দেশের খবর: আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক পেশায় আইনজীবী হলেও তার বার্ষিক আয়ের অন্যতম বড় খাত মাছ চাষ। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া তিনটি মৎস্য খামারের মালিক তিনি। এই খাতে তার আয় তিন কোটি টাকার ওপরে। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে তিনি বছরে সাড়ে চার কোটি টাকা আয় করেন।
এদিকে, মন্ত্রিসভার অন্যতম নতুন সদস্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের মাসিক আয় মাত্র ২৩ হাজার টাকা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ আনিসুল হক টানা দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছেন। এলএলবি ডিগ্রিধারী আইনমন্ত্রী পেশায় আইনজীবী। হলফনামায় দেওয়া তথ্যে তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন আট কোটি ছয় লাখ ২১২ টাকা। এর মধ্যে মৎস্য খামার থেকে তার আয় তিন কোটি ২১ লাখ ৯০ হাজার ৫৬০ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত থেকে তিনি বছরে আয় করেন চার কোটি ৫৮ লাখ ৬২ হাজার ৯৯২ টাকা। মন্ত্রী হিসেবে ভাতা পান ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অন্যান্য খাতে তার আয় রয়েছে ১২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৬০ টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার রয়েছে নগদ টাকা ছয় লাখ, ২৪ হাজার ৭৭৯ মার্কিন ডলার। ব্যাংকে তার আমানত দেখিয়েছেন চার কোটি ৫৮ লাখ ৬২ হাজার ৯৯২ টাকা। সঞ্চয়পত্রে তার বিনিয়োগ ১৫ লাখ টাকা। এক কোটি ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের দুটি মোটরগাড়ি রয়েছে তার। এ ছাড়া স্বর্ণ আছে তার কাছে ২০ ভরি।
আইনমন্ত্রীর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা। এর মধ্যে কৃষি জমি রয়েছে আট বিঘা, যার অর্জনকালীন মূল্য দেখিয়েছেন ১৬ লাখ টাকা। অকৃষি জমি রয়েছে এক একর ২২ শতাংশ; মূল্য ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা। পূর্বাচলে একটি প্লট; মূল্য ২২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৪৫ টাকা। ৪৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট। এ ছাড়া পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১৫ বিঘা কৃষি জমি, একটি দালানের অর্ধেক ও তিনটি মৎস্য খামার রয়েছে তার।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবারের মন্ত্রিসভার একমাত্র চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ডিগ্রিধারী। পেশা তার রাজনীতি। তবে নামে মাত্র পারিবারিক কিছু ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্তও রয়েছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। কুমিল্লা-১০ আসন থেকে নির্বাচিত এই সাংসদ এর আগের মন্ত্রিসভায় পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন নয় কোটি দুই লাখ ১২ হাজার ৪৬৫ টাকা। তার নিজের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬৮ কোটি ৫৫ লাখ ৯৮ হাজার ৬২ টাকা; তার স্ত্রীর রয়েছে ৪৯ কোটি ১৫ লাখ ১২ হাজার ৩১৫ টাকা। নিজ নামে স্থাবর সম্পদ রয়েছে দুই কোটি ৩২ লাখ ৩০ হাজার ৭৮৪ টাকার; স্ত্রীর স্থাবর সম্পদ রয়েছে দুই কোটি ১৬ লাখ ৯২ হাজার ৪৯৮ টাকার। নিজ নামে তার দেনার পরিমাণ আট কোটি ৭১ লাখ সাত হাজার ৬৯৩ টাকা। স্ত্রীর নামে দায়দেনা এক কোটি ৩১ লাখ ৯১ হাজার ৭৫৯ টাকা। একক বা যৌথভাবে তার কোনো ঋণ না থাকলেও সোনালী ব্যাংকে লোটাস ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে (পরিচালক হওয়ার সুবাদে) প্রকল্প ঋণের পরিমাণ এক কোটি ৮১ লাখ তিন হাজার টাকা।
বার্ষিক আয়ের মধ্যে বাড়িভাড়া থেকেই তিনি বছরে আয় করেন ছয় কোটি ৭৭ লাখ ৮৫ হাজার ২৫১ টাকা। কৃষি খাতে আয় তার পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে আয় তার ৩৩ লাখ ৬০ হাজার ১৪৫ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে তার আয় এক কোটি ৫৩ লাখ ১৬ হাজার ৪৮৯ টাকা। এমপি ও মন্ত্রী হিসেবে সম্মানী ভাতা পান ২৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৮০ টাকা। লভ্যাংশ থেকে আয় আট লাখ ৪৭ হাজার টাকা।
অর্থমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদে নিজের নগদ টাকা তিন লাখ; স্ত্রীর পাঁচ লাখ। ব্যাংকে জমা রয়েছে নিজের পাঁচ কোটি ৫১ লাখ ৯৭ হাজার ৭২৮ টাকা; স্ত্রীর রয়েছে এক কোটি ৬০ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। নিজ নামে শেয়ার রয়েছে সাত কোটি ৪৮ লাখ ৪৭ লাখ ১৫৩ টাকা; স্ত্রীর রয়েছে ১০ কোটি ৯৯ লাখ ৫২ হাজার ১৩ টাকার। বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিজ নামে ৩২ কোটি ৪৬ লাখ ৬৫ হাজার ৬৭৫ টাকা; স্ত্রীর নামে ১৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৫ হাজার ১৩০ টাকার। তার গাড়ির মূল্য এক কোটি ৬৯ লাখ ২৮ হাজার ৭১৮ টাকা। তবে গাড়ির সংখ্যা উল্লেখ নেই। নিজের স্বর্ণ নেই; স্ত্রীর স্বর্ণের মূল্য দেখিয়েছেন আট লাখ টাকা।
মুস্তফা কামালের স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে কৃষি জমির অর্জনকালীন মূল্য ৫৫ লাখ ৪৪ হাজার ৭০৪ টাকা; স্ত্রীর ১৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। অকৃষি জমির মূল্য এক কোটি ৭৬ লাখ ৮৬ হাজার ৮০ টাকা; স্ত্রীর এক কোটি ৫১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। নিজের দালান দুই কন্যার নামে দান করে দিলেও স্ত্রীর নামে গুলশানে প্লটের অর্জনকালীন মূল্য দেখিয়েছেন ৩৫ লাখ টাকা এবং একটি অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৮ টাকা।
নিজ নামে দেনার মধ্যে অগ্রিম বাড়িভাড়া নেওয়া রয়েছে এক কোটি ৪৪ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৬ টাকা; স্ত্রীর ৭৮ লাখ টাকা। সিটি ব্যাংক থেকে জমাতিরিক্ত উত্তোলন ১৩ হাজার ১৩৭ টাকা। জমি বিক্রি বাবদ অগ্রিম সাত কোটি ২৬ লাখ ১২ হাজার টাকা।
এ ছাড়া তিনি হলফনামার সঙ্গে পাঁচ বছরে সম্পদ বাড়ার কারণও উল্লেখ করেছেন। গত পাঁচ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ১৫ কোটি সাত লাখ ১৬ হাজার ৬৪ টাকা। এর মধ্যে এমপি ও মন্ত্রী পদের সম্মানী ভাতা, স্থায়ী আমানতের সুদ, বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর পরে উদ্বৃত্ত ২৮ কোটি ১৭ লাখ এক হাজার ৫৭৮ টাকা। গোলাম সারওয়ার নামে এক ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া দান দেখিয়েছেন পাঁচ কোটি টাকা। মুস্তফা কামাল দুই সন্তান কাশফি কামাল ও নাফিসা কামালকে দান করেছেন ১৮ কোটি ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৫১৪ টাকা।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমবিএ ডিগ্রিধারী ব্যবসায়ী হলেও তার বার্ষিক আয় সবচেয়ে বেশি শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে। এ খাতে তিনি বছরে আয় করেন দুই কোটি ৯৪ লাখ পাঁচ হাজার ৩৩১ টাকা। চাকরি খাতেও তিনি আয় দেখিয়েছেন বছরে ৩০ লাখ টাকা। ব্যবসা থেকে তার আয় ১৬ লাখ ৩৩ হাজার ৪০ টাকা। কৃষি খাতে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা। বাড়িভাড়া ২২ লাখ ৬৫ হাজার ১৩২ টাকা। এ ছাড়া এমপি ভাতা ২৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৭ টাকা, মিটিং ও টক শো থেকে আয় করেন তিন লাখ ৯ হাজার টাকা। ব্যাংক লভ্যাংশ ও এফডিআর থেকে এক লাখ ১৫ হাজার ৯৭৩ টাকা। ফিশিং ও পোলট্রি থেকে আয় দেখিয়েছেন ৪৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩৮ টাকা।
কুমিল্লা-৯ আসন থেকে নির্বাচিত এই সাংসদ প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। স্থাবর সম্পদের মধ্যে তিনি সাত একর ৬৭ শতাংশ কৃষি জমির মালিক, যার অর্জনকালীন মূল্য ২০ লাখ ৩৬ হাজার ৫০২ টাকা। আট একর ৬৭ শতাংশ অকৃষি জমির মূল্য দেখিয়েছেন ১২ কোটি ২৪ লাখ ৪৪ হাজার ৫৫৭ টাকা। দালানের মূল্য দেখিয়েছেন চার কোটি ৫২ লাখ ৬৪ হাজার ৪৪৬ টাকা। অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য দেখিয়েছেন এক কোটি ৬৭ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। বাগান বা মৎস্য খামার দেখিয়েছেন ১৮ লাখ ৭৫ হাজার ৮০০ টাকা। পোলট্রি খামারের মূল্য ১৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ এক কোটি ৩১ লাখ ১৩ হাজার ২৪০ টাকা; ব্যাংকে জমা তিন কোটি ৮৯ লাখ ৬৩ হাজার ৬১৭ টাকা; বন্ড রয়েছে তিন কোটি ৮২ লাখ টাকার; শেয়ার রয়েছে ১৬ কোটি ৬৬ লাখ ৪১ হাজার ৭৩০ টাকার; সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ রয়েছে ৬১ লাখ ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া এক কোটি ৮৯ লাখ চার হাজার ৩৪৪ টাকা মূল্যের গাড়ি, এক লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার, সাড়ে ছয় লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং ১০ লাখ ছয় হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে।
দায়দেনার মধ্যে সাউথইস্ট ব্যাংকে তার ঋণ নেওয়া রয়েছে ছয় কোটি ৪৪ লাখ ২৯ হাজার ২৬ টাকার।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান হলফনামায় তার পেশা উল্লেখ করেছেন ‘অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী’। সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত এই সাংসদ স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী। বছরে তিনি প্রায় ২৪ লাখ টাকা আয় করেন। এর মধ্যে পেশা থেকে আয়ের ঘরে তিনি বছরে ১১ লাখ চার হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া বাড়িভাড়া থেকে তিন লাখ ৯৬ হাজার ২৮০ টাকা; শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে সাত লাখ ৭৯ হাজার ৬২২ টাকা; অন্যান্য (এলাকা ভাতা এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ও অন্যান্য ভাতা ২৪ হাজার ৩২৯ টাকা) খাতে এক লাখ ৭৪ হাজার ৩২৯ টাকা আয় দেখিয়েছেন।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ রয়েছে তিন লাখ ৬১ হাজার ৮৬৪ টাকা। ব্যাংকে রয়েছে ৫৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮০২ টাকা; সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৬৯ লাখ টাকা; একটি জিপগাড়ির মূল্য ৫৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৮২ টাকা; দুই লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং এক লাখ টাকার আসবাবপত্র।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে কৃষি জমি নিজ নামে পাঁচ একর ৩৪ শতাংশ, যার অর্জনকালীন মূল্য ১০ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে পাঁচ একর ৬৮ শতাংশ, যার অর্জনকালীন মূল্য দুই হাজার টাকা। নিজ নামে অকৃষি জমি ৪৫ শতাংশ, যার মূল্য ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনটি আধাপাকা টিনশেড ঘর, ১৮ লাখ টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট ও একটি পুকুর রয়েছে। তার কোনো দায়দেনা নেই।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন পেশায় আইনজীবী। নরসিংদী-৪ আসনের এই সাংসদ প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। পেশা থেকে তার কোনো আয় নেই। চিংড়ি চাষ থেকে তিনি বছরে আয় করেন ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার ৯০০ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক সুদ খাতে তার আয় দুই লাখ ৯২ হাজার ৩০৯ টাকা। বছরে তিনি সংসদ সদস্য ভাতা পান ২৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের কাছে নগদ রয়েছে ৮২ লাখ ৭৫ হাজার ৯৬০ টাকা; স্ত্রীর কাছে নগদ ১৭ লাখ ১১ হাজার ২৭৬ টাকা। ব্যাংকে নিজের জমা এক লাখ ১১ হাজার ৯৮৯ টাকা; স্ত্রীর নামে দুই লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ টাকা। সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৮৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪২১ টাকা এবং তিনটি জিপগাড়ির অর্জনকালীন মূল্য এক কোটি ৬৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এ ছাড়া নিজের নামে ১৬ ভরি ও স্ত্রীর ১৯ ভরি স্বর্ণ রয়েছে।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে পূর্বাচলে পাঁচ কাঠার প্লট ৩৮ লাখ টাকা; গুলশানে একটি ফ্ল্যাট, যার মূল্য ৬১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কক্সবাজারে চিংড়ি খামার, যার মূল্য দুই কোটি ১২ লাখ আট হাজার ৭০০ টাকা।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে তিনি শুল্ক্কমুক্ত জিপগাড়ি কিনতে একটি ঋণ নিয়েছিলেন। ওই ব্যাংকে গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৫৭ লাখ ১৯ হাজার ৯০২ টাকা ঋণ রয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক আগের মন্ত্রিসভায় একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। মানিকগঞ্জ-৩ আসনের এই সাংসদ নিজের পেশায় তিনি এবার তা-ই উল্লেখ করেছেন। নবম ও দশম সংসদের হলফনামায় তিনি নিজের পেশা হিসেবে ‘ব্যবসা’ উল্লেখ করেছিলেন।
একাদশ সংসদের হলফনামা অনুযায়ী বছরে তিনি বাড়িভাড়া থেকে আয় করেন এক কোটি ৩৮ লাখ ৩৮ হাজার ৮৪৪ টাকা। ব্যবসা থেকে ২৬ লাখ ৯৬ হাজার ৬০০ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে ২৫ লাখ ৬৬ হাজার ১৮৭ টাকা। এমপির সম্মানী ভাতা পান ২৯ লাখ ৮১ হাজার ৫৮০ টাকা।
অস্থাবর সম্পদে তার নগদ টাকার পরিমাণ দুই লাখ ৬২ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা রয়েছে তিন কোটি ৫৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা, শেয়ার বা বন্ড নিজ নামে ২৬ কোটি ৪০ লাখ ৯৭ হাজার ২৯৫ টাকা; স্ত্রীর নামে তিন কোটি ছয় লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা। এক কোটি চার লাখ ৮৬ হাজার টাকা মূল্যের গাড়ি ও স্ত্রীর নামে ৫৫ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। এ ছাড়া তিনি অন্যান্য খাতে সম্পদ দেখিয়েছেন ১১ কোটি ১৭ লাখ ৮১ হাজার ৭৭৯ টাকা। এ বিষয়ে কোনো বর্ণনা নেই হলফনামায়।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া অকৃষি জমির অর্জনকালীন মূল্য দেখিয়েছেন এক কোটি ৩৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা এবং যৌথ মালিকানায় একই সূত্রে পাওয়া ৪০ বিঘা কৃষি জমি। এ ছাড়া তিনি জমিসহ ১৬ তলা বিল্ডিংয়ের ১১ তলার মূল্য উল্লেখ করেছেন তিন কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার ২২ টাকা। তার কোনো দায়দেনা নেই।
প্রতিমন্ত্রীর মাসে আয় সোয়া ২৩ হাজার! : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বার্ষিক আয় মাত্র দুই লাখ ৭৯ হাজার টাকা। এ হিসাবে তার মাসে আয় ২৩ হাজার ২৫০ টাকা। কুড়িগ্রাম-৪ আসনের এই এমপি হলফনামা ও আয়কর সনদে উল্লেখ করেছেন, বাড়িভাড়া থেকে বছরে এক লাখ, কৃষি থেকে ৯৫ হাজার এবং ব্যবসা থেকে ৮৪ হাজার টাকা আয় করেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে প্রথমবার এমপি হন জাকির হোসেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি একই আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির রুহুল আমিনের কাছে পরাজিত হন। ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো এমপি হয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।
জাকির হোসেন হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তার ৪০ লাখ টাকা দামের একটি জিপগাড়ি রয়েছে। গাড়িটি তিনি সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। হলফনামায় তিনি তথ্য দিয়েছেন, তার ৪৮ লাখ সাত হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তবে আয়কর বিবরণীতে তথ্য দিয়েছেন পাঁচ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার সম্পদের মালিক। আয়কর বিবরণীতে দুই কোটি টাকা মূল্যের চাতালের তথ্য থাকলেও হলফনামায় তা নেই। হলফনামায় বাড়ির তথ্যও নেই। হলফনামার তথ্যানুযায়ী তিনি সোয়া আট একর সম্পদের মালিক। এর মধ্যে কৃষি জমি পাঁচ একর। বাকিটা অকৃষি জমি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর নির্বাচনের আগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, পুঁজিবাজারে তার কোনো বিনিয়োগ, আমানত নেই। তার স্ত্রীর ব্যাংকে টাকা জমা নেই। হাতেও নগদ টাকা নেই। নেই শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ, আমানত।
প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর বেশি আয় পরামর্শ দিয়ে: হলফনামায় প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ তথ্য দিয়েছেন, তার পেশা চা ব্যবসা ও পরামর্শক। উত্তরাধিকার সূত্রে শ্রীপুর চা বাগানের ১৩ ভাগের দুই অংশের মালিক তিনি। বাকি ১১ অংশের মালিক সরকার। বাগানের লিজ নিতে তিনি ২০১২ সালের ১৮ জুন সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছেন।
সিলেট-৪ আসন থেকে ছয়বার নির্বাচিত ইমরান আহমদ এবারই প্রথম মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। ব্যবসা থেকে তিনি আয় দেখিয়েছেন তিন লাখ ৯০ হাজার টাকা। পেশাদার পরামর্শক ইমরান আহমদ চাকরি থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। প্রতিমন্ত্রীর নিজ নামে বাড়িঘর নেই। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে ২৪ দশমিক ২৭ একর কৃষি জমির মালিক। তার অকৃষি জমি আছে সাড়ে চার একর।
ইমরান আহমদের ব্যাংকে জমা আছে এক কোটি ৫৭ হাজার টাকা। নির্বাচনের আগে হাতে নগদ টাকা ছিল আট লাখ ৭৮ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর নামে ব্যাংকে আছে এক কোটি ৫৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের কোনো ঋণ নেই।
পারিবারিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী: ঢাকা-৩ আসনের এমপি নসরুল হামিদ বিপু তার পরিবারের মালিকানাধীন ‘হামিদ রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’ থেকে তিন কোটি ৮৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। একই প্রতিষ্ঠানের কাছে জমি বিক্রির বিপরীতে আগাম নিয়েছেন এক কোটি ২০ লাখ টাকা।
টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন নসরুল হামিদ বিপু। হলফনামায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী, তার বার্ষিক আয়ের বড় অংশই প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া সম্মানী ও ভাতা। এ খাত থেকে বছরে তিনি আয় করেছেন ৫০ লাখ ৭৮ হাজার ৪৫০ টাকা। বাড়িভাড়া থেকে পেয়েছেন ২৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে তার কোনো আয় নেই। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে লভ্যাংশ ও সুদ পেয়েছেন এক লাখ ৭৭ হাজার টাকা।
নসরুল হামিদ বিপুর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রয়েছে ৩২ লাখ ৯৯ হাজার ৫০৭ টাকা। নির্বাচনের আগে তার হাতে নগদ টাকা ছিল এক লাখ ২৫ হাজার। পাঁচ হাজার ৯৭৮ মার্কিন ডলার নগদ ছিল একই সময়ে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর কৃষি জমি রয়েছে ছয় বিঘা। অকৃষি জমির তথ্য দিয়েছেন ভিন্ন সংযুক্তিতে। রাজধানীর পূর্বাচলে তার রয়েছে ১০ কাঠা ছয় ছটাকের প্লট। পূর্বাচলে তার স্ত্রীর নামে রয়েছে চার কাঠা ১৫ ছটাকের প্লট।
মৎস্য প্রতিমন্ত্রীর বেশি আয় মাছ চাষ থেকে: প্রথমবারের এমপি হয়েই মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন আশরাফ আলী খান খসরু। নেত্রকোনা-২ আসনের এই এমপির বার্ষিক আয় ১৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। খাতওয়ারি হিসাবে তিনি সবচেয়ে বেশি আয় করেছেন মাছ চাষ থেকে। মাছের খামার থেকে তিনি বছরে আয় করেন সাত লাখ টাকা।
পেশায় ব্যবসায়ী আশরাফ আলী খান ব্যবসা থেকে বছরে আয় করেছেন চার লাখ ৫৫ হাজার টাকা। বাড়িভাড়া থেকে পেয়েছেন এক লাখ ৯১ হাজার টাকা। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পেয়েছেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা। মৎস্য প্রতিমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের বড় অংশই তার গাড়ি। ৫৬ লাখ টাকা দামের জিপ রয়েছে তার। ২৪ ও ২২ লাখ টাকা দামের দুটি ট্রাকও রয়েছে। এ ছাড়া তিনি শিকল শিপিং লাইনের অংশীদার। তার অংশের দাম ২৫ লাখ টাকা। মৎস্য খামারি হলেও আশরাফ আলী খানের নিজ নামে কৃষি জমি নেই। পৈতৃক সূত্রে একটি তিনতলা বাড়ি পেয়েছেন। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রতাবপুর মিলের ৫০ শতাংশেরও মালিক তিনি।
জুনাইদ আহমেদ পলকের স্ত্রীর সম্পদ বেশি: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের চেয়ে তার স্ত্রীর জমিজমার পরিমাণ বেশি। প্রতিমন্ত্রীর কৃষি জমির পরিমাণ ৭ দশমিক ১২ বিঘা। তার স্ত্রীর কৃষি জমি রয়েছে প্রায় চার গুণ, ৮ দশমিক ৭১ একর। অকৃষি জমি রয়েছে এক দশমিক ২৯ একর। শেওড়াপাড়ায় রয়েছে দুটি দোকান। পূর্বাচলে রয়েছে ১০ কাঠার প্লট। স্বামীর বাড়িতে স্ত্রীর বিনিয়োগ রয়েছে ৫০ লাখ টাকা।
পলকের বার্ষিক আয় ১৮ লাখ ৪২ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সম্মানী ও ভাতা পেয়েছেন ১১ লাখ চার হাজার টাকা। ব্যাংক সুদ ও টক শো থেকে আয় করেছেন ছয় লাখ ৩০ হাজার টাকা। তার হাতে নগদ টাকার চেয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আছে বেশি। প্রতিমন্ত্রীর হাতে নগদ টাকা রয়েছে নয় লাখ ১৭ হাজার টাকা। মার্কিন ডলার আছে সাত হাজার ৬০০। মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত রয়েছে তিন হাজার ৫০০। ভারতীয় রুপি আছে চার হাজার ৪৫০।
ডাকঘরে, সঞ্চয়পত্রে ও স্থায়ী আমানত রয়েছে তার ৭০ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। তার স্ত্রীরও প্রায় ৭০ লাখ টাকার কাছাকাছি সঞ্চয় রয়েছে বিভিন্ন খাতে।