জাতীয়

কৃষককে ঝুলিয়ে নির্যাতন, আ.লীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ২

By daily satkhira

January 05, 2019

দেশের খবর: ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় গাছে ঝুলিয়ে এক কৃষককে নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। পুলিশ মামলার আসামি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও তাহেরহুদা ইউনিয়ন কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান তুহিন এবং তাঁর সহযোগী কাজী বাবুলকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ শনিবার দুপুরে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

নির্যাতনের এ ঘটনায় হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে ।

ওসি আসাদুজ্জামান শনিবার বিকেলে অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, নির্যাতনের শিকার রানার বাবা বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো তিনজনের নামে শুক্রবার থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ এ মামলার প্রধান আসামি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহিনুর রহমান তুহিন ও তাঁর সহযোগী কাজী বাবুলকে গ্রেপ্তার করেছে।

ওসি আরো জানান, ঘটনার দিন রানা ও হিরণ নামের দুইজনকে থানায় নিয়ে আসে প্রধান আসামি তুহিনসহ লোকজন। বিষয়টি তদন্ত করে চুরি হওয়া টেলিভিশন উদ্ধারের জন্য থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রফিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। রফিক ঘটনার সত্যতা না পেয়ে তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেন।

তবে হরিণাকুণ্ডু থানার এসআই রফিক বলেছেন অন্য কথা। ২৫ ডিসেম্বর উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে টেলিভিশন চুরির ঘটনাটি ঘটেছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে গাছে ঝুলিয়ে মারপিটের বিষয়টি কবে কখন তা বলতে পারেননি এসআই রফিক। তিনি আরো বলেছেন, রানা ও হিরণকে ধরে প্রথমে স্থানীয় ভবানীপুর পুলিশ ক্যাম্প থেকে থানায় আনা হয়। পরে সন্ধ্যার দিকে হিরণকে নিয়ে শ্রীপুর গ্রামে যান তিনি। গ্রামের একটি পুকুরে চুরি হয়ে যাওয়া টেলিভিশন আছে বলে জানতে পারেন। শেষ পর্যন্ত পুকুরে টেলিভিশন পাওয়া যায়নি। সেখানেই পরিবারের জিম্মায় হিরণকে তিনি ছেড়ে দেন এবং ওসি থানা থেকে রানাকে ছেড়ে দেন।

গ্রামে গেলেন অথচ প্রকৃত ঘটনা জানতে পারলেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এসআই রফিক বলেন, গাছে ঝুলিয়ে মারপিট করার কথা জানা ছিল না তাঁর।

তাহেরহুদা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনজের আলী জানান, ভোটের আগে ২৭ ডিসেম্বর দুপুরে মাঠে কাজ করছিলেন রানা। সেখান থেকে সকাল ১০টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা শাহিনুর রহমান তুহিন টেলিভিশন চুরির অভিযোগে রানাকে ধরে নিয়ে আসেন। এরপর গ্রামের একটি গাছে ঝুলিয়ে অমানবিকভাবে পিটিয়ে নির্যাতন করেন। পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে পরিবারের সদস্যরা মুমূর্ষ অবস্থায় তাঁকে কুষ্টিয়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে এখন কোথায় তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বা তাঁরা কোথায় আছে তা বলতে পারেননি তিনি।

এদিকে শাহিনুর রহমান তুহিন গ্রেপ্তার হওয়ার আগে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ভোটের পাঁচ দিন আগে শ্রীরামপুর গ্রামের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্পের একটি টেলিভিশন চুরি হয়ে যায়। এ সময় আমরা জানতে পারি রানা সেটি চুরি করেছে। কিন্তু উদ্ধার না হওয়ায় আমি তাঁকে সামান্য মেরেছিলাম। তাঁকে আমি চিকিৎসাও করিয়েছিলাম। একপর্যায়ে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয় তাঁকে।’ স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিষয়টি ভিন্নভাবে তুলে ধরে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেন তিনি।

তুহিন তাহেরহুদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘটনার প্রকৃত তারিখ ও সময় থানা পুলিশের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে না। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৬ ডিসেম্বর রাত ১২ টার পরে শ্রীপুর বাজারের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্প থেকে একটি টেলিভিশন হারিয়ে যায়। পরের দিন অর্থাৎ ২৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে টেলিভিশন চুরির অভিযোগে রানা নামের তরুণ এক কৃষককে মাঠ থেকে ধরে এনে গ্রামের একটি কাঁঠাল গাছে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়। সুকৌশলে গ্রামের এক যুবক মোবাইলে তা ধারণ করে রাখেন। গতকাল শুক্রবার তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। নির্যাতনের শিকার রানা কৃষক ওমর আলী ছেলে। তিনি এখন কোথায় আছে তা জানা সম্ভব হয়নি।

হরিণাকুণ্ডু ও শৈলকুপা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী সাংবাদিকদের বলেন, হরিণাকুন্ডু উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের বাজরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্প থেকে একটি টেলিভিশন চুরি হয়ে যায়। চুরির অপরাধে ২৭ ডিসেম্বর একই গ্রামের ওমর আলীর ছেলে রানাকে ধরে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয় । নির্যাতনের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুক্রবার দুপুরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর পর তারা জানতে পারেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।