দেশের খবর: পাঁচ বছর আগে জামালপুর এলাকার এক সংসদ সদস্যের পিএস হিসেবে কর্মরত ছিলেন খন্দকার মো. ফারুক ওরফে ওমর মবিন (৫২)। এরপর তিনি গড়ে তোলেন এক প্রতারক চক্র।
সবসময় দামী পোশাক পড়ে চড়তেন বিলাসবহুল গাড়িতে। ক্লায়েন্টদের টার্গেট করে প্রতারণার চুক্তি করতেন নামি-দামি অভিজাত হোটেলে।
নিজেকে কখনো কাস্টমস কমিশনার কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চলাফেরা করা ফারুকের সঙ্গে সবসময় থাকতো দুইজন পিএস।
কাস্টমস হাউজের জব্দকৃত স্বর্ণের বার নিলামের মাধ্যমে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রতারক ফারুক।
বুধবার রাতে রাজধানীর রমনা থানাধীন বেইলি রোডের নবাবী ভোজ রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে প্রতারক ফারুকসহ তার পিএস মোহাম্মদ ইলিয়াস ওরফে নুর ইসলাম সরকার (৩৮) ও সাইফুল ইসলামকে (৩০) আটক করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এসময় তাদের কাছ থেকে ওমর মবিন নামের কাস্টমস সহকারী কমিশনারের ১৮টি ভিজিটিং কার্ড, ৪টি ব্যাংকের চেকের পাতা, ৭টি মোবাইল ও ১৩টি বিভিন্ন অপারেটর সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির সিরিয়াস এন্ড হোমিসাইডাল স্কোয়াডের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) সৈয়দা জান্নাত আরা।
তিনি বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা কাস্টমস হাউজের জব্দকৃত স্বর্ণের বার নিলামের মাধ্যমে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ফারুক নিজেকে কাস্টমস কমিশনার বলে পরিচয় দিতেন আর তার দুই সহযোগী ইলিয়াস ও সাইফুল কমিশনারের পিএস হিসেবে পরিচয় দিতেন।
‘বিভিন্ন মানুষকে টার্গেট করে প্রথমে পিএসদের পাঠাতেন ফারুক। দরকষাকষি করে কাস্টমস হাউজের জব্দকৃত সোনার বার নিলামে দেয়ার কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।
ইতোমধ্যে কয়েকজন ভুক্তভোগী পাওয়া গেছে। যাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা নিয়েছে এই চক্রটি। মৃণাল নামে এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ২৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। যিনি সিআইডি কার্যালয়ে এসে প্রতারক ফারুককে সনাক্ত করেছেন।’
ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, গত ৫ বছর আগে জামালপুরের এক এমপির পিএস হিসেবে কাজ করতেন তিনি। সেখান থেকে চাকরি ছাড়ার পর প্রতারনার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
আসামীর কাছ থেকে ৪০ কোটি টাকার ব্ল্যাংক চেক পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।
ফারুক কোন এমপির পিএস ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে ওই এমপির নাম বলা যাচ্ছে না। আমরা এ বিষয়টি যাচাই করে দেখছি। এই চক্রের আরও সদস্য রয়েছে, তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
চক্রের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, ফারুক কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের বলতেন, স্বর্ণের বার আমরা জব্দ করেছি, আমরা সব পারি। আমাদের অনেক ক্ষমতা। ভুক্তভোগীদের নিজের ভিজিটিং কার্ডও দিতেন, সেখানে কাস্টমস কমিশনার ওমর মবিন নাম ব্যবহার করতেন।
আটকদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে রমনা থানায় একটি মামলা (নং-১৮) দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান সিআইডির এ কর্মকর্তা।