দেশের খবর: সন্ত্রাস ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেয়া এবং দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্সে নিতে এই মন্ত্রিসভা। স্বচ্ছ ও জবাব দিহীতা মূলক একটা সরকার গঠনের প্রত্যয় রয়েছে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার। অভিজ্ঞ মহলের মতে, যেহেতু জাতীয় সংসদে কার্যকর বিরোধী দল নেই। তাই সরকারের ভুল-ত্রুটি ও সমালোচনা করারও কেউ নেই। যত বড় বিজয় ততো বড় ঝুকিও রয়েছে এই সরকারের। সুতরাং মন্ত্রিসভায় যদি দায়িত্বপূর্ণ লোক না থাকে এবং নিজেরা যদি নিজেদের ভুল বুঝতে না পারে তাহলে বড় বিপদ ঘটতে পারে। সে কারণেই স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নেয়ার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, সে হিসেবেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। এ ছাড়া ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সালকে টার্গেট করে তিনি নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করলেন। যেখানে রয়েছে শেখ হাসিনার উদ্যমী ও সাহসী একঝাঁক সৈনিক। যারা শেখ হাসিনাকে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেবেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গঠনে এসব সৈনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নতুন মন্ত্রীরসভার তালিকায় থাকা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের প্রোপার লিবারেজিং আছে। ওই লিবারেজিংটা তার (শেখ হাসিনা) হাত ধরেই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো এবং খুব সম্ভব আমরা এটাকে আরও বিকশিত করতে পারবো। আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমস্যাগুলো জানি। এই জন্য আপনাদের বলতে চাই- আপনারা আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেন। আপনারা ঠকবেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের ঠকাবেন না। নতুন মন্ত্রিসভা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘নতুনদের মন্ত্রী বানিয়ে শেখ হাসিনা তার ইশতেহারে ঘোষিত চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন করতে চান। এটা অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ এবং কালজয়ী সিদ্ধান্ত। যারা আগেও মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছেন এবং আবারও এসেছেন তারা পরীক্ষিত। আর নতুন যাদের আনা হয়েছে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেই নেয়া হয়েছে। তারা এর আগে দলের যে দায়িত্বে ছিলেন তাতে তারা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যেহেতু সংসদে সত্যিকার অর্থে কার্যকর বিরোধী দল নেই, সে কারণে যারা মন্ত্রী হলেন তাদের নিজেদের দায়িত্ব নিজেদের নিতে হবে। সংযত থাকতে হবে। দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তার ইশতেহারে দুর্নীতির জিরো টলারেন্সের যে ঘোষণা দিয়েছেন তা যেন বজায় থাকে এ চেষ্টা মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের করতে হবে।’ গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ২৯৮ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২৮৮ আসন। অন্যদিকে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের জোট পেয়েছে মাত্র সাতটি আসন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এমপিরা ছাড়া গত বৃহস্পতিবার নবনির্বাচিত এমপিরা শপথ নেন। জয়ের পর টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। এ ছাড়া চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন শেখ হাসিনা। সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
তবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংখ্যার কমপক্ষে দশভাগের নয়ভাগ সংসদ-সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাবেন। সর্বোচ্চ দশভাগের একভাগ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মন্ত্রিসভার সদস্য মনোনীত (টেকনোক্র্যাট) হতে পারবেন বলে সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে।
নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে তারাই হবে দেশের নতুন সরকার। শপথ নেয়া পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির বর্জনের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়। ১২ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। তখন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্য বিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। ওই সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রী ছিলেন। পরে কয়েক দফা মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হলে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়ায় ৫২ সদস্যের। তবে নির্বাচনের আগে টেকনোক্র্যাট চার মন্ত্রীকে বাদ দেয়া হয়।