আজ বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে রাজধানীর বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা। বাঙালির প্রাণের এই বইমেলা এলে জাতীয়তাবাদ, ভাষা শহীদের রক্তে অর্জিত মাতৃভাষার প্রতি আবেগ বহুগুণে বেড়ে যায়। একদিনের জন্য হলেও মনটা টানে অমর একুশে বইমেলার দিকে। রক্তে শিহরণ ওঠে রফিক-শফিক-জব্বারের আত্মদানের স্মৃতি মনের গভীরে ভেসে উঠলেই। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া জাগানো একুশে বইমেলা নিয়ে আয়োজক ও লেখক-প্রকাশকদের মধ্যে উদ্দীপনার ঘাটতি নেই।
আজ বুধবার বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করবেন। বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রদান করা হবে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭। এসময় প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হবে মীর মশাররফ হোসেনের অমর সৃষ্টি বিষাদ সিন্ধুর অনুবাদ ‘ওশান অফ সরো’ এবং জামার্নি থেকে প্রকাশিত ‘হানড্রেট পোয়েমস ফ্রম বাংলাদেশ’ নামক দুটি গ্রন্থ।
একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সর্বমোট ৪০৯টি। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১৪টি, এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩২৯টি। এবারের বইমেলায় ৬৬৩টি স্টল নিয়ে লেখক-প্রকাশক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। গতবার এই সংখ্যা ছিল ৬৩৭টি। আর বর্ধমান হাউজের দক্ষিণ পাশে থাকছে ১০০টি লিটল ম্যাগাজিন। ব্যক্তি পর্যায়ে এবং ক্ষুদ্র প্রকাশনা থেকে যারা বই উন্মোচন করবেন তাদের জন্য থাকছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র স্টল। পাশাপাশি শিশুদের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিশু কর্নার থাকবে। এবারও শিশুদের জন্য মাসব্যাপি বইমেলায় থাকছে শিশুপ্রহর।
বাংলা একাডেমী অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে পহেলা থেকে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি আয়োজন করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। এই সম্মেলনে বাংলাদেশের লেখক ছাড়াও জার্মানি, অস্ট্রিয়া, চীন, রাশিয়া, সুইডেন ও ভারতসহ মোট ৭টি দেশের মোট ২৭ জন বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিক অংশ নিবেন।
বইমেলার সার্বিক আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ। তিনি বলেন, এবারের বইমেলায় অতিথি ও দর্শনার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেলা প্রবেশের সময় দুপুর ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। শুক্রবার ও শনিবার এই সময় সূচি কিছু বেড়ে রাখা হয়েছে বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।”
গতবারের চেয়ে এবার বইমেলার সময় আধা ঘণ্টা বেড়েছে বলেও জানান তিনি। জালাল আহমেদ বলেন, “২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। থাকছে শিশুদের জন্য আলাদা শিশু প্রহর।”
এসময় এক প্রশ্নের জবাবে বাংলা একাডেমীর এ কর্মকর্তা বলেন, “লেখক-প্রকাশক ও স্টল কর্তৃপক্ষের জন্য এবারের বইমেলায় একাধিক নতুন নীতিমালা সংযোজন করা হয়েছে। যেকোন গ্রন্থের লেখককে রয়্যালিটি প্রদানে সনদ জমা দিতে বলা হয়েছে। স্টল ভাড়া ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। প্রত্যেক স্টলকে অগ্নি ও সাইক্লোন বীমাও করতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলা একাডেমী।”
“মেলায় প্রবেশের পথে দোয়েল চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেইটে এলইডি মনিটর থাকবে। সেখানে মেলায় প্রবেশের নির্দেশনা দেখানো হবে। আর মেলার সৌন্দর্য্য সমুন্নত রাখতে বাংলা একাডেমীর দুই পাশের ফুটপাত ও রাস্তা থাকবে হকারমুক্ত।”
একুশে বইমেলায় নতুন সংযোজন প্রথমবারের মতো বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে নতুন বইয়ের প্রদর্শনশালা থাকছে। এতে প্রতিদিন প্রকাশিত নতুন বই সাজানো থাকবে। যেকোন ব্যক্তি তার প্রয়োজন মতো এই প্রদর্শন কেন্দ্র থেকে বইয়ের বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন। যদিও তাকে বইটি কিনতে হলে সেই বইয়ের প্রকাশনা স্টলে যেতে হবে। শারীরিক প্রতিবন্ধি ও বয়স্কদের জন্য মেলা ঘুরে দেখার জন্য থাকছে হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে স্টলগুলোতে টিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। শিশু কর্নারে এবার নতুন সংযুক্তি মাতৃদুগ্ধ সেবা কেন্দ্র।