাওয়া- এটিই হতে পারে চলতি বছরে বাংলাদেশ দলের গল্প। কিন্তু গল্পের মধ্যেও থাকে গল্প, কাহিনীর ভেতরেও লুকায়িত থাকে অন্তর্নিহিত কাহিনী। বছর শুরুর ফাইনাল কিংবা বছর শেষের টি-টোয়েন্টি সিরিজটা বাদ দিলেও ২০১৮ নিদাহাস ট্রফি এবং এশিয়া কাপের ফাইনালেও হেরেছে বাংলাদেশ, এমনকি টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই হয়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে।
এটুকু শুনে মনে হতেই পারে যে ২০১৮ সালটা হয়তো ভালো যায়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। কিন্তু গল্পের ভেতরের গল্পটা হলো, নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জয় এসেছে এ বছরেই। যদি শুধু জয়ের সংখ্যাকে মানদণ্ড ধরা হয়, তাহলে ২০১৮ সালটিই বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল বছর।
এ বছর তিন ফরম্যাট মিলিয়ে বাংলাদেশ দল খেলেছে ৪৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এর মধ্যে জিতেছে ২১টিতে, পরিত্যক্ত হয়নি কোনো ম্যাচ, ড্র হয়েছে একটি ম্যাচ। এর আগে ২০০৬ সালে ১৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ দল। এতোদিন ধরে এটিই ছিলো এক বছরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ম্যাচ জেতার রেকর্ড। ২০০৬ সালে ১৯ জয় পেতে খেলতে হয়েছিল ৩৩টি ম্যাচ।
যেটি ছাপিয়ে ২০১৮ সালে ২১টি ম্যাচ জিতেছে টাইগাররা। এজন্য অবশ্য এক বছরে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ম্যাচও খেলতে হয়েছে মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকদের। ২০১৮ সালের আগে এক বছরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড ছিলো ২০০৮ ও ২০১০ সালে। দুই বছরেই লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা খেলেছিল ৩৭টি করে ম্যাচ। কিন্তু বিপরীতে জয় ছিলো যথাক্রমে ৫টি ও ৯টি।
সে তুলনায় ২০১৮ সালে ৪৪টি ম্যাচ খেললেও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২২টি (২১ জয়+১ড্র) ম্যাচেই অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়তে পেরেছেন মাশরাফি-সাকিবরা।
স্বভাবতই ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি সাফল্য মিলেছে ওয়ানডে ক্রিকেটেই। সেটা ঠিক কেমন তা জানা যায় ছোট্ট একটি পরিসংখ্যান থেকে। এ বছর ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৩ জয় এবং ৬৫ শতাংশ জয়ের হার নিয়ে বছরের সবচেয়ে বেশি জয়ের হারের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। মাশরাফির দলের সামনে রয়েছে কেবল ভারত ও ইংল্যান্ড।
বছরের শুরুতে ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রেকর্ডগড়া জয়ে শুরু এবং শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে শেষ। এ সময়ের মাঝে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫টি ওয়ানডে খেলে ৫টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ।
এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬ ম্যাচে ৪ জয়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ ম্যাচে ২ জয়, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২ ম্যাচে ১ জয় এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে ১ ম্যাচ খেলে সেটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। শুধুমাত্র ভারতের বিপক্ষেই ২ ম্যাচ খেলেও জয়ের দেখা পায়নি মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।
এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে চলতি বছর ৮টি ম্যাচ খেলে ৩টিতে জিতেছে বাংলাদেশ, ড্র হয়েছে একটি ম্যাচ। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাটিং বীরত্বে দারুণ এক ড্র দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে বছর শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর হারতে হয়েছে টানা চার ম্যাচ।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সে সিরিজের পরের ম্যাচ ২১৫ রানের বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে গিয়ে দুই টেস্টে পাত্তাই পায়নি সাকিব আল হাসানের দল। এমনকি নভেম্বরের শুরুতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠেও প্রথম টেস্টে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
তবে সেসব ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে বছরের শেষটা দারুণ করেছে টাইগাররা। জিম্বাবুয়েকে একই সিরিজের পরের ম্যাচে ২১৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারানোর পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজে পেয়েছে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ। সে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিপক্ষকে ফলোঅন করায় বাংলাদেশ এবং প্রথমবারের মতো পায় ইনিংস ব্যবধানের (ইনিংস ও ১৮৪ রানে) জয়।
সে তুলনায় টি-টোয়েন্টিতে বছরটা খুব একটা ভালো যায়নি বাংলাদেশের। ১৬টি ম্যাচের বিপরীতে জয়ের সংখ্যা মাত্র ৫টি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দেরাদুনে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হার সম্ভবত চলতি বছর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।
তবে এর মধ্যেও ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম এ ফরম্যাটে বাংলাদেশের রয়েছে দারুণ কিছু জয়। মার্চে শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই নিজেদের রেকর্ড ২১১ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ, একই টুর্নামেন্টে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে শেষ ওভারে বিশাল ছয়ের মারে ম্যাচ শেষ করার সুখস্মৃতিও মিলেছে এ বছরেই।
এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটি থেকেই তাদের সেরা ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে এসেছে সাকিব আল হাসানের। বছরের শেষভাগে ঘরের মাঠেও জেগেছিল ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা।
সেটি না হলেও সবমিলিয়ে বছরটা খারাপ কাটেনি বাংলাদেশ দলের। বছরের ব্যর্থতার গল্প যদি হয় তিন ফাইনাল হার কিংবা আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার গ্লানি তবে সুখস্মৃতি হিসেবে খুঁজে নেয়া যায় বছরজুড়ে টাইগারদের সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ডকে!