অনলাইন ডেস্ক: রাত পোহালেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট। আর ভোট দিতে উদগ্রীব জনগণ ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকা ছেড়ে যে যার এলাকায় চলে গেছেন। শুধুমাত্র ঢাকার ভোটার ও গণমাধ্যমকর্মীরাই যেন এখন ঢাকার বাসিন্দা। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতায় দেখা গেছে তারকার মেলা। বিশেষ করে বড় দুই দল নৌকা ও ধানের শীষের প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন চিত্রজগতের অভিনেত্রা, অভিনেত্রী ও সঙ্গীতশিল্পীরা। তবে ভোটের রাজনীতিতে কবি সাহিত্যিকদের তেমন একটা দেখা যায়নি। কিন্তু কবিরাও নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছিলেন। ভোট চাইতে ঘুরেছিলেন দ্বারে দ্বারে।অনেকেরই হয়ত জানা নেই সে কথা। এমনই এক নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ভোটের জন্য অনেকটা নমনীয় হতে হয়েছিল মাথা না নোয়ানো এই চিরবিদ্রোহীর।
১৯২৬ সালের কথা। স্বরাজ দলের হয়ে এই কবি নির্বাচন করেছিলেন। তিনি দাঁড়িয়েছিলেন ঢাকা বিভাগের মুসলমানদের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক পরিষদের একজন সদস্য পদে। আর সেই নির্বাচনে দল থেকে কবি নজরুলকে দেওয়া হয়েছিল তিন’শ টাকা, যা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল নগন্য। ভোট চাইতে যে এতো খরচ লাগে সে বিষয়ে তেমন জ্ঞান ছিলনা নজরুলের। উপায় না পেয়ে কবি নিজের পকেট থেকেই টাকা খরচ করে ভোট পাওয়ার আশায় স্থানীয় বহু নেতার দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন।
কিন্তু কোনো ফল হয়নি তাতে। পাশে পান নি ওইসব নেতাদের কাউকেই। তার প্রচারণায় তেমন কেউ এগিয়ে আসেনি তখন। ভোটে জিততে ফরিদপুরের প্রভাবশালী পীর বাদশা মিয়ার কাছ থেকে নজরুলের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বানসংবলিত এক ‘ফতোয়া’ও দেয়া হয়েছিল।
জয়লাভে আশাবাদী ছিলেন নজরুল। ভোটের কয়েকদিন আগে এক বুক আশা নিয়ে পল্লীকবি জসীমউদ্দীনকে নজরুল বলেছিলেন, ‘ঢাকায় আমি শতকরা নিরানব্বই ভোট পাব। তোমাদের ফরিদপুরের ভোট যদি আমি কিছু পাই তাহলেই কেল্লাফতে।’
এদিকে টাকার অভাবে শেষ পর্যন্ত ভোটের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিলেন নজরুল। টাকা নেই বলে নির্বাচনী প্রচারণায় পর্যাপ্ত লোকবল পাওয়া যায়নি তার পক্ষে। এসময় কবি জসীমউদ্দীন নজরুলকেই এক ভোটকেন্দ্রের পোলিং অফিসারের সামনে গিয়ে বসিয়ে দেন। যদি কবিকে দেখে ভোটাররা তাকে সমর্থন করে সেই আশায়। ভোট শেষে কবি নজরুলের গালভরা হাসি দেখতে পেয়েছিলেন জসীমউদদীন। নজরুল জানিয়েছিলেন, আমাকে অনেকেই ভোট দিয়েছেন। ভোটারদের মুখ দেখেই তিনি বুঝতে পেরেছেন যে তারা তাকে ভোট দিতেই এসেছে। এমন দাবি করেছিলেন কবি। কিন্তু ভোটের ফলে পাওয়া গেল একেবারে উল্টোচিত্র। পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে চতুর্থ হন তিনি। ভোট পেয়েছিলেন মাত্র ১০৬২টি। এতো কম ভোট পাওয়ায় তার জামানতও বায়জাপ্ত হয়েছিল। কবির বিদ্রোহী কবিতার লাইন, ছন্দ আর গানের সুর বাঙালির মনে মনে গেঁথে থাকলেও ভোটের মাঠে কাজী নজরুল ইসলামকে তোয়াক্কা করেনি সেসময়ের বাঙালিরা। নজরুলের এমন ভরাডুবির পর ভোটের মাঠে নাম লিখিয়েছিলেন আরেকজন কবি। তিনি হলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। নজরুলের ব্যর্থতার ৬৫ বছর পরের ঘটনা। ১৯৯১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশের পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নেমেছিলেন তিনি। মার্কা পেয়েছিলেন – কুমির। সেসময় কুমিরে সিল পড়েনি তেমন। নির্মলেন্দু গুণ ভোট পেয়েছিলেন মোট ১২৪৯টি। নজরুলের মতো তারও জামানত বায়জাপ্ত হয়।
সূত্র: বিদ্রোহী রণক্লান্ত: নজরুল–জীবনী, গোলাম মুরশিদ ও জীবনকথা, জসীমউদ্দীন।