জাতীয়

অনন্য উচ্চতায় শেখ হাসিনা

By daily satkhira

January 01, 2019

অনলাইন ডেস্ক: স্বাধীন বাংলাদেশে অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনে জয়ী হয়ে পরপর তিনবার এবং সব মিলিয়ে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন তিনি। নিজের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সাহসী কর্মকাণ্ড দিয়ে আরো আগেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা।

পর্যবেক্ষকদের মতে, শেখ হাসিনার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার জন্যই এবারের নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের প্রথম নির্বাচনের পর নৌকা মার্কার এটাই সবচেয়ে বড় জয়। বেসরকারি তথ্য অনুসারে, ফলাফল ঘোষণা হওয়া ২৯৮ আসনের মধ্যে ২৫৯টি আসনে এককভাবে জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগ। আর মহাজোটের অন্য শরিকদের আসনসহ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মোট জয় পাওয়া আসন ২৮৮টি।

প্রসঙ্গত, এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দল আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংসদ নেতা নির্বাচন করা হবে। জানা গেছে, এবারও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা হচ্ছেন এবং তিনিই চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ১৯৯৬ সালে। ওই বছরের ১২ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। ২০০১ সালে মেয়াদ শেষে শান্তিপূর্ণভাবে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয় বিএনপির কাছে। পরে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে জটিলতা সৃষ্টি করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। প্রায় ২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে। এতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এ নির্বাচনের পর ওই বছরের ১২ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের জন্য ধারাবাহিক অগ্রগতি আর সম্মানের পথটি দিন দিন প্রশস্ত করে চলেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে দেশ ও মানুষের উন্নয়নের কাজে নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দিয়েছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কর্মজীবন প্রায় চার দশকের। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনা ৩টি সংসদীয় আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে নব্বইয়ের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দেন এবং এই আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এইচএম এরশাদ সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। ১৯৯১ সালের সংসদীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। তিনি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের জন্য রাজনৈতিক দলসহ সকলকে সংগঠিত করেন। ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনায় দায়িত্ব নেয়ার পর তাঁর সরকার ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের জন্য আইন প্রণয়ন করে। এই আইনের আওতায় স্থাপিত ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে এবং রায়ও কার্যকর করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের বিজয়ের পেছনে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৫ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শেখ হাসিনা। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা সকল গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ সময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার ঐতিহাসিক হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়।

১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে শক্ত হাতে দলের হাল ও গণতন্ত্রের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে রেখে সহস্র বাধা অতিক্রম করে জনগণের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে দেশে ফেরার ১৫ বছরের মাথায় আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই তিনি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন। তাকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সামরিক সরকার তাঁকে আটক করে ১৫ দিন অন্তরীণ রাখে। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি এবং নভেম্বর মাসে তাঁকে দু’বার গৃহবন্দী করা হয়। ১৯৮৫ সালের ২ মার্চ তাঁকে আটক করে প্রায় ৩ মাস গৃহবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে তিনি ১৫ দিন গৃহবন্দী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে ১১ নভেম্বর তাঁকে গ্রেফতার করে এক মাস অন্তরীণ রাখা হয়। ১৯৮৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা গ্রেফতার হয়ে গৃহবন্দী হন। ১৯৯০ সালে ২৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে আবারও অন্তরীণ হতে হয়। সর্বশেষ ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে সংসদ ভবন চত্বরে সাবজেলে পাঠায়। প্রায় ১ বছর পর ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্তি পান।

শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ১৯ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়। এর মধ্যে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে তাঁকে লক্ষ করে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এতে যুবলীগ নেতা নূর হোসেন, বাবুল ও ফাত্তাহ নিহত হন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাঁকেসহ তাঁর গাড়ি ক্রেন দিয়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে তাকে লক্ষ্য করে পুলিশ বাহিনী লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নিহত হন। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন চলাকালে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে তাঁর কামরা লক্ষ্য করে অবিরাম গুলিবর্ষণ করা হয়। ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় হেলিপ্যাডে এবং শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দু’টি বোমা পুতে রাখা হয়। বিএনপি সরকারের সময় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ঐদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এক জনসভায় বক্তব্য শেষ করার পরপরই তাঁকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা করা হয়। ইতিহাসের ভয়ংকর ও লোমহর্ষক সেই হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও আইভি রহমানসহ তাঁর দলের ২২ নেতাকর্মী নিহত হন এবং ৫শ’র বেশি মানুষ আহত হন। শেখ হাসিনা নিজেও কানে আঘাত পান।

শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। সামাজিক কর্মকান্ড, শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা সম্মানিত করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সুদীর্ঘ ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধ অবসানের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো তাঁকে হুপে-বোয়ানি শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে সম্মানজনক ‘সেরেস’ মেডেল প্রদান করে। এছাড়া ২০১৪ সালে ইউনেসকো তাঁকে ’শান্তির বৃক্ষ’ এবং ২০১৫ সালে উইমেন ইন পার্লামেন্টস গ্লোবাল ফোরাম নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তাঁকে রিজিওনাল লিডারশীপ পুরস্কার এবং গ্লোবাল সাউথ-সাউথ ডেভলপমেন্ট এক্সপো-২০১৪ ভিশনারি পুরস্কারে ভূষিত করে। জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে।

বিভিন্ন জরিপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির তথ্য উঠে আসছে বেশ কিছুদিন ধরেই। বিশেষ করে ২০১৩-১৪ সালে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কঠোরভাবে দমন করে দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়ায় প্রতি বছরই বেড়েছে তার জনপ্রিয়তা।

শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখন শুধু গল্প নয়, বাস্তবতা। একাত্তরে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আর ৭০ শতাংশ দারিদ্র্যের বোঝা নিয়ে পথ চলা শুরু করে বাংলাদেশ। এমন দৈন্য ঘুচিয়ে এখন প্রবৃদ্ধির চাকা ঘুরছে ৭ শতাংশের ওপর। আর দারিদ্র্যের হার কমে ২১ দশমিক ৮ শতাংশে নেমেছে। বাজেটের আকার ৪ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। রিজার্ভ রয়েছে প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ১৭৫১ মার্কিন ডলার। অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাংলাদেশ প্রায় সব সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন এগিয়ে যাওয়া উন্নত দেশের দিকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ইতিমধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। পরিকল্পনা আর দক্ষ নেতৃত্ব বিশ্বের বুকে মাথা বাংলাদেশ উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশকে এখন আর কেউ অবহেলা করতে পারে না। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন আর অগ্রগতির সফল রোল মডেল।