জাতীয়

ডাকসু নির্বাচন: তফসিলের আগে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিতের দাবি

By daily satkhira

January 09, 2019

অনলাইন ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ক্যাম্পাসে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলো। তবে ছাত্রলীগ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে দাবি করে তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এখন তারা ডাকসু নির্বাচনের তফসিলের অপেক্ষায় রয়েছে।

দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ ডাকসু নির্বাচন হয়নি। নানা জল্পনা-কল্পনার পর আগামী ৩১ মার্চ এই নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি কাজ সম্পন্নও করেছে। গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

এর আগে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডার্ড কমিটির বৈঠকে প্রত্যেকটি হলের শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য প্রস্তাব তোলা হয়। সে প্রস্তাব অনুসারে গত ৩১ অক্টোবর ডাকসুর ভোটার তালিকা প্রস্তুত করার জন্য শিক্ষার্থীদের একটি তালিকা প্রকাশ করে। তালিকায় মোট ৩৮ হাজার ৪৯৩ জন শিক্ষার্থীর নাম প্রকাশ করা হয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনের ব্যাপারে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে ১০ জানুয়ারি। এ ব্যাপারে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের প্রতিক্রিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের জন্য ছাত্রলীগ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয়, মেধাবী ও গ্রহণযোগ্য এবং এ সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম ছাত্র নেতৃত্ব প্যানেল প্রণয়নের সংক্ষিপ্ত কাজ শেষ করেছি। এখন ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, ‘আমরা সবকিছুর আগে ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি তা নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আগামী ১০ জানুয়ারির মতবিনিময় সভায় আমরা অংশগ্রহণ করবো।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের প্রথম দাবি হচ্ছে সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। তারপর ডাকসু নির্বাচনের দিন-তারিখ ঠিক করতে হবে। এছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আমরা সব সময় নির্বাচনের দাবি করে আসছি। এসব সত্ত্বেও, আমরা নির্বাচনের ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করে ডাকসুর তফসিল ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি। ক্যাম্পাসে যদি ছাত্রলীগ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় তখন ক্যাম্পাসে সহাবস্থান থাকে না। এছাড়া ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে ছাত্রদলকে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। মার্চের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করতে হলে এ মাসের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করা উচিত। তার আগে ক্যাম্পাসে সকল সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। আর ডাকসু নির্বাচন দেওয়া মুখ্য নয়। সুষ্ঠুভাবে গঠনতন্ত্র মেনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করাই হলো মূল দাবি।’

ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ডাকসু তো একটা প্রক্রিয়াগত ব্যাপার। আমরা পূর্ববর্তী পর্যায়ের কাজগুলো সম্পন্ন করে এখন ডাকসুর গঠনতন্ত্র নিয়ে কাজ করছি। এজন্য বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছি। এসব কাজ সম্পন্ন হলে তারপর ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয় আসবে।’

সহাবস্থানের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থান রয়েছে। বর্তমানে ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার মতো পরিবেশ রয়েছে তা সবাই স্বীকার করে এবং এটি বাস্তবতা। তারপরও কেউ অভিযোগ করলে সহাবস্থানের বিষয়টি আমরা দেখবো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘দেশে এখন যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে একটা গণতান্ত্রিক আবহ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ডাকসুকে দেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ডাকসু নির্বাচন করতে হলে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সহাবস্থান কিছুটা আছে, তবে প্রয়োজন হলে ছাত্র সংগঠনগুলোর অভিযোগ বিবেচনা করে সহাবস্থান নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘সহাবস্থান আছে। সকল শিক্ষার্থী যথাসময়ে ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে, পরীক্ষা দিচ্ছে। তারপরও যদি কারও কোনও অভিযোগ থাকে, তাহলে তারা সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। কেউ ক্যাম্পাসে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, এ ধরনের কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত অভিযোগ এখনও আমাদের কাছে আসেনি। তারপরও তাদের অভিযোগ থাকলে তা দেখা হবে।’