অনলাইন ডেস্ক: সাইবার নিরাপত্তা সফটওয়্যার পণ্যের বাজার বাংলাদেশে এখনও খুব ছোট- সম্প্রসারিত হয়নি বললেই চলে। যদিও সাইবার নিরাপত্তার প্রশ্নটি কম্পিউটার ও সফটওয়্যার বাজার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সাইবার এবং ডাটা নিরাপত্তা-সংক্রান্ত প্রযুক্তি পণ্যের বাজার এ দেশে সীমিত আকারে বিকশিত হলেও নকল (পাইরেটেড) সফটওয়্যারের বহুল ব্যবহারের কারণে এর গতি মন্থর।
সফটওয়্যার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘বিজনেস সফটওয়্যার অ্যালায়েন্সে’র ২০১৮ সালের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৮৪ শতাংশ ব্যক্তিগত কম্পিউটারেই পাইরেটেড বা লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার ব্যবহূত হচ্ছে। পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারে বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। ২০১৬ সালে এ দেশ ছিল চতুর্থ স্থানে। বিশ্ববাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গত এক বছরে সাইবার নিরাপত্তা পণ্যের বাজার প্রায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেড়েছে। ২০১৯ সালে এ বাজার আরও প্রায় ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিস্তৃত হবে।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ এবং সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশে এখনও সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে এখানে যে কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, বিশেষত ব্যাংকিং সেক্টরে, সাইবার হামলার ঝুঁকিও প্রবল। বিশ্বজুড়ে সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্বের নিরিখে বলা যায়, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সফটওয়্যার বাজারে সাইবার নিরাপত্তা সফটওয়্যার পণ্যই প্রাধান্য পাবে। খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ মিল্টন এজরাতি সম্প্রতি তার এক নিবন্ধে লিখেছেন, সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি বিস্তৃতির নেপথ্যে রয়েছে সাইবার নিরাপত্তা প্রযুক্তি পণ্যের বাজার বৃদ্ধির অঙ্কের হিসাব।
সাইবার নিরাপত্তা বাজারের বর্তমান আকার: আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ পোর্টাল ‘স্ট্যাটিসটা’র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের শেষে এসে সাইবার নিরাপত্তা সফটওয়্যার এবং এ-সংক্রান্ত প্রযুক্তি পণ্যের বাজারের আকার দাঁড়িয়েছে ১৫১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৭ সালে এর আকার ছিল ১৩৭ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমান হারে বাজারের আকার বড় হতে থাকলে ২০১৯ সালের শেষে গিয়ে এর বাজারের আকার হবে ১৬৭ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে এ বাজারের আকার হবে ১৮৪ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৩ সালের শেষে হবে ২৮৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশের কম্পিউটার সমিতি মার্কেট সূত্র জানায়, বছরে দেশে ইন্টারনেট সিকিউরিটি এবং অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার বিক্রির পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ১৫০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। যেটা ২০১৪ সালের আগে ৫০ কোটিও ছিল না। ২০১৪ সালের পর থেকে লাইসেন্সড অ্যান্টিভাইরাস বিক্রির পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে। ক্যাসপারেস্কি, সিমেনটেক, পান্ডা, অ্যাভিরা, অ্যাভাস্ট, ম্যাকফি’র মতো বিশ্বখ্যাত নিরাপত্তা সফটওয়্যার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বর্তমানে স্থানীয় এজেন্ট নিয়োগ করে ব্যবসা করছে।
এখনও বাজারে পাইরেটেড সফটওয়্যার: বিজনেস সফটওয়্যার অ্যালায়েন্সের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের কম্পিউটারে ৮৪ শতাংশ পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহূত হয়। ২০১৬ সালে এই হার ছিল ৮৬ শতাংশ। অর্থাৎ পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারকারীর সংখ্যা স্বল্প হারে হলেও কমেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারে বিশ্বে এখন শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে লিবিয়া (৯০ শতাংশ)। এ ছাড়া রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে জিম্বাবুয়ে (৮৯ শতাংশ), তৃতীয় স্থানে ইয়েমেন এবং চতুর্থ স্থানে আর্মেনিয়া (৮৫ শতাংশ)।
পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার সম্পর্কে সাবেক মন্ত্রী ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিজিটাল কিংবা সাইবার নিরাপত্তার ব্যাপারে ব্যবহারকারীদের এখনও যথেষ্ট সচেতন করে তোলা যায়নি। পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার হলে ডিজিটাল মাধ্যমে নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকেই যাবে সন্দেহ নেই। বিশেষত ব্যাংকিং খাত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাইবার নিরাপত্তার দিক থেকে এখন পর্যন্ত বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাইবার হামলার হুমকি সম্পর্কে ভিন্নমত: বিশ্বজুড়ে সাইবার হামলার হুমকি বৃদ্ধির পেছনে বড় ব্যবসায়িক লাভের অঙ্কের হিসাব দেখছেন খ্যাতনামা করপোরেট আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ মিল্টন এজরাতি। সম্প্রতি ফোর্বসে প্রকাশিত নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, সাইবার হুমকির বিষয়টি যত বেশি উদ্বেগের সৃষ্টি করছে, সাইবার নিরাপত্তা সফটওয়্যার ও প্রযুক্তি পণ্যের বাজারও ততই লাভজনক হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করছে। তার মতে, ‘নিরাপত্তার বিষয়টি উদ্বেগের, কিন্তু এই উদ্বেগ থেকে ব্যবসার সুযোগ এক লাফে অনেক বেড়ে যায়, এটাও বাস্তবতা।’
মিল্টন এজরাতি লিখেছেন, সাইবার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত প্রযুক্তিগত রহস্যগুলো খুব বেশি মানুষের সামনে উন্মোচন করা হয় না। নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন থাকার উপায়গুলোও সহজ করে বলা হয় না। বরং বিভিন্ন কর্মশালা এবং আলোচনাগুলোতে ঝুঁকির বিষয়টিই ক্রমাগত বিশাল অবয়বে তুলে ধরা হয়। এর কারণ হচ্ছে, ঝুঁকির বিষয়টি বিস্তৃত হলে সচেতন ব্যবহারকারী ঝুঁকি এড়াতে নিরাপত্তা প্রযুক্তি ব্যবস্থার জন্য বেশি ব্যয় করতেও উৎসাহিত হবেন। তার মতে, কম্পিউটার ও স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেমের মূল উৎপাদকরা চাইলে ব্যবহারকারীর ডিজিটাল ডিভাইসে নিরাপত্তার জন্য তৃতীয় পক্ষের কোনো সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রয়োজনই পড়বে না।