জাতীয়

বিশ্ব গণমাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচন

By Daily Satkhira

December 31, 2018

টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। রোববার অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দলটি। 

ভোটের ফল ঘোষণার পর তারা বলছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে জনগণ নৌকায় ভোট দিয়েছে। 

এদিকে, বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অভিযোগ করছে, ভোটে কারচুপি হয়েছে। ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবি করেছে তারা।

তবে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ভারত, কানাডা, নেপাল, সার্ক ও ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) নির্বাচনী পর্যবেক্ষকেরা। নির্বাচনের সার্বিক চিত্র নিয়ে বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যম সোমবার ফলাও করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এসব খবরে একদিকে যেমন এসেছে উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগের বিশাল জয়, অন্যদিকে রয়েছে বিভিন্ন অভিযোগের চিত্রও।

বিবিসি: বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা, কারচুপি, ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে বলে অভিযেগা করেছে বিরোধীরা। ব্রিটিশ এই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে ‘বিতর্কিত ভোটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরঙ্কুশ জয়’। খবরে বলা হয়েছে, গতবারের চেয়ে বিস্ময়কর জয়ে সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও তাদের জোট শরিকরা মিলে ২৮৮ আসন পেয়েছে। ভোট দেওয়ার জন্য সারি করে দাঁড়ানো নারী ভোটারদের একটি ছবি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভোট প্রদানের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে খবরে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি, ইসলামপন্থি উগ্রবাদ, দারিদ্র্য ও দুর্নীতি।

দি গার্ডিয়ান: আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দি গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পেলেও বিরোধীরা একে ‘প্রহসনের নির্বাচন’ বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চাঙ্গা হয়েছে। যদিও তার সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনী সহিংসতায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১০ বছর পর নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি জোট পেয়েছে মাত্র সাতটি আসন। প্রতিবেদনে ভোটাদের দীর্ঘ লাইন ও প্রধানমন্ত্রীর ভোট দেওয়ার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

সিএনএন: যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম সিএনএনের খবরেও আওয়ামী লীগের বিশাল জয়ের চিত্র দিয়ে বলা হয়েছে, ২৯৯ আসনের মধ্যে ২৮৮ আসন পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। একটি আসনের নির্বাচন বাকি। বিএনপি পেয়েছে সাত আসন। তবে ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে ভোট ভর্তি করে রাখার অভিযোগে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় আছেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালে বিএনপি ও অন্যান্য দল নির্বাচন বর্জন করায় অধিকাংশ আসন পায় আওয়ামী লীগ। এরপর থেকে দুর্দান্ত অর্থনৈতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও তার সরকারের বিরুদ্ধে কর্তৃত্বপরায়ণতা, গণমাধ্যম ও বিরোধীদলের ওপর হয়রানির অভিযোগ উঠে।

আনন্দবাজার: কলকাতাভিত্তিক বাংলা ভাষার প্রভাবশালী দৈনিক ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে সাধুবাদ জানিয়ে সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। ‘অভিনন্দন বাংলাদেশ’ শিরোনামে সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, শুভেচ্ছা প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশকে। আরও পাঁচটা বছর গণতন্ত্রের পথেই থাকতে চায় বাংলাদেশ- গোটা বিশ্বকে এই বার্তা দিয়ে সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হলো বাংলাদেশে। উপমহাদেশে তথা এশিয়ায় গণতন্ত্রের জয়ধ্বজা উড্ডীন রাখতে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সাফল্য অত্যন্ত কাম্য ছিল। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সফল ও নির্বিঘ্ন সমাপন ভারতের কাছে অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত। টানা তিনটে সরকার সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হলো- বাংলাদেশের জন্য এ এক নতুন উপলব্ধি। গণতন্ত্রের পথে এই সফল পদচারণার জন্য অভিনন্দন প্রাপ্য বাংলাদেশের। 

সম্পাদকীয়ের শেষে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সফল পরীক্ষায় ভারত স্বাভাবিকভাবেই খুশি। আগামীর জন্য শুভেচ্ছা রইল। অভাব-অভিযোগ পিছনে ফেলে গণতন্ত্রের সড়কে আগামী দিনে যেন আরও পরিণত ভঙ্গিতে হাঁটতে পারে বাংলাদেশ- ভারতবাসীর তরফ থেকে সেই শুভেচ্ছাই রইল। এছাড়া ‘হাসিনার নৌকাতেই বাংলাদেশ’ শিরোমানে প্রথম পাতায় খবর প্রকাশ করেছে সংবাদপত্রটি।

টাইমস অব ইন্ডিয়া: ‘নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় জয়, বিরোধীদের নির্বাচন বাতিলের দাবি’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন শেখ হাসিনার অবদানের কথা বলা হলেও মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ভিন্নমত দমনের কথা বলা হয়। তবে শেখ হাসিনা বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসিনা নতুন করে ক্ষমতা গ্রহণের পর তার প্রথম কাজগুলোর একটি হবে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো। 

নিউ ইয়র্ক টাইমস: ‘ব্যাপক সহিংসতার ভোটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় মেয়াদে জয়ী’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের প্রভাবশালী সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস। তবে কারচুপির অভিযোগ এনে ফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিরোধীরা।

আল জাজিরা: কাতারভিত্তিক এই গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে জয়ী বলে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে সহিংসতাপূর্ণ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে প্রধান বিরোধী জোট। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ২৮৮টি আসনে জয় পেয়েছে। আর ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র ছয়টি আসন।

টেলিগ্রাফ: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ২৮৮ আসনে জয়লাভ করলেও বিরোধীরা কারচুপির অভিযোগ তুলে পুননির্বাচনের দাবি করেছে। একই সঙ্গে মহাজোটের সমর্থকদের বাধার মুখে লোকজন ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি বলে অভিযোগ করা হয়। এক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ উল্লেখ করেছেন।

এছাড়া প্রায় একই রকম তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স, ইকোনমিক টাইমস, ডন, দি হিন্দুসহ বিশ্বের প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যম।